২২শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ রাত ৩:৩২

ভয়াল ‘ফণী’: আজ সন্ধ্যায় আঘাত হানতে পারে বাংলাদেশ উপকূলে

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ শুক্রবার, মে ৩, ২০১৯,
  • 321 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

হ্যারিকেনের গতি সম্পন্ন ভয়াল ঘূর্ণিঝড় ফণী ধেয়ে আসছে বাংলাদেশের দিকে। অন্ধ্র প্রদেশের বিশাখাপত্তনমে আঘাত হানার পর আজ শুক্রবার বিকাল নাগাদ ভারতের ওড়িষা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল হয়ে সন্ধ্যায় খুলনা ও তত্সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছতে পারে।

প্রতি ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে ওড়িষা-পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তবে ক্রমেই এর গতি বাড়বে। ফণীর প্রভাবে অশান্ত ও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগর। ইতোমধ্যে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে চার নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া দফতরের সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, খুলনা ও তত্সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আজ শুক্রবার সকাল নাগাদ ভয়ংকর রুদ্রমূর্তিতে এগিয়ে আসা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণীর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুরু হতে পারে। ফণী আরো ঘণীভূত ও উত্তর বা উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা ও তত্সংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় আঘাত হানতে পারে। বাংলাদেশে আছড়ে পড়লে দেশের বিভিন্ন এলাকার দ্বীপ ও চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৬ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ভয়াল ফণীর কারণে দেশের ১৯ জেলার মানুষ সবচেয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। ওইসব এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের ছুটি। ঢাকার নদীবন্দর সদরঘাটসহ সারাদেশে নৌচলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ)। সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটিও বাতিল করা হয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণী পরবর্তী সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ সহায়তাসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৩২টি জাহাজ প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে নৌবাহিনী।

জলবায়ু ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ একেএম ওয়াহিদুজ্জামান গতকাল সন্ধ্যায় ইত্তেফাককে জানান, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সুপার সাইক্লোন ফণী ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীকাকুলাম ও ব্রহ্মাপুর উপকূলে আঘাত হানতে শুরু করেছে। উপকূলের সঙ্গে প্রায় সমান্তরাল কৌণিক অবস্থানে এটি ওড়িষার পুরী এলাকার দিকে এগিয়ে যাবার সময় কিছুটা শক্তি হারিয়েছে। ফণীর অগ্রভাগ গতকাল মধ্যরাতেই ব্রহ্মাপুর অতিক্রম করার কথা এবং ঘূর্ণীঝড়ের কেন্দ্রবিন্দু আজ শুক্রবার সকালে পুরী এলাকা দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করবে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫০ কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা গড় গতিবেগ ঘন্টায় ১৪৫ কিলোমিটার, যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়া আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফণীর যে গতিবিধি তাতে আজ ভারতের ওড়িষায় স্থলভাগে উঠে স্থলনিম্নচাপে পরিণত হবে এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পার হয়ে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের উপর দিয়ে আসামের দিকে চলে যেতে পারে।

ফণীর প্রভাবে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা এবং পটুয়াখালী অঞ্চল স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হবার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া আজ দুপুর থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় ঝড়োহাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান খান ও আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, ভয়ঙ্কর গতিতে এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ফণি। আজ সকাল থেকেই খুলনা অঞ্চলে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হবে।

টাইফুন ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা কেন্দ্র থেকে বলা হচ্ছে, ক্যাটাগরি-৪ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় ফণির তীব্রগতির কারণে ভূমিধসও হতে পারে। ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে,এ ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’ থেকেও ভয়ানক হবে।

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ বলেন, ফণী যদি সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানে তবে তা রূপ নেবে সুপার সাইক্লোনে। ফণী ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। দুপুরের পর ফণী বেশ শক্তিশালী হয়ে গেছে। তার গতি বেড়েছে। তিনি বলেন, আগের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল ৪ মের পর এটি আঘাত হানতে পারে। কিন্তু তার সর্বশেষ গতিবিধি দেখে অনুমিত হচ্ছে আজ শুক্রবার বিকেল কিংবা সন্ধ্যা নাগাদ এটি সরাসরি কিংবা ভারত হয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানবে। তবে যদি এটি বাংলাদেশে সরাসরি আঘাত হানে তাহলে সুপার সাইক্লোনের মত রূপ নিতে পারে।

এদিকে আবহাওয়া দফতর বলছে,উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ খুবই ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই এই জেলাগুলোতে ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ (ছয় ) নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলাসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৬ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »