রাখাইনের রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) হামলায় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ছয় সদস্য আহত হয়েছে। শনিবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে এই দাবি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। রাখাইনে আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর চলমান সংঘর্ষের মধ্যেই আরসা হামলা চালিয়ে বলে দাবি করলো মিয়ানমার।
২০১৬ সালে সীমান্ত ফাঁড়িতে হামলার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরসা’র আত্মপ্রকাশ ঘটে। আরসা রাজ্যটির নাগরিকত্বহীন রোহিঙ্গাদের অধিকারের পক্ষে লড়াই করছে। ২০১৭ সালের আগস্টে বিজিপি’র ফাঁড়িতে আরসা’র হামলার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে। সন্ত্রাসবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের নামে শুরু হয় নিধনযজ্ঞ। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে ধারাবাহিকভাবে। এমন বাস্তবতায় জাতিগত নিধনযজ্ঞের বলি হয়ে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় প্রায় সাড়ে সাত লাখ ত্রিশ হাজার রোহিঙ্গা।
সরকার নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে দাবি করা হয়েছে, আরসা’র অন্তত দশজন সশস্ত্র হামলাকারী মংডুর ওয়েট কিয়েইন গ্রামে বিজিপি’র একটি ফাঁড়িতে হামলা চালায়। এর আগে বুধবার এই এলাকায় আরাকান আর্মির যোদ্ধারা হামলা চালিয়েছিল বলে খবর প্রকাশিত হয়েছিল।
এই হামলার বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি রয়টার্স।
বুধবার একই এলাকায় আরাকান আর্মির হামলার খবর জানা গিয়েছিল। কিন্তু মংডুর বিজিপি কর্মকর্তারা বলছেন, নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর হামলার জন্য আরসা দায়ী।
পুলিশ লেফটেন্যান্ট কর্নেল তিন হান লিন রয়টার্সকে বলেন, প্রথমে প্রাথমিক তদন্ত ছিল। কিন্তু এখন আমরা নিশ্চিত।
রাখাইন রাজ্যে বৌদ্ধ ধর্মালম্বী রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকেই রাজ্যটিতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের মতে, নতুন করে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতায় এরই মধ্যে অন্তত ৫ হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।
শুক্রবার রাজধানী নেপিদোতে এক সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী জানায়, মিয়ানমারের রাখাইনে বৌদ্ধ সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির ডি ফ্যাক্টো নেত্রী ও রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি।
সেনাবাহিনী জানায়, ডিসেম্বরে সশস্ত্র সংঘাত চলমান রাজ্যগুলোর মধ্যে ৫টি এলাকায় অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করে মিয়ানমার। কিন্তু এগুলোর মধ্যে রাখাইন রাজ্য ছিল না। আরসা হামলার পরিকল্পনা করছে বলে রাখাইনকে অস্ত্রবিরতির আওতায় রাখা হয়নি।
শুক্রবার জাতিসংঘে মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার ইয়াংহি লি রাখাইনে সহিংসতা বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রকাশ করে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।