‘ভোটে একটি বুথেও যদি হারি তাহলে আমি বারানসি কেন্দ্রে জয়লাভ করেও খুশি হব না। আমি প্রতিটি বুথে জিততে চাই। কেউ মোদিকে যতই হেনস্তা করুক, আপনারা ভয় পাবেন না। আমি জিতব কিনা, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গণতন্ত্রের জয় হওয়াটাই বেশি জরুরি।’ লোকসভা ভোটে মনোনয়ন জমা দেয়ার আগে শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের বারানসিতে সংসদীয় কেন্দ্রের বিজেপি নেতাকর্মীদের কাছে এমনই বার্তা দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
হিন্দুদের অন্যতম প্রধান তীর্থক্ষেত্র বারানসি থেকে গতবার সংসদীয় ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী। গুজরাটেই বরোদার পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের হিন্দু ভোটে প্রভাব ফেলতে মোদি বারানসি থেকেও প্রার্থী হন। দুটি আসনেই জয়ী হলেও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে বরোদা আসন ছেড়ে দেন। এবার কিন্তু একমাত্র বারানসি থেকেই প্রার্থী হয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার বিকালে পৌঁছে প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তায় লাখ লাখ কর্মী-সমর্থক সঙ্গে নিয়ে বিশাল রোডশো করেন। গঙ্গার ঘাটে সন্ধ্যারতিও করেন। শুক্রবার সকালে ফের বারানসির গঙ্গার ঘাটে এসে কাল ভৈরব মন্দিরে পূজা দিয়েই বারানসি কেন্দ্রে তার মনোনয়নপত্র পেশ করেন নরেন্দ্র মোদি। মনোনয়ন পেশের রাজকীয় প্রক্রিয়ায় হাজির ছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের মতো হেভিওয়েট বিজেপি নেতারা। জেলা শাসক দফতরে ছিলেন এসএডি নেতা প্রকাশ সিং বাদল, শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে, জেডিইউ প্রধান নিতীশ কুমার, এলজেপি নেতা রামবিলাস পাসোয়ানসহ আরও অনেকে।
শুধু রাজনৈতিক শিবিরই নয়, প্রধানমন্ত্রীর মনোনয়ন পেশ করাকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের উন্মাদনাও ছিল চোখে পড়ার মতো। মন্দির থেকে জেল শাসকের দফতর পর্যন্ত তার যাত্রাপথের দু’ধারে উপচে পড়া জনতার ঢলই জানান দিলো, বারানসিতে তার জনপ্রিয়তায় এতটুকুও ভাটা পড়েনি। গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে তাদের প্রিয় নেতাকে স্বাগত জানালেন। আবালবদ্ধবনিতা সবার মুখেই মোদি ধ্বনি। প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে পথে জায়গায় সংকুলান না হওয়ায় আশপাশের বাড়ির ছাদ, বারান্দা, জানালায় ভিড় উপচে পড়ে। যা দেখে কার্যত আপ্লুত হয়ে পড়েন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। তার কথায়, এই বিপুল জনপ্লাবন কেবল কাশিতেই সম্ভব। এর আগেও তাকে আশীর্বাদ করতে কার্পণ্য করেননি কাশিবাসী। পাঁচ বছর পরেও একই উত্তাপ পেলেন এই দেব-নগরীতে। কালভৈরব মন্দিরে আরতির আগুনের ওমের সঙ্গে যেন মিলেমিশে গেল জনতার উষ্ণ অভ্যর্থনা। আন্তরিক এই উষ্ণতা গায়ে মেখেই প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘একদলীয় শাসন ব্যবস্থার প্রতি দেশের মানুষের এই আস্থা প্রদর্শন এর আগে দেখা যায়নি।’
মনোনয়ন জমা দেয়ার আগে সকালে বারানসি সংসদীয় কেন্দ্রের দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি বৈঠকও করেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে এখনও পর্যন্ত অনেক নির্বাচন হয়েছে। এতগুলো নির্বাচনের পর রাজনৈতিক পণ্ডিতরা মাথা চুলকাবেন। কারণ স্বাধীনতার পর এই প্রথমবার দেশে একদলীয় শাসনের প্রতি আস্থা রেখে জনস্রোত দেখা দিয়েছে।’