Advertisement
গত ৩০ ডিসেম্বর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন মৃণাল। মৃণাল সেন যখন কলকাতার ভবানীপুরের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ফেলেছেন, তার পুত্র কুনাল সেন তখন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে অবস্থান করছিলেন। মৃত্যুর প্রায় এক মাস পর বাবার টেবিল ঘাঁটতে ঘাঁটতে একটি খাতা খুঁজে পেয়েছেন মৃণাল পুত্র কুনাল। সেখানেই তিনি খুঁজে পান এই লাইনগুলো। কিন্তু কাকে উদ্দেশ্য করে নিজের ভালো না থাকার কথা লিখেছিলেন খ্যাতিমান এই চলচ্চিত্রকার? কার কাছ থেকেই বা ভালো আছে কিনা জানার ইচ্ছে ছিলো তার? ২০ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ তথ্যগুলো লিখেছেন কুনাল।
ফেসবুকে দেওয়া ওই স্ট্যাটাসে কুনাল লিখেন- “বাবা মারা যাবার পর তাঁর টেবিল ঘাঁটতে গিয়ে একটা খাতা নজরে এলো। এক লাইন লেখা, কবে লিখেছিলেন তা সঠিক জানা নেই, তবে শেষ কয়েক মাসের মধ্যেই হবে। একটা লাইন- ‘তুমি ভালো আছো? আমি ভালো নেই’। কেন লিখেছিলেন? কার উদ্দেশে লেখা? এসব আমরা কোনো দিন জানবো না। শুধু এটাই জানবো যে মানুষের শেষ জীবনটা বড় ভয়ঙ্কর। একজন মানুষ যিনি সারা জীবনটা কাটিয়েছেন ব্যস্ততার মধ্যে, বন্ধুদের মধ্যে, তাঁর শেষ জীবনটা কেটেছে একাকিত্বে, অসহায়তায়।”
উল্লেখ্য প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার মৃণাল সেন ১৯২৩ সালের ১৪ মে বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। লেখাপড়ার জন্য তিনি প্রথমে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেন পদার্থবিদ্যা নিয়ে। ছাত্রাবস্থায় তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক শাখার সঙ্গে যুক্ত হলেও কখনও ওই দলের সদস্য হননি। চল্লিশের দশকে মৃণাল সেন ইন্ডিয়ান পিপ্লস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত হন।
১৯৫৫ সালে মৃণাল সেন পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘রাতভোর’ মুক্তি পায়। এর আগে ১৯৫০ সালে ‘দুধারা’ নামে একটি সিনেমা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘নীল আকাশের নীচে’ মৃণাল সেনকে আপামর দর্শকের সঙ্গে সুপরিচিত করে তোলে। তৃতীয় চলচ্চিত্র ‘বাইশে শ্রাবণ’ তাকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দেয়। ১৯৬৯ সালে তার পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ভুবন সোম’ মুক্তি পায়। মধ্যবিত্ত সমাজের নীতিবোধকে মৃণাল সেন তুলে ধরেন তার চলচ্চিত্র এক দিন প্রতিদিন (১৯৭৯) এবং খারিজ (১৯৮২) এর মাধ্যমে। খারিজ ১৯৮৩ সালের কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জুরি পুরস্কার পায়।
১৯৮০ সালে মৃণাল সেনের চলচ্চিত্র ‘আকালের সন্ধানে’ মুক্তি পায়। ‘আকালের সন্ধানে’ ১৯৮১ সালের বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জুরি পুরস্কার জয় করে। মৃণাল সেনের পরবর্তীকালের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র মহাপৃথিবী (১৯৯২) এবং অন্তরীণ (১৯৯৪)। তার শেষ চলচ্চিত্র ‘আমার ভুবন’ মুক্তি পায় ২০০২ সালে।