বরিশালের আগৈলঝাড়ার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সন্ধ্যা নদীতে উপজেলার বাগধা নামক স্থানে নদী পারাপারে কোন ব্রিজ না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেয়ার মাধ্যমে নদী পার হচ্ছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় জনসাধারণ। এ কারণে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিশু, বয়স্কসহ স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীদের। খেয়ার মাধ্যমে নদী পারাপার হতে গিয়ে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। পার্শ্ববর্তী উজিরপুর-বানারীপাড়া উপজেলা হয়ে আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সার হাট, বাগধা ও আমবৌলা গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া সন্ধ্যা নদীর একটি শাখার উপর বরিশাল-গোপালগঞ্জ-খুলনা মহাসড়কে উপজেলার পয়সার হাট নামক স্থানে নদী পারাপারের জন্য একমাত্র ব্রিজ থাকলেও সহজ যোগাযোগের জন্য উপজেলার বাগধা ও আমবৌলা গ্রামের লোকজন খেয়ার মাধ্যমেই নদীর এপার থেকে ওপার পারাপার হয়। এছাড়াও নদীর পশ্চিম পাড়ে একাধিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ স্থানীয় হাট-বাজার থাকায় নদীর পূর্ব পাড়ের শিক্ষার্থী ও লোকজনের একমাত্র ভরসা হলো খেয়া বা নৌকার মাধ্যমে নদী পার হওয়া। খেয়ার মাধ্যমে নদী পার হতে তাদের সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। অন্যদিকে পয়সার হাটে অবস্থিত ব্রিজ ঘুরে যাতায়াতে তাদের সময় লাগে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট। এ কারণেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেয়ার মাধ্যমেই নদী পার হচ্ছে স্কুল-কলেজগামী সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় জনসাধারণ। এ পরিস্থিতিতে এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের জোর দাবি তুলেছেন ভূক্তভোগী স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর এপার থেকে অন্তত: ২৫ জন যাত্রী ওপারে যাওয়ার জন্য খেয়া নৌকায় চেপেছে। এর মধ্যে শিশুসহ ১০ জন ছাত্রীও রয়েছে। এভাবেই প্রতিনিয়ত নদী পার হয়ে আসছে এ গ্রামের লোকজন।
বাগধা স্কুল এন্ড কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্রী মোসামৎ মিলি খানম বলেন, এখানে খেয়ার মাধ্যমে নদী পার হতে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীদের অনেক সমস্যা হয়। খেয়ার নৌকায় উঠতে গিয়ে অনেক সময় আমরা পরে গিয়ে আহত হই এবং সময়মত খেয়া না পেলে আমাদের নির্ধারিত সময়ে ক্লাসে উপস্থিত হতে পারিনা। যে কারণে আমাদের লেখাপড়ায় অনেক সমস্যা হয়। তাই আমাদের এখানে নদী পারাপারে জন্য একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
কলেজ ছাত্রী মিলি’র কথার সাথে একমত পোষণ করে একাধিক এলাকাবাসী বলেন, ব্রিজের অভাবে এ অঞ্চলের মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। নদীর এপাশে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা ও অপর পাশে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন কার্যালয় অবস্থিত। তাই ওপারের অন্তত: ১ হাজার থেকে ১২শ’ শিক্ষার্থীকে নদী পার হয়ে এপারে অথাৎ পশ্চিমপার আসতে হয়। অন্যদিকে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউপি কার্যালয় ওপারে অথাৎ নদীর পূর্বপারে হওয়ায় আমাদেরকে প্রতিদিনই ওপারে যেতে হয়। পয়সার হাট ব্রিজ ঘুরে যাতায়াতে আমাদের অনেক সময় লাগে। এজন্য আমরা এই খেয়ার মাধ্যমেই নদী পার হয়ে থাকি। ভাটির সময় খেয়ার নৌকা কিনারায় না আসাসহ ঝড়-বৃষ্টির সময় নৌকায় উঠতে ও নামতে আমাদের অনেক সমস্যা হয়। এত সব সমস্যা থাকা সত্বেও আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ খেয়ার মাধ্যমে নদী পার হই। এছাড়াও ব্যবসায়ীদের পেশার কারণেই তাঁদের প্রতিদিন এপার থেকে ওপারে যেতে হয়। একেকবার খেয়া পার হতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লেগে যায়। তাই এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে উপকৃত হবে এ গ্রামের স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ হাজারো লোকজন। তাই আমরা এখানে একটি ব্রিজে নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে বিণীত অনুরোধ করছি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী রাজকুমার গাইন বলেন, বাগধা খেয়াঘাটে একটি সেতু নির্মাণের জন্য বরিশাল এলজিইডি অফিসে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে বরিশাল এলজিইডি অফিস থেকে ওখানকার মাটি পরীক্ষাসহ সব ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন বরাদ্দ অনুমোদন ও টেন্ডার আহ্বাণের প্রক্রিয়া চলছে। অপূর্ব লাল সরকার