নওগাঁর রাণীনগরে গোপিনাথ মন্দিরের বেদখল হওয়া প্রায় ৩ একর ৪ শতক ফসলী জমি উদ্ধার প্রক্রিয়া করতে গিয়ে দখলদারদের দাপটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বর্তমান মন্দির কমিটি। দখলদাররা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় মন্দির কমিটির সদস্যদের ব্যক্তি জীবনেও ফেলা হচ্ছে নানান বাধা-বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা। এছাড়াও সরাসরি ও বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে দেওয়া হচ্ছে দাপটিয় হুমকি-ধামকি। সম্পত্তি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বেশকিছু দিন আগে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) বরাবরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে রাণীনগর ভূমি অফিসের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই তদন্ত কাজ সম্পূর্ণ করা হলেও দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করার সুযোগে দখলদারদের শেষ ভরসা পেশীশক্তির দাপটে মন্দির কমিটি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলা সদরের খট্টেশ্বর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী গোপিনাথ মন্দিরের নামে বর্তমানে প্রায় ৭ একর ৩৩ শতক ফসলী জমি রয়েছে। উপজেলার কাশিমপুরের জমিদার প্রসন্ন লাহিড়ী মন্দিরের সার্বিক উন্নয়ন, পূজা-আর্চনাসহ সকল প্রকার ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আর্থিক চাহিদা পুরুণের লক্ষ্যে সেবায়েত সূত্রে তৎকালীন ওই মন্দিরের সেবায়েত কৈলাশ চন্দ্র প্রামানিক সহ ০৭ জন সেবায়েতকে সম্পত্তি পরিচালনার দায়িত্বভার প্রদান করেন। যাহার সি.এস খতিয়ান নং-৫০৫ এবং সি.এস খতিয়ান নং-৫০৬, জেএল নং- ৬৯, মৌজা:- খট্টেশ্বর রাণীনগর, রকম: ধানী, পরিমাণ-৭ একর ৩৩ শতক। ১৯৬২ সালে এসএ খতিয়ান উপরোক্ত সেবায়েতদের নামে রেকর্ডভূক্ত হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে মাঠ জরিপে ওই মন্দিরের সেবায়েত সুধীর কুমার সরকারসহ ১৫ জন সেবায়েতের নামে সম্পত্তি রেকর্ড হয় এবং ১৯৭২ সালে ওই ১৫ জন সেবায়েতের নামেই চূড়ান্ত খতিয়ান প্রস্তুত হয়। যাহার আর.এস খতিয়ান নং- ১০১৩, জেএল নং-৩১, মৌজা: খট্টেশ্বর রাণীনগর, রকম-ধানী, পরিমাণ-৭ একর ৩৩ শতক। মন্দিরের মোট সম্পত্তির মধ্যে প্রায় ৩ একর ৪ শতক জমি ওই গ্রামের মৃত ছকি মোল্লা’র ছেলে সফির উদ্দিন মোল্লা ১৬০ শতক, মৃত দশরত সরদারের ছেলে মো: বাছের আলী সরদার, তাছের আলী সরদার ও মৃত রহমান সরদারের ছেলে বাচ্চু সরদার ১১৫ শতক এবং মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে মো: সাফি প্রাং ৩২ শতক জমি দীর্ঘদিন ধরে জোর পূর্বক ভোগ দখল করে আসছেন। বেদখলকৃত জমিতে উৎপাদিত ফসল মন্দির কর্তৃপক্ষ না পাওয়ার কারণে অর্থাভাবে মন্দিরের অনেক ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। নিরুপায় হয়ে মন্দিরের দেবত্তর সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য বর্তমান মন্দির কমিটি রাণীনগর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) বরাবরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। দীর্ঘদিন ধরে দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না হওয়ায় বর্তমানে দখলদারদের শেষ ভরসা পেশাশক্তির দাপটে মন্দির কমিটি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বলে ভয়ভীত কন্ঠে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ও সভাপতি শ্রী দিবাকর চন্দ্র সরকার বুদন জানান। তবে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) টুকটুক তালুকদারসহ ভূমি অফিসের কর্তব্যরত কর্মকর্তাবৃন্দ অভিযোগের প্রেক্ষিতে শ্রী শ্রী গোপিনাথ মন্দির ও বেদখলী সম্পত্তি পরিদর্শন শেষে দুই পক্ষের প্রয়োজনীয় দলিলপত্রাদি অনুযায়ী সুষ্ঠু তদন্ত’র স্বার্থে কয়েক দফায় শুনানী শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর কয়েক দিনের মধ্যে প্রেরণ করবেন বলে স্থানীয় ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে।
উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারি কমিশনার (ভূমি) টুকটুক তালুকদার বলেন, এবিষয়ে মন্দির কমিটি আমার দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিল। অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি নিজে শ্রী শ্রী গোপিনাথ মন্দির ও বেদখলী সম্পত্তি পরিদর্শন শেষে দুই পক্ষের প্রয়োজনীয় দলিলপত্রাদি অনুযায়ী দেখা গেছে, আর.এস খতিয়ান নং- ১০১৩ মোতাবেক মন্দিরের সেবায়েতদের নামে প্রায় ৭ একর ৩৩ শতক জমি রয়েছে। অপর দিকে বিবাদীগণ ১৯৬৩ সালে দুই জন সেবায়েতের কাছ থেকে ২১ শতক জমি ক্রয় করেছেন মর্মে একটি দলিল দাখিল করেছেন এবং ওই দলিলটি নামজারিও (খারিজ) করে নিয়েছেন তারা। আর এই নামজারি বাতিলের জন্য ইতিমধ্যেই মন্দির কমিটি একটি আবেদনও করেছেন। তবে দেবত্তর সম্পত্তি কোন ক্রমেই সেবায়েতরা বিক্রয় করার ক্ষমতা রাখেন না। মন্দিরের সম্পত্তি বেদখল সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত কাজ ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ হয়েছে। পরবর্তী প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর কয়েক দিনের মধ্যে প্রেরণ করা হবে।