বাংলাদেশে শিশুদের প্রতি সহিংসতার
মাত্রা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য
ফাউন্ডেশন। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সারাদেশে ধর্ষণ, যৌন
নির্যাতন, হত্যা ও শারীরিক নির্যাতনের কারণে মারা গেছে ২৭১ জন শিশু। এ ছাড়া
বিভিন্ন ধরনের শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে এক হাজার ৬ জন। আর বছরটিতে
শুধু ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪৩৩ শিশু।
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ পরিসংখ্যান প্রকাশ করে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। সংস্থাটির প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর রাফিজা শাহীন শিশু নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে জানান, ২০১৮ সালে ৪৩৩ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা গেছে ২২ জন। যৌন নির্যাতনের ফলে মারা গেছে একজন। এ ছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছিল ৫৩ শিশুর ওপর।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৮ সালে ধর্ষণের শিকার হওয়া বেশিরভাগ শিশুর বয়স সাত থেকে ১২ বছর। ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা বেশি হয় যৌন নির্যাতনের শিকার। বিশেষ করে পুরুষ শিক্ষকের হাতে এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১২৯ জন। তাদের মধ্যে ১৭ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
গত বছরে শিশুদের বিষয়ে এক হাজার ৩৭টি ইতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। অন্যদিকে নেতিবাচক ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে দুই হাজার ৯৭৩টি, যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৮১১ জন।
রাফিজা শাহীন বলেন, দেশে শিশুদের প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। আমাদের কাছে যে পরিসংখ্যান আছে, সেটি খুবই উদ্বেগজনক। আমরা কেন শিশুদের জন্য নিরাপদ আবাস গড়তে পারছি না, তা নিয়ে ভাবতে হবে। শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য এখনই করণীয় নির্ধারণ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের শাহানা হুদা বলেন, ২০১১ সাল থেকে তারা এ প্রতিবেদনগুলো সংগ্রহ করছেন। শুরুতে তাদের ধারণা ছিল, শিশুদের প্রতি সহিংসতা কমবে; কিন্তু হচ্ছে এর উল্টো। মূলত বিচারহীনতার জন্যই এমনটা হচ্ছে। শাস্তির দিকে মনোযোগ না দিয়ে সংশোধনে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। না হলে এ সমস্যা আরও প্রকট হবে। সঙ্গে এসব ঘটনার বিচার এমনভাবে করতে হবে, যেন আর কেউ শিশুদের প্রতি অপরাধ করতে উৎসাহিত না হয়।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রনি চাকমা বলেন, যারা অপরাধী তাদের উপরও একটি স্টাডি করা জরুরি। কেন তারা শিশুদের ধর্ষণ করবে? এমন চিন্তা মাথায় আসে কীভাবে সেটি আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগজনক। দ্রুততম সময়ে এটি বন্ধ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে দেশের ছয়টি জাতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত ৩৯৮টি প্রতিবেদন থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এ জরিপ প্রকাশ করা হয়েছে বলেও জানানো হয়। সমকাল প্রতিবেদক