যুক্তরাজ্যে সহ বিশ্বে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগে দণ্ডিতদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তানিরা। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের গবেষণা প্রতিষ্ঠান কুইলিয়াম ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। ২০০৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যৌন নিপীড়ন চক্রের ৫৮টি ঘটনা নিয়ে এই গবেষণা চালানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) এনডিটিভিতে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান কুইলিয়াম ফাউন্ডেশন ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক মজিদ নেওয়াজ, ইডি হোসেন ও রাশেদ জামান আলী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মাদকসহ বিভিন্ন উত্তেজক দ্রব্য সেবনের পর নারীদের ওপর প্রায় হামলা চালায় যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী পাকিস্তানিরা। তারা মূল ধারার ব্রিটিশ সমাজে অন্তর্ভুক্ত না হতে পারায় এমন সহিংস আচরণ করছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনটি এমন সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন বাংলাদেশের বিজয় দিবস আসন্ন। মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো বাংলাদেশি মা-বোনের সম্ভ্রমহানির দালিলিক প্রমাণ রয়েছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে।
ওই প্রতিবেদনে, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত পাকিস্তানিদের আধুনিক ব্রিটিশ সমাজে অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারি সাহায্যেরও আবেদন জানিয়েছে কুইলিয়াম। প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক মুনা আলি বলেন, ‘সাধারণত এশিয়ানাদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ অতিরঞ্জিতভাবে প্রচারিত হয় গণমাধ্যমে। কিন্তু সঠিক তথ্য সামনে আসার পর আমরা উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্য বিষয়টি অত্যন্ত আপত্তিকর।’
প্রতিবেদনটিতে ২০০৫ থেকে ২০১৭ সালের যৌন নিপীড়ন চক্রের ৫৮টি মামলা পর্যালোচনা করার কথা বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে এসব মামলায় ২৬৪ জনের সাজা হয়েছে। এরমধ্যে সাজাপ্রাপ্তদের ২২২ জন অর্থাৎ ৮৪ শতাংশ ছিল এশীয় বংশোদ্ভূত। এর বেশিরভাগই পাকিস্তানি। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ২২জন কৃষ্ণাঙ্গ, ১৮জন শ্বেতাঙ্গ। এর মধ্যে দু’জনকে জাতিগতভাবে শনাক্ত করা যায়নি।
গবেষণায় বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যার মাত্র সাত শতাংশ এশীয় হওয়ার ফলে এই পরিসংখ্যান সম্পূর্ণ বিপরীত।
কুইলিয়াম-এর প্রধান নির্বাহী হারাস রফিক বলেন, ‘সম্প্রতি এ ধরনের অপরাধী চক্রের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।’
উল্লেখ্য, ২০১১ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের রোচডেল, রথারহ্যাম ও বার্মিংহামে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূতরা ব্রিটিশ নাগরিকেরা সংঘবদ্ধ যৌন হয়রানির দায়ে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাভোগ করে আসছে।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সাংবাদিক ও সমাজকর্মী রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী সোয়েব শুক্রবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্রিটেনের মূলধারার সমাজে পাকিস্তানিদের অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত বঞ্চনার অভিজ্ঞতা তাদের হতাশার জন্য দায়ী।’