২২শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ রাত ৩:৪০

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৩০ শিক্ষার্থী স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ রবিবার, এপ্রিল ২১, ২০১৯,
  • 281 সংবাদটি পঠিক হয়েছে
  • সাতক্ষীরায় পূজামন্ডপে মাদকাসক্তদের সঙ্গে বাগ্বিতন্ডার জেরে হামলা

অনলাইন ডেস্ক ॥ বাসন্তী পূজা অনুষ্ঠানে বিষাক্ত আঠা স্প্রে করা ও হকিস্টিক দিয়ে দর্শনার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ করায় একটি গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের ২০জনকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। ওই সম্প্রদায়ের কমপক্ষে ৩০ শিক্ষার্থী তিনদিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেন না। অনেকেই পারছেন না হাটবাজারে যেতে। থানা পুলিশ করলে ফের হামলা করা হবে এমন হুমকিতে আতঙ্কে রয়েছেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের খড়িয়াডাঙা গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা। তবে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, এখন এলাকায় সমস্যা নেই। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা আছে এবং চেয়ারম্যান মিটমাট করার চেষ্টা করছে বলে তিনি জানান। কেউ লিখিত অভিযোগ না করায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

খড়িয়াডাঙা গ্রামবাসী জানান, পার্শ্ববর্তী মাটিয়াডাঙা গ্রামের আবুল কাশেম ও আব্দুল কাদেরসহ একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে খড়িয়াডাঙা গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন দীর্ঘদিন থেকে জিম্মি হয়ে পড়েছে। আবুল কাশেম ও আব্দুল কাদেরসহ চোর ও ডাকাত চক্রের সদস্যরা ক্ষমতাসীন দলের এক শীর্ষপর্যায়ের নেতার কাছের লোক পরিচয়ে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। আবুল কাশেম ও আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ঘের দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগে কমপক্ষে দু’ডজন মামলা রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে স্কুলের টয়লেটের ভেন্টিলেটর ভেঙ্গে ছাত্রীদের ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগসহ প্রতিরাতে হিন্দুদের ঘেরে মাছ লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে বোর্ডিং হাউজে ঢুকে মারপিট করে ছাত্রদের কাছ থেকে টাকাপয়সা লুটপাট করার। সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না বলে এলাকাবাসী জানান।

সাতক্ষীরা খড়িয়াডাঙা সর্বজনীন বাসন্তী পূজা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব নিখিল চন্দ্র গাইন বলেন, তাদের মন্দিরে বাসন্তী পূজা চলাকালীন ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় নেশা করে মন্ডপের সামনে পুণ্যার্থীদের উদ্দেশে খারাপ অঙ্গভঙ্গি করতে থাকে মাটিয়াডাঙা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে আশরাফুলসহ কয়েকজন। প্রতিবাদ করায় পূজা উদযাপন কমিটির সদস্য উজ্জ্বল মন্ডলকে হুমকি দিয়ে ঘোষণা দেয়, বিজয়া দশমীর দিনে তারা আবারও আসবে। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে হাত-পা কেটে বেতনা নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে তারা চলে যায়।

নিখিল চন্দ্র গাইন অভিযোগ করে বলেন, বিজয়া দশমীর দিন গত ১৫ এপ্রিল সোমবার রাত নয়টার দিকে আশরাফুল ও কাদেরের ছেলে মিমসহ কয়েকজন কাঁধে হকিস্টিক নিয়ে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বাসন্তী মন্দিরের পাশে আসে। তারা মন্দিরের সামনে সমবেত হওয়া পুণ্যার্থীদের লক্ষ্য করে বাটি থেকে আঠা জাতীয় পদার্থ স্প্রে করতে থাকে। প্রতিবাদ করায় আশরাফুল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা দশানী গ্রামের সমরেশ সরকার ও ভাস্কর সরকারসহ পাঁচজনকে পিটিয়ে জখম করে। এ সময় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী আশরাফুলকে মারপিট শুরু করলে তাকে বাঁচাতে স্বেচ্ছাসেবকরা ক্লাবের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে তার বাবা আবুল কাশেমকে খবর দেয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে আবুল কাশেম মন্দিরের সামনে এসে মোবাইল করে তার ভাই কাদের, জাকির হোসেন, দামারপোতার কয়েকজনকে ডেকে আনে। তারা এসে খাড়িয়াডাঙা গ্রামের সমরেশ সরকার, অভিমন্যু রায়সহ ১০জনকে পিটিয়ে জখম করে। চলে যাওয়ার আগে তারা মাটিয়াডাঙা বাজারে গেলে খড়িয়াডাঙা গ্রামের হিন্দুদের হাত-পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। খবর পেয়ে ধুলিহর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাবু ও ইউপি সদস্য মুক্তানুজ্জামান এসে বিষয়টি মিটিয়ে দেন।

এদিকে এই ঘটনা চেয়ারম্যান সাময়িক মিটিয়ে দিলেও মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার সময় বাড়ির সামনে পৌঁছতেই আবুল কাশেম ও তার পরিবারের সদস্যরা বৃদ্ধ গজেন্দ্রনাথ গাইনকে মারপিট করে রাস্তায় ফেলে দেয়। জনতা ব্যাংকে যাওয়ার সময় একই স্থানে এলে ওই সন্ত্রাসীরা বৃদ্ধা নিলা মল্লিককে ও গোবিন্দপুর গ্রামের বাবু সরকার ও সুপারিঘাটা খেয়াঘাটে কাদেরের নেতৃত্বে মারপিট করা হয় ইন্দ্রজিৎ গাইনকে। নেহালপুর পল্লী চেতনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র ধ্রুব সরকার বলেন, মঙ্গলবার তার ভাই রানার ওপরও সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। প্রাণের ভয়ে সেসহ কয়েকজন গত দু’দিন বাংলা প্রথমপত্র ও দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা দিতে যেতে পারেনি।

মঙ্গলবার দুপুরে নেহালপুর পল্লী উন্নয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র মৃত্যুঞ্জয় গাইন, রানা ম-ল ও নবম শ্রেণীর ছাত্রী রূপা গাইনকে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় কাদেরের বাড়ির সামনে পৌঁছালে কাদেরের নেতৃত্বে কয়েকজন তাদের মারপিটের জন্য বাঁশ নিয়ে তাড়া করে। খড়িয়াডাঙা গ্রামের নয়ন মল্লিক, ধীরাজ গাইন ও রিপন মল্লিক জানান, মঙ্গলবার সকালে সন্ত্রাসীদের ভয়ে তারা মাটিয়াডাঙা ব্রিজ পার না হয়ে মাছখোলা ব্রিজ পার হয়ে পল্লী চেতনা কলেজে যান। বিকেল ৫টার দিকে তারা বাড়ি ফেরার সময় আশরাফুল ও মিমসহ কয়েক সন্ত্রাসী মাছখোলা ব্রিজের ওপর তাদের ধাওয়া করে। স্থানীয় লোকজন উপস্থিত হলে সন্ত্রাসীরা তাদেরকে পরদিন কলেজে এলে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়।

কমপক্ষে তাদের গ্রামের ২০জন ওই সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে খড়িয়াডাঙা গ্রামের কয়েক নারী বলেন, নিরাপত্তাহীনতার কারণে গত তিন দিনে তাদের গ্রামের কমপক্ষে ৩০ শিক্ষার্থী স্কুল ও কলেজে যেতে পারছে না। হামলার ভয়ে তারা ওইসব শিক্ষার্থীকে বাড়ির বাইরে যেতে দিচ্ছেন না। এমনকি হাটে-বাজারে না যাওয়ার জন্য পরিবার প্রধানদের অনুরোধ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেহালপুর পল্লী উন্নয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীলিপ কুমার মল্লিক জানান, খড়িয়াডাঙা গ্রামের কয়েক শিক্ষার্থী গত কয়েক দিনে পরীক্ষা দিতে না আসার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয়েছে। ধুলিহর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, বিষয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে। সূত্র: জনকন্ঠ

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »