৩১শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ রাত ১০:৫৯

সংখ্যালঘু পরিবারে হামলা করা সেই যুবলীগ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ বুধবার, মে ১, ২০১৯,
  • 309 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

সাটুরিয়ায় বসাক পরিবারে যুবলীগ নেতার হামলার ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে মানিকগঞ্জ জেলাসহ দেশ জুড়ে এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়। নিন্দার ঝড় ওঠে সর্বত্র। ঘটনার সত্যতা তদন্তে নামে পুলিশের বিভিন্ন টিম।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানী ঢাকার সাভার এলাকা থেকে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেককে (৩৫) গ্রেফতার করে পুলিশ।

মানিকগঞ্জ জেলা যুবলীগের সভাপতি বাবু সুদেব সাহার সভাপতিত্বে জরুরি সভায় আব্দুল খালেককে বহিষ্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. রেজাউল করিম। তিনি আরও জানান, সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মো. ফারুক হোসেনকে উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

বহিষ্কৃত নেতা আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে অপহরণের চেষ্টা, চাঁদাবাজি, বাকী খেয়ে টাকা না দেওয়া, টেন্ডার বাজিসহ অসংখ্য নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত শনিবার (২৭ এপ্রিল) সাটুরিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক ও যুবলীগের কর্মী শাহীনুর ইসলাম ভান্ডারীপাড়ার দীপক বসাকের স্ত্রী টুম্পাকে অপহরণ করতে যায়। এ সময় যুবলীগ নেতা খালেকের সঙ্গে টুম্পার স্বামী দীপকের কথা কাটাকাটি হয়।

এক পর্যায়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষ হলে দীপকের পরিবারের সদস্যরা যুবলীগ নেতা আব্দুল খালেককে ঘরে তালা দিয়ে আটকে রাখে। এ সময় আঘাতে তার মাথার একাধিক স্থানে ফেটে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সাটুরিয়া হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

এদিকে যুবলীগ নেতাকে মারধরের খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই হিন্দু পরিবারে হামলা করে খালেকের সমর্থকরা। হামলাকারীরা দ্বিপ বসাক, দীপক বসাক, দিনেশ বসাক ও দুলাল বসাককে মারধর করে। পরে স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে সাটুরিয়া হাসপাতালে ভর্তি করেন।

গৃহবধূ টুম্পা বসাকের স্বামী দীপক জানায়, ‘তার স্ত্রী টুম্পা বসাক একটি বেসরকারি স্কুলে চাকরি করেন। প্রায় দুই বছর ধরে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে যুবলীগ নেতা আব্দুল খালেক তাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলো। মাঝে মধ্যে বিষয়টি আওয়ামী লীগ নেতাদের জানানো হলেও কোন লাভ হয়নি। যুবলীগ নেতার অত্যাচারে আমার স্ত্রী কিছুদিন আগে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল।’

তিনি আরও জানান, ‘শনিবার যুবলীগ নেতা খালেক আমার বাসায় গিয়ে বলেন, তোর স্ত্রী তোকে তালাক দিয়ে আমাকে বিয়ে করেছে। এ সময় বিয়ের প্রমাণ দেখতে চাইলে তিনি একটি স্বাক্ষর বিহীন স্ট্যাম্প দেখিয়েই আমার স্ত্রীর হাত ধরে দুই তলা থেকে নিচে টেনে হেঁচড়ে নামাতে থাকেন। তখন খালেকের সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে যুবলীগ নেতার সঙ্গে ধস্তাধস্তি হলে তিনি পড়ে যান। এতে ঐ নেতা মাথায় আঘাত পান।’

ভুক্তভোগী গৃহবধূ টুম্পা বসাক অভিযোগ করেন, ‘আমাকে ব্ল্যাক মেইল করে একাধিকবার যৌন হয়রানির চেষ্টা করে যুবলীগ নেতা আব্দুল খালেক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি আমাকে রাস্তায় উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। এ ব্যাপারে একাধিকবার সাটুরিয়া থানাকে অবগত করা হয়েছে।

যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে থানায় এর আগেও একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছিল। এরপরও এই অত্যাচার থামে নি। আমরা হিন্দু বলে আমাদের ওপর নির্যাতন প্রতিরোধ করার কেউ না থাকায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে চেষ্টা করেছি।’ এ সময় তিনি ওই যুবলীগ নেতার হাত থেকে তার পরিবার ও তাকে বাঁচানোর আকুতি জানান।

টুম্পার বাবা দিনেশ বসাক বলেন, ‘আমরা সংখ্যালঘু বলে যুবলীগ নেতা আব্দুল খালেকের ভয়ে চুপচাপ ছিলাম। সে আমাকেও হুমকি-ধামকি দিয়েছে। আমার মেয়ের নামে কিছু জমি আছে। সেই জমি ওই যুবলীগ নেতা দখল করে নিতে চায়। নিরুপায় হয়ে সাটুরিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে এ ব্যাপারে অনেকবার অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি। সে শনিবার বাসায় এসে আমার মেয়েকে তুলে নিতে গেলে এ সংঘর্ষ হয়।’

এর আগে ওই হিন্দু পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »