নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা সদরের কাচারীপাড়া কালিমন্দিরে পাহারারত আনসার সদস্যকে মারপিট করে মন্দিরের দুর্গাসহ ছয়টি মূর্তি ভাঙচুর করেছে মুখোশপরা পাঁচ সন্ত্রাসী। এই ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে আজ শুক্রবার সকাল থেকে এলাকার হাজার হাজার হিন্দু নারী-পুরুষ ও শিশু লাঠি হাতে রাস্তায় নেমে আসে। এক পর্যায়ে তারা বিক্ষোভ করতে করতে গুরুদাসপুর ও চাঁচকৈড় বাজারের প্রতিটি মোড়ে টায়ারে আগুন জ্বালায় এবং গাছ ফেলে রাস্তা অবরোধ করে। এই ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ শুক্রবার দুপুরে উপজেলার শাহপুর এলাকার খিজির শাহ ও তার ছেলে জাহিদুল ইসলাম এবং উমর খন্দকার নামে তিনজনকে আটক করেছে।
শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে গুরুদাসপুর থানার সামনে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার সনাতন ধর্ম অনুসারী নারী-পুরুষ ও শিশু লাঠি হাতে বিক্ষোভ মিছিল করছে। এ সময় উপজেলা সদরে মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে সব ধরনের যান চলাচলা বন্ধ ছিল। পরে বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে গুরুদাসপুর থানা ঘেরাও করে। এ সময় কিছু হিন্দু ধর্মীয় নেতা বিক্ষোভকারীদের থানায় প্রবেশ করতে বাধা দিলে তারা লাঠি হাতে থানার গেটের সামনের রাস্তায় বসে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় পুলিশ থানার বাইরের ও ভিতরের সব গেট ও দরজা বন্ধ করে ভিতরে অবস্থান নেয়।
বিক্ষোভকারীরা জানায়, শুক্রবার ভোররাত চারটার দিকে পাহারারত আনসার সদস্য মো: রাজিব প্রামানিককে মারপিট করে মন্দিরের দুর্গাসহ ছয়টি মূর্তি ভাঙচুর করে মুখোশপরা অজ্ঞাত পাঁচ সন্ত্রাসী। বিজয়া দশমীর রাতে ধর্মীয় অনুভূতিতে এমন আঘাতের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন বন্ধ করবেন না এবং রাস্তা থেকে অবরোধ তুলবেন না। অভিযুক্তরা আটক না হওয়া পর্যন্ত তারা প্রতিমা বিসর্জন না দেয়ারও ঘোষণা দেন।
বিক্ষোভের সময় গুরুদাসপুর ও চাঁচকৈড়ের কোন দোকান পাট খুলতে দেখা যায়নি। রাস্তায় কোন সাধারন মানুষকেও চলাচল করতে দেখা যায়নি। পাহারারত আনসার সদস্য মোঃ রাজিব প্রামানিককে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে দায়ীদের সনাক্ত করে আটক ও আন্দোলন থামাতে সকাল ৯টার দিকে চাঁচকৈড় হরিবাসরে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের মধ্যস্ততায় হিন্দু ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে জরুরি সভা শুরু হয়। নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুন্সি শাহাবুদ্দীন ও পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ মোল্লা বৈঠকে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করেন।
এ সময় সুরাহা না হওয়ায় পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, নাটোরের জেলা প্রশাসক মোঃ মশিউর রহমান, পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জী ও জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি চিত্তরঞ্জন সাহা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গুরুদাসপুরে জরুরি সভায় যোগ দেন। জুম্মার নামাজের সময় বাদে বিকেল তিনটা পর্যন্ত চলা চাঁচকৈড় হরিবাসরের সেই সভা শেষে সকল অভিযুক্তকে দ্রুত আটক করে বিচারের আওতায় আনার নিশ্চয়তা দিলে বিক্ষোভকারীরা ঘরে ফিরেন এবং আজ প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, পূজার সময় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সাধারণ মন্ডপে দুইজন মহিলা ও দুইজন পুরুষ আনসার সদস্য, গুরুত্বপূর্ণ মন্ডপে দুইজন মহিলা ও চারজন পুরুষ আনসার সদস্য এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ মন্ডপে দুইজন মহিলা ও ছয়জন পুরুষ আনসার সদস্যের পাশাপাশি একজন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও এই মন্দিরে ঘটনার সময় কেন মাত্র একজন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছিলেন তা রহস্যজনক।
তবে নাটোরের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জী বলেছেন, ঘটনার সময় সেখানে চারজন আনসার সদস্যই নিয়োজিত ছিল। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে তিনজনকে ইতোমধ্যে আটক করা হয়েছে। জড়িত অন্যদের আটক করার জন্য অভিযান চলছে।
নাটোরের জেলা প্রশাসক মোঃ মশিউর রহমান বলেছেন, অভিযুক্ত সকলকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।