ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার যতীন্দ্রনাথ মালো শিক্ষকতা জীবন শেষ করে অবসরে গেলেও তার জীবন কাটছে এখন অবহেলা-অনাহার ও অর্ধাহারে। জাতি গঠনের এই কারিগরকে শেষ জীবনে এসে এখন ভাতের জন্য যুদ্ধ করতে হয়। বেঁচে থাকার জন্য তার স্ত্রীকে এই বয়সে স্থানীয় রাজ্জাক জুট মিলে কাজ করতে হয়।১৯৬৮ সালে জামালপুর গার্লস স্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করে পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে ২নং রামদিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন যতীন মাস্টার। দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে সুনামের সাথে চাকরিজীবন শেষ করে ২০০৬ সালে তিনি অবসরে যান। বড় পুত্র মানিক মাগুরা পলিটেকনিক ও রতন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে।
জাতি গঠনের এই কারিগরের কাছে তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বাকরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন সারাজীবন শিক্ষকতা করলাম, শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিলাম সবার মাঝে, কি পেলাম এতে? স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে না খেয়ে জীবন চালাতে হয়। মাঝে মধ্যে মানুষের কাছে হাত পাতি, শরম লাগে কিন্তু কি করব, জীবন তো চলে না। কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। এর ওপর একেক রোগতো লেগেই আছে। জমিজমা বলতে বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই। যে শিক্ষকতা করে জীবনের সবটুকু ব্যয় করলাম এই তার পাওনা। সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা নিয়ে যে কাজ করে গেছি সেজন্য পাচ্ছি শুধু অভাব-অনটন ও বঞ্চনা।
অবসর সময় এককালীন সামান্য কিছু টাকা পেলেও তা ছিল খুবই নগন্য। এলাকার মেম্বার ১০ টাকা কেজির চালের একটা কার্ড করে দিলে ৪ মাস নেওয়ার পর তাও এখন বন্ধ আছে। এখন আর কেউ একবারের জন্যও এসে খোঁজ নেয় না। বউ, ছেলে-মেয়ের মুখে দুবেলা দুমুঠো ভাত তুলে দিতে না পারার কষ্ট সহ্য করতে পারি না। তাই মনে হয় কবে মৃত্যু ঘটবে। দুনিয়া ত্যাগের সেই আশায় পথ চেয়ে আছি।