আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়নের কাদাকাটি গ্রামের মৃত নিয়ামত আলী
সরদারের ছেলে প্রতিবেশিদের আতঙ্ক নামে পরিচিত মহব্বত আলী সরদারের অত্যাচারে
দেশ ত্যাগে বাধ্য হচ্ছে গ্রামের বহু সংখ্যালঘু পরিবার। মহব্বত আলী ও তার
ছেলেদের অত্যাচার থেকে রেহায় পায়নি প্রতিবেশি অসহায় মুসলিম পরিবার গুলো।
নামমাত্র দামে তাদের জমি লিখে নেওয়ার জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন, মারধর,
ঘেরা-বেড়া কেটে দেওয়া, রাতের আধারে ঘরের চালে ইট-পাটকেল মারা, মিথ্যে
মামলায় হয়রানিসহ তাদের নানাবিধ কৌশল ফলপ্রসূ না হলে সর্বশেষ ঘরে আগুন
দেওয়ার অভিযোগ করেছে প্রতিবেশিরা। শনিবার দুপুরে সরেজমিন ঘুরে এবং মহব্বতের
প্রতিবেশি সংখ্যালঘু ও মুসলিম পরিবার গুলোর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেশ
বড় আকৃতির একটি পুকুরে বহু দিন থেকে প্রতিবেশি অসহায় দিন মুজুর পরিবার
গুলোর তাদের অংশ মোতাবেক এক তৃতীয়া অংশ নেট দিয়ে ঘিরে মাছ চাষ ও নিজেদের
প্রয়োজনে ব্যবহার করে আসছে। গত বৃহস্পতিবার মহব্বত আলী পরিকল্পিত ভাবে
পুকুরের নেট তুলে দিয়ে পানিতে অক্সিজেন ফেল করা পাউডার ব্যবহার করে প্রথমে
মাছ গুলোকে ভাসিয়ে পরে জাল টেনে ধরে নেয়। প্রতিবেশি পুকুরের অংশিদাররা
প্রতিবাদ করলে বিষ দিয়ে মাছ মেরে দেওয়ার মামলা দেওয়ার ভয় দেখায় মহব্বত আলী।
এ ঘটনার পরে শুক্রবার রাত ১টার দিকে প্রতিবেশি বিশ্বনাথ সানা ও
শাহাবুদ্দীন সানার ঘরে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান বেশি না
হলেও তাদের বক্তব্য জমি লিখে দিয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য করার জন্য এগুলো
করে সম্পদ লোভি মহব্বত।
মহব্বতের প্রতিবেশি মৃত হরিপদ মন্ডলের স্ত্রী
আল্লাদী মন্ডল(৮৫) জানান, মহব্বত গংদের অত্যাচারে ৪ ছেলের ২ ছেলে ভারত
মন্ডল ও বাবু মন্ডল ভারতে, মনোরঞ্জন মন্ডল তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের
বাতুয়ারডাঙ্গা গ্রামে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। তিনি আরও জানান, বাকি যে
ছেলেকে নিয়ে তিনি এখনও স্বামীর ভিটাতে বসবাস করছেন সে ছেলের জমিও মহব্বত
জোর করে দখল নিয়ে নিয়েছে। লিখে না দেওয়ার কারনে আমাদেরকে সে প্রতিনিয়ত
অত্যাচার করে যাচ্ছে।
মৃত অভিলাস সানার ছেলে হরিপদ সানা (৮০) জানান,
তার কেউ নেই তিনি একা বসবাস করেন। ছাগল রাখা ঘরের চেয়ে নিন্ম মানের একখানা
কোঠায় বাস করেন তিনি। কোঠার পাশে ছোট্ট একটা বাশ ঝাড়ের দু’একটা বাশ বিক্রি
করে এবং বয়স্ক ভাতার কার্ডে যাহা পান তাই দিয়ে দু’বেলা কোন রকম খাওয়া চলে।
তিনি আরও বলেন, জমি লিখে না দেওয়ায় প্রায় তাকে ভয় দেখিয়ে ঝাড় থেকে বাশ কেটে
নিয়ে যায় মহব্বত। এর পরেও খ্যান্ত না সে। প্রতিনিয়ত ঘরের চালে ইট-পাটকেল
মেরে যাচ্ছে।
মৃত সুখদেব মন্ডলের ছেলে অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক
দূর্গপদ মন্ডল জানান, মহব্বতকে জমি লিখে না দেওয়ায় ডাকাতি ও পুকুরলুটসহ
একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে সে।
দোলাল চন্দ্র মন্ডলের
স্ত্রী বিনা পানি মন্ডল জানান, তাদের ক্রয়কৃত ১০ শতক সম্পত্তি জোর পূর্বক
নেওয়ার জন্য মহব্বত তাদের ঘেরা-বেড়া কেটে দেয়। গায়ের জোরে গাছের ফল গুলো
কাচা অবস্থায় পেড়ে নিয়ে যায়।
বিশ্বনাথ সানার স্ত্রী অঞ্জনা সানা জানান,
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন চালিয়ে জমি লিখে নিতে না পেরে শুক্রবার
রাতে আমাদের ঘরে আগুন দিয়েছে সে। এর আগে গত কুরবানির ঈদের সময় দিনে দুপুরে
আমার উঠানে গরুর রক্ত ও মাংশ ছড়িয়ে দিয়েছে। প্রায়ই ঘরের চালে ডেলা-খোলা
ফেলে। আমার মেয়ে জামাই তাদের এহেন কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করলে মিথ্যা অভিযোগ
দিয়ে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে হয়রানি করেছে।
অলিল উদ্দীন সানার ছেলে
শাহাবুদ্দীন সানা জানান, বিভিন্ন ভাবে হয়রানির এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার
আমাদের পুকুর দখল করে জাল টেনে মাছ ধরে নিয়ে গেছে মহব্বত এবং তার ছেলেরা।
সর্ব শেষ শুক্রবার রাতে আমার ঘরে আগুন দিয়েছে সে। অলিল উদ্দীন সানার ছেলে
প্রতিন্দ্বী সোহরাব হোসেন জানান, মহব্বতের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে এখানের
একটি হিন্দু পরিবার এই সম্পত্তি আমার কাছে বিক্রি করে রাতে অন্যাত্র পালিয়ে
যায়। তিনি আরও বলেন, ৪ বছর এখানে এসে তাদের নির্যাতন থেকে আমিও রেহায়
পাইনি। ৪ বছরে বিভিন্ন দপ্তরে প্রায় ৩০ টিরও বেশি মিথ্যা অভিযোগ ও মিথ্যে
মামলা করেছে আমার নামে।
অভিযুক্ত মহব্বত আলী সরদার মুঠো ফোনে কল দিলে
প্রতিবেদককে বলেন তিনি ব্যস্ত। ১০ মিনিট পরে তাকে আবার কল দিতে। ১০ মিনিট
পরে বিকালে দ্বিতীয় বারের মত মুঠো ফোনে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি
বলেন, আমি এখন থানায় আছি, আপনার সাথে পরে কথা বলবো।
স্থানীয় বিপ্লব রায়
বলেন, মহব্বত আলী সম্পর্কে এক কথায় বলতে গেলে এভাবেই বলতে হয় ” মহব্বত
জমি জবর দখলের জন্য এত জর্ঘন্য কাজ করে যাচ্ছেন যার কারনে আমাদের এলাকায়
কেউ অন্যায় ভাবে জমি দাবি করলে সবাই বলবে তুমি কি মহব্বত সেজেছো”? মহব্বতের
মিথ্যা মামলার হয়রানি থেকে রেহাই পায়নি মনোরঞ্জন সরকারের ছেলে মারাত্বক
শ্বারিরীক প্রতিবন্দ্বী মিত্যুন জয় সরকার।
কাদাকাটি ০২ ওয়ার্ডের সাবেক
ইউপি সদস্য মফিজ উদ্দীন গাজী বলেন, মহব্বতের প্রতিবেশি গরিব সংখ্যালঘু
পরিবার গুলোকে তাড়িয়ে তাদের জমি নিয়ে নেওয়ায় মহব্বতের মূল উদ্দেশ্য। আর তার
এই হীন উদ্দেশ্য বাস্তবে রুপ দেওয়ার জন্য তিনি বহু অন্যায় অত্যাচার পরিবার
গুলোর উপর চালিয়েছেন এবং চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিবার গুলোর সদস্যের মৃত দেহের
শেষকৃর্ত সম্পন্ন করার জন্য নির্ধারিত স্থান শ্মশানের জায়গা টুকুও দখল করে
বিল্ডিং করেছেন মহব্বত আলী। বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় মিথ্যা মামলা দিয়ে
পরিবার গুলোর একাধিক সদস্যকে হয়রানি করেছে সে। সর্ব শেষ শুক্রবার রাতে
তাদের ঘরে আগুন দিয়েছে যাতে তারা ঘর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়।
কাদাকাটি ০২
ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য হরেকৃষ্ণ মন্ডল বলেন, তারা সবাই আমার
ওয়ার্ডের লোক। আমার কাছে না শুনে ঐ এলাকায় গিয়ে শুনলে বিস্তারিত জানতে
পারবেন।
কাদাকাটি ইউপি চেয়ারম্যান দিপংকর সরকার দ্বীপ বলেন, সকালে
তাদের এক জন আমাকে ফোন দিয়ে ঘরে আগুন দেওয়ার বিষয়টি বলেছিলো। তখন আমি
তাদেরকে পুলিশে জানানোর কথা বলেছি। এছাড়া প্রতিবেশিদের সাথে মহব্বতের জমি
জমা সংক্রান্ত বিরোধের পাল্টা পাল্টি দুটি অভিযোগ আমার কাছে আছে। দুই
পক্ষকে আলোচনার সময় উল্লেখ করে নোঠিশ পাঠানো হয়েছে।