চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে স্বামীসহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গৃহবধূর নাম দিপিকা আশ্চার্য্য মনিকা। তিনি শুক্রবার (৩ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে মারা যান।
হাজীগঞ্জ থানার ওসি আলমগীর হোসেন রনি জানান, বৃহস্পতিবার (২ মে) দিপিকার ভাসুর সজলকে হাজীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়। আর স্বামী বিপুল ও শাশুড়ি সন্ধ্যা রাণী আশ্চার্য্যকে ঢাকা মেডিক্যাল থেকে গ্রেফতার করে রাতেই হাজীগঞ্জে নিয়ে আসা হয়। অপর আসামি সজলের স্ত্রী দিপা আশ্চার্য্যকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গ্রেফতার তিন জনকে শুক্রবার (৩ মে) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার হাজীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন দিপিকার বড় ভাই অরবিন্দ আশ্চার্য্য। সেটিকে হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে।
দিপিকার শ্বশুরবাড়ি হাজীগঞ্জ পৌরসভার ৫নম্বর ওয়ার্ডের বকুলতলা এলাকায়। বাবার বাড়ি নরসিংদী জেলার ছোট মাধবদী উপজেলার পৌরসভার ১নম্বর ওয়ার্ডে। পারিবারিকভাবে ১০ বছর পূর্বে বিপুলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের তিন বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
ওসি আলমগীর হোসেন রনি জানান, হাসপাতালের ডাক্তাররা মৃত্যুর পূর্ববর্তী সময়ে দিপিকার জবানবন্দি নিয়েছেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, রঞ্জিত আশ্চার্যের ছেলে বিপুল আশ্চার্য্য ও তার বড় ভাই সজল আশ্চার্য্য ৩০ এপ্রিল গভীর রাতে দিপিকা আশ্চার্য্যকে (মনিকা) শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। বিষয়টিকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে রাতেই দিপিকাকে প্রথমে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে কুমিল্লা মেডিক্যালে নেওয়া হয়। সেখান থেকেই ওই দিনই তাকে ঢাকা মডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটি ভর্তি করা হয়।
দিপিকার বড় ভাই অরবিন্দ আশ্চার্য্য অভিযোগ করেন, মোবাইল ফোনে বোনের দুর্ঘটনার খবর শুনে তিনি ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে বোনকে দেখতে গেলে দিপিকা জানান, তাকে মারধর করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এরপর তিনি বৃহস্পতিবার দুপরে হাজীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির ও হাজীগঞ্জ থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন রনি।
দিপিকার বড় ভাই অরবিন্দ আশ্চার্য্য জানান, বিপুল তার বোনকে শরীরে আগুন লাগানোর আগে মেরে ফেলার জন্য মারধর করে। তার মাথা ও কপাল ফেটে গেছে। বিপুল, সজল, তাদের মা সন্ধ্যা রাণী আশ্চার্য্য, সজলের স্ত্রী দিপা আশ্চার্য্য মিলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তার বোনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। দিপিকার গায়ে আগুন দিয়ে বিপুল সজল, তার মা ও তার ভাবী সজলের স্ত্রী দিপাকে খবর দিয়ে তাদের বাসায় আনে। পরে রাতে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। যে রুমে দিপিকাকে নির্যাতন করা হয়েছে, ওই রুমের দেয়ালের সঙ্গে রক্তের দাগ রয়েছে। ঘটনার পর থেকে তারর সাড়ে ৩ বছরের ভাগনীকে নিয়ে দিপা পলাতক রয়েছে।
অরবিন্দ জানান, সজল ও বিপুলদের একটি জায়গা আছে। কয়েক মাস যাবৎ ওই জায়গা বিক্রির চেষ্টা করে আসছে সজল ও বিপুল। আমার বোন দিপিকা ওই জায়গা বিক্রিতে বাধা দিয়ে আসছিল। এছাড়াও তাদের পারিবারিক কলহ চলছিল।