১লা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ সকাল ৯:৫৫

বড়লেখায় খাসিয়া বাড়িতে আগুন, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ রবিবার, জানুয়ারি ২০, ২০১৯,
  • 321 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় আগুনে খাসিয়াদের তিনটি বসতঘর সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। শনিবার (১৯ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টার দিকে উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের নালিখাই পান পুঞ্জিতে এই ঘটনা ঘটে।

এদিকে এ আগুন লাগার ঘটনায় পুঞ্জির খাসিয়ারা ছোটলিখা চা বাগানের কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন। অন্যদিকে খাসিয়াদের এ অভিযোগ অস্বীকার করে ছোটলিখা চা বাগানের কর্তৃপক্ষ বলেছেন এটা খাসিয়াদের সাজানো নাটক।

নালিখাই পান পুঞ্জির স্থানীয় খাসিয়াদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১২টার দিকে পুঞ্জির বাসিন্দা অচিন পত্রের ঘরে দুর্বৃত্তরা প্রথমে আগুন লাগায়। আগুনের লেলিহান শিখা জ্বলতে দেখে পাশের টিলার বাসিন্দা এজু চিছাম পরিবার নিয়ে দৌড় দিয়ে ঘর থেকে বের হন। কিছু সময়ের মধ্যে এজু ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা দেখতে পান অন্য টিলার বাসিন্দা ইনতে মুরং এর ঘরেও আগুন। এতে ভয় পেয়ে তাঁরা অন্ধকারের মাঝে দৌড়ে পুঞ্জির হেডম্যান (খাসিয়া মন্ত্রী) তলবিলামিন খাসিয়ার ঘরে আশ্রয় নেন।

এরমধ্যে এজুর ঘরেও দুর্বৃত্তরা আগুন দেয় বলেও এসময় অভিযোগ করে তারা বলেন, উঁচু পাহাড়ে বসতি ও কাছাকাছি পানির ব্যবস্থা না থাকায় আগুন নেভানো সম্ভব হয়নি। ফলে তাঁদের চোখের সামনে ঘরগুলো জ্বলতে থাকে। দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে অচিন পত্র (২৫), এজু চিছাম (৫০) ও ইনতে মুরং (৩০) এর টিন শেডের সম্পূর্ণরূপে পুড়ে যায়।

আগুন লাগানোর পাশাপাশি রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা খাসিয়াদের পান জুমের অন্তত চার শতাধিক গাছ কেটে ফেলেছে বলেও খাসিয়ারা অভিযোগ করছেন।

এদিকে তারা বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ তুলে বলেন, পুঞ্জিতে তারা পাকা ঘর নির্মাণ করার উদ্যোগ নিলে বাগান কর্তৃপক্ষ তাঁদের নিষেধ করে। তাদের চলাচলের রাস্তাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এমনকি ইট আনতেও বাধা প্রদান করা হচ্ছে। তাঁরা এখন অন্য বাগানের রাস্তা ব্যবহার করে বাজারে যাতায়াত করছেন। বাগানোর লোকজন ঘর নির্মাণ না করতে হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন পুঞ্জির বাসিন্দারা।

পুড়ে যাওয়া একটি ঘরের নারী বাসিন্দা প্রবিতা দিও বলেন, ‘ঘুমে ছিলাম। অন্য ঘরে আগুন দেখে স্বামী ডেকে তুলেছেন। আমরা দৌড়ে এক কাপড়ে ঘর থেকে বের হয়েছি। কোনো কিছু সাথে নিতে পারিনি। আমাদের ঘরেও আগুন দিয়েছে। ঘরের মধ্যে বাসনপত্র সব পুড়ে গেছে। একটা কাপড়ও নেই পরার মত। আমরা গরীব মানুষ। জুমের পান গাছও কেটে ফেলেছে। অন্ধকার রাত চিনতে পারিনি কাউকে।”

আরেক নারী বাসিন্দা ফিনিধার বলেন, “বাগানের লোকজন আমাদের ঘর বানাতে বাধা দিচ্ছে। হুমকি দিয়েছে। ঘর বানালে সব জ্বালিয়ে দেবে। আমাদের রাস্তাও বন্ধ করে দিয়েছে। ইট আনতে দিচ্ছে না। অন্য বাগান দিয়ে ঘুরে যাই ৬ কিলোমিটার। খুব কষ্টে আছি আমরা।”

নালিখাই পান পুঞ্জির হেডম্যান (খাসিয়া মন্ত্রী) তলবিলামিন খাসিয়া বলেন, “ছোটলেখা চা বাগানের সাথে বিরোধ চলছে। আমাদের পাকা ঘর নির্মাণ করতে দিচ্ছে না। দীর্ঘদিন থেকে নানাভাবে হয়রানি করছে। তারাই আমাদের ঘর পুড়িয়েছে। পান গাছ কেটেছে। ৪০০ পান গাছ কেটেছে। প্রতিনিয়ত হুমকি দেয় আমাদের। ঘর পোড়ানো ও পান গাছ কাটার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেব। তাঁরা আপোষের কথা বলছে। আমাদের সব শেষ। আপোষ করে কি লাভ।”

এদিকে খাসিয়াদের সকল অভিযোগ অস্বীকার করে ছোটলিখা চা বাগানের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মোকাররম হোসেন বলেন, “পান গাছ কাটা ও ঘর পোড়ানোর প্রশ্নই আসে না। তারা বাগানের ভূমিতে থাকেন। এখানে পাকা ঘর নির্মাণ করতে চান তারা। বাগানের ভেতর দিয়ে ইট নিতে চেয়েছিল। চৌকিদার বাধা দিয়েছি। এইটা নিয়ে উল্টো চৌকিদারকে তারা পিটিয়েছে। আমরা থানায় অভিযোগ দিয়েছে। এই ঘটনাকে চাপা দিতে ও মামলার উৎস বের করতে নিজেরাই তাদের ঘর পুড়িয়ে নাটক সাজাচ্ছে। এই ভূমির মালিক জেলা প্রশাসক। বাগান কর্তৃপক্ষ কোনো পাকা স্থাপনা নির্মাণ করলেও অনুমতি নিতে হয়। আমরা তাদের কোনো অনুমতি দিতে পারিনা।”

খাসিয়া পুঞ্জিতে আগুন লাগার খবর পেয়ে রাতেই বড়লেখা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জসীম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এ ব্যাপারে পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জসীম রোববার (২০ জানুয়ারি) বিকেলে বলেন, “আগুন লাগার খবর পেয়ে রাতেই পুঞ্জিতে যাই। আমরা যখন সেখানে যাই তখন আগুন নেভানো অবস্থায় দেখি। টিনশেডের ঘরে তেমন মালামাল ছিল না। তিনটি ঘর পুড়েছে। তবে আগুন লাগার কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় কোনো অভিযোগও পাওয়া যায়নি।” অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »