শামীম আহমেদ,বরিশাল থেকে ॥
আদালত থেকে বের হওয়ার পর মামলার বাদি হিন্দু সম্প্রদায়ের শারিরিক প্রতিবন্ধী গৃহবধূকে কৌশলে অপহরনের পর নগরীতে আটকে রেখে স্বামী ও তার সহযোগিরা গণধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ করেছে নির্যাতিত গৃহবধু । পথচারীরা মুমূর্ষ অবস্থায় ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। গত ছয়দিন হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন নির্যাতিতা ওই গৃহবধূ।
রবিবার (২১ই এপ্রিল) বিকেলে হাসপাতালে শষ্যাশয়ী জেলার গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া গ্রামের পিতৃহীন নির্যাতিতা ওই গৃহবধূ (৩০) জানান, সামাজিকভাবে ২০১৩ সালে স্বরূপকাঠী নেছারাবাদ উপজেলার কুড়িয়ানা আদাবাড়ি গ্রামের বিনেন্দ্র মিত্রর পুত্র প্রবীর মিত্রর সাথে তার বিয়ে হয়। ওই সময় বর পক্ষের দাবি অনুযায়ী যৌতুকের নগদ দুই লাখ টাকা, তিন ভরি স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান মালামাল দেয়া হয়েছে। বিয়ের আট মাস পর প্রবীর মিত্র ও তার পরিবারের সদস্যরা পূর্ণরায় এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। এতে অপরাগতা প্রকাশ করায় প্রায়ই শারিরিক প্রতিবন্ধী ওই গৃহবধূকে নির্যাতন করা হতো। সর্বশেষ নির্যাতনের একপর্যায়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় স্থানীয়দের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন বিচার না পেয়ে অবশেষে বরিশাল আদালতে দুটি মামলা দায়ের করেন অসহায় ওই গৃহবধূ। ওই মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ায় তিনজনের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করার পর পুলিশ গৃহবধূর শ্বাশুড়ি আরতি মিত্র ও দেবর পার্থ মিত্রকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।
নির্যাতিতা ওই গৃহবধূ আরও জানান, গত ১৬ এপ্রিল মামলার তারিখের দিনে তিনি আদালতে আসেন। সেখান থেকে দুপুরে বের হয়ে বাড়ি ফেরার সময় আদালতের সামনের রাস্তায় বসে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তার নাম ধরে ডাক দিয়ে কথা শোনার জন্য পথরোধ করেন। একপর্যায়ে কৌশলে তার নাকের কাছে রুমাল ধরে অচেতন করে অপহরন করে নিয়ে যায়। বেশ কিছু সময় পর তার জ্ঞান ফিরলে তিনি দেখতে পান পরিত্যক্ত একটি ঘরের মধ্যে তার স্বামী (মামলার আসামি) প্রবীর মিত্র, ননদ জামাই মানব চন্দ্র, গৌরাঙ্গ নাথসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন ব্যক্তি তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
একপর্যায়ে মামলা দায়েরের খেসারতের কথা বলে জোরপূর্বক তার স্বামী তাকে ধর্ষণ করেন। পরবর্তীতে তার দুই ননদ জামাই ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। ফলে তিনি পূর্ণরায় অচেতন হয়ে পরেন। জ্ঞান ফিরে তিনি দেখতে পান রক্তাক্ত অবস্থায় একটি সড়কের পাশে পরে রয়েছেন। এসময় তিনি পথচারীদের ডেকে তাকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য অনুরোধ করার পর তাকে উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কান্নাজড়িত কন্ঠে নির্যাতিতা ওই গৃহবধূ বলেন, রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালের তৃতীয় তলার গাইনী ওয়ার্ডের ২৪ নাম্বার বেডে ভর্তি হওয়ার পর চিকিৎসক তাৎক্ষনিক আমাকে উন্নত চিকিৎসা প্রদান করেছেন। পরবর্তীতে কিছুটা সুস্থ্য হওয়ার পর চিকিৎসক আমাকে জানিয়েছেন আমি আর কোনদিন মা হতে পারবো না। এ ঘটনায় সুস্থ্য হয়ে মামলা দায়ের করবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। অপরদিকে এ ঘটনার পর নিজেকে রক্ষা করতে গৃহবধূর যৌতুক মামলায় আদালতের পূর্বের জারিকৃত ওয়ারেন্টে গত ১৮ এপ্রিল আদালতে আত্মসমর্পন করে বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন প্রবীর মিত্র।
এ ব্যাপারে বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানার ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম পিপিএম বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলোনা। এ ব্যাপারে থানায় কেউ অভিযোগও করেননি। তার পরেও বিষয়টির খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।