তৃতীয় দফার ভোটে কড়া পদক্ষেপ করল নির্বাচন কমিশন। ভোটের তিন দিন আগেই মালদহের পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষকে সরিয়ে দেওয়া হল। শুধু তাই নয়, ভোটের সময় হিংসার রুখতে ৯২ শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাকি সব বুথেই থাকবে রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র বাহিনী। রাজ্যে নিযুক্ত বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় ভি নায়েক এ দিন বলেন, “বিহারে ১০ বছর আগে যে পরিস্থিতি ছিল এখন পশ্চিমবঙ্গে তাই অবস্থা। তৃতীয় দফায় ৯২ শতাংশ কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। ১০০ শতাংশ করার চেষ্টা করছি। বিহারে পরিস্থিতি বদলাতে পারে, তাহলে কেন পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি বদলাবে না। এটা গণতন্ত্রের জন্যে ভাল নয়।”
কমিশন সূত্রে খবর, অর্ণব ঘোষের পরিবর্তে দায়িত্ব নিতে চলেছেন আইপিএস অজয় প্রসাদ। তিনি সিআইডি-র এসএস (নর্থ) ছিলেন। সিপিএম, বিজেপি এবং কংগ্রেস একযোগে অর্ণবের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ জানায় নির্বাচন কমিশনে। এ নিয়ে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে রিপোর্ট পাঠায়। শনিবার সরিয়ে দেওয়া হল অর্ণবকে।
বিজেপি এর আগে অভিযোগ করে, চিটফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্তে অর্ণব ঘোষের মতো পুলিশ অফিসারদের ভূমিকা সঠিক ছিল না। তাঁরা তৃণমূলের হয়ে কাজ করেন বলেও অভিযোগ করে বিজেপি। একই অভিযোগে সরব হয় সিপিএম এবং কংগ্রেসও। শেষ পর্যন্ত বিরোধীদের চাপেই অর্ণবকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হল কমিশন। এর আগে কলকাতা এবংবিধাননগর পুলিশের কমিশনার, কোচবিহারের পুলিশ সুপার, ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার এসপি এবং বীরভূম এসপিকে সরতে হয়েছিল। শুধু পুলিশ সুপারই বদল নয়, বিরোধীরা প্রথম থেকেই দাবি জানিয়ে আসছিল, রাজ্যে সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। যদিও গত দু’দফার ভোটে নির্বাচন কমিশন বিরোধীদের সেই দাবিতে সাড়া দেয়নি। ভোটের দিন এবং ভোট পরবর্তী সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় হিংসার ঘটনাও ঘটেছে।
তৃতীয় দফায় যাতে এর পুনরাবৃত্তি না হয়, সে কারণে ৯২ শতাংশ বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিল নির্বাচন কমিশন। বাকি বুথে থাকবে সশস্ত্র পুলিশ। বুথের ভিতরে লাঠিধারী পুলিশ থাকছে না। এ দিন রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সঞ্জয় বসুবলেন, “ভোটারদের নিরাপত্তার বিষয়ে সব রকম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ বার ৯২ শতাংশ বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে।”
কিন্তু বিশেষ পর্যবেক্ষক হঠাৎ বিহারের পুরনো পরিস্থিতির কথা বললেন কেন? পরে কমিশন থেকে বেরনোর সময় অজয় নায়েক বলেন, ‘‘ভোটের সময় বাংলার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আমি নিশ্চিত পরের নির্বাচনে এত কেন্দ্রীয় বাহিনী লাগবে না। আগামী দিনে শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচন হতে চলেছে। যে হেতু ৯২ শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে, তাই কোনও সমস্যা হওয়ার কারণ নেই।’’
কমিশনের দাবি, প্রথম দফা নির্বাচনে ৫০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় দফায় ৮০ শতাংশের কাছাকাছি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল। বুথের ভিতরে ভোটারদের লাইন পরিচালনা করতে দেখা গিয়েছিল লাঠিধারী পুলিশ কর্মীদের। তৃতীয় দফায় বিরোধীদের দাবি ১০০ শতাংশ না মানলেও, ৯২ শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছেই। আরও তিন থেকে চার শতাংশ বাড়ানো হতে পারে বলে কমিশনের একটি সূত্রে খবর।
চোপড়া থানা এলাকার মকদুমি এলাকায় ছাত্রের পায়ে গুলি লাগার ঘটনাই হোক বা রায়গঞ্জের সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের গাড়ি ভাঙচুর— কমিশন কোনও বিষয়টি হালকা ভাবে নিচ্ছে না বলেই জানানো হয়েছে। সম্প্রতি ব্যান্ডেলের গ্রিন পার্কে হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ভোটের দিন কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার ১৮০ নম্বর বুথ মির্দাগছ প্রাথমিক স্কুলের ভোটাররা। লাঠিচার্জ এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাতে হয় পুলিশকে। এ সব কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেই মনে করছে বিরোধী দলগুলি।