২২শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ রাত ৩:১৩

জেলের ভেতরে পুড়িয়ে মারা হয়েছে পলাশকে

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ সোমবার, মে ৬, ২০১৯,
  • 375 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

এডভোকেট পলাশ কুমার রায়-কে পঞ্চগড় জেল কারাগারে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মানহানির মামলা দিয়ে তাকে জেলে নেয়া হয় এবং পুড়িয়ে মারা হয়। মৃত্যুর আগে পলাশ নিজে বলে গিয়েছেন: “২৬ এপ্রিল শুক্রবার আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে দু’জন লোক টাইগার পানীয় বোতল থেকে কি যেন আমার শরীরে ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। এই অপরাধীর বিচার চাই”। এ অভিযোগ নিহত পলাশের পরিবারের।

১৯৭৫ সালে জেলখানায় চার জাতীয় নেতাকে হত্যার পর ২০১৯ সালের ২৬শে এপ্রিল আবারো জেলখানায় একটি বর্বরতম হত্যাকান্ড ঘটলো। পঁচাত্তরের জেলহত্যা নিয়ে জাতি সোচ্চার ছিলো, পলাশ হত্যা নিয়ে জাতি নীরব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযোগ আছে, পলাশ নাকি কোন এক সভায় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছিলেন।

পলাশের মা মীরা রানী রায় পুত্র হত্যার বিচার চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, তার পুত্রকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাভিশন টেলিভিশনে সংবাদটি এসেছে। বেশ ক’টি ইন্টারনেট মিডিয়ায় এসেছে। প্রিন্ট মিডিয়া বা অন্য টিভিতে কেন আসেনি সেই প্রশ্ন অবান্তর। প্রধানমন্ত্রী মুখ খুললে সকল মিডিয়ায় আসবে। এই ঘটনার সাথে নাসরিনকে পুড়িয়ে মারার মিল আছে। তবে এটি আরো জঘন্য, কারণ ঘটনা ঘটেছে জেলখানার অভ্যন্তরে।

কে এই পলাশ? পলাশ কুমার রায় ছিলেন হিন্দু ছাত্র মহাজোটের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন। কিন্তু এসব তো তাকে পুড়িয়ে মারার কারণ হতে পারেনা? নাসরিনের ঘটনায় যাঁরা সোচ্চার ছিলেন তারা এখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন? মানবাধিকার সংস্থাগুলো ঘুমিয়ে আছে? হিন্দু সংগঠনগুলো মানববন্ধন আর বিবৃতি দিয়ে তাদের কর্তব্য শেষ করেছেন। অথচ এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা বাংলাদেশের  ইতিহাসে এই জঘন্যতম অধ্যায়। দেশে মানুষের বিবেক কি মরে গেছে?

পলাশ রায় আওয়ামী লীগ করতেন। তিনি আটোয়ারী উপজেলার ভাইস-চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ছিলেন। তার মা একই উপজেলার আওয়ামী লীগের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। পঁচিশে মার্চ পলাশ রায়কে একটি মিথ্যা মামলায় আটক করা হয়, এক মাস তিনি জেলে। কেন তিনি এক মাস জেলে? ২৬ এপ্রিল তার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়, জেলের ভেতরে।  তাঁর পরিবারকে কিছুই জানানো হয়নি। পহেলা মে তিনি মারা যাবার পূর্বক্ষণে জেল কর্তৃপক্ষ তার মা-কে জানায়। পলাশ তার মা-কে শেষ কথা বলে গেছে, বিচার চেয়ে গেছে।

বিচার কি পলাশ পাবে? এই হত্যাকান্ড পরিকল্পিত, তা বুঝতে রকেট সাইন্টিষ্ট হবার প্রয়োজন নেই! কারা এর পেছনে? কারণ কি এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের? এসব উদ্ঘাটন না হলে এর খেসারত একদিন জাতিকে দিতে হবে বটে? প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনেক আবেদন-নিবেদন যাচ্ছে। বাংলাদেশে তিনি না চাইলে কিছুই হয়না। তাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কথা বলুন, জাতি আপনার কথা শুনতে চায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা মিডিয়ায় এসেছে, তবে তা যথেষ্ট নয়, তিনি দায় এড়াতে পারেন না?

একজন এডভোকেটকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো, দেশের বাকি সব এটর্নি চুপচাপ। এর অন্তর্নিহিত কারণ কি ভয় বা পলাশ হিন্দু বলে? হিন্দু না হলে কি পলাশ এভাবে মরতো? নাসরিনের ঘটনায় আমরা হুজুরকে কষে গালাগাল দিয়েছি, পলাশের ঘটনায় হত্যাকারীদের কি আমরা স্যালুট জানাবো? দৃশ্যত: পলাশের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই? তিনি চোর-ডাকাত-ধর্ষক-জামাত-বিএনপি কিছুই নন, তবু কেন তাকে এ অপঘাতে মরতে হলো? জেলের ভেতরে ঘটনার দায়িত্ব কি জেল কর্তৃপক্ষ নেবে না? সুপ্রীমকোর্ট কি ‘সুয়ামাটা’ ফাইল করে জানতে চাইবেন কি হয়েছে? দেশে কি প্রধানমন্ত্রী ব্যাতিত আর দায়িত্বশীল কোন কর্তৃপক্ষ নাই? নাসরিন মরে তার ভাইকে চাকুরী দিয়ে গেছে; পলাশের ক্ষেত্রেও কি তাই হবে? দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, মনুষ্যত্ব হারিয়ে যাচ্ছে? আমরা কোথায় যাচ্ছি? দেশ কোথায় যাচ্ছে? মাহে রমজান শুরু হয়েছে। পবিত্র এই মাসে মানবিক কারণে জাতি নাসরিন ও পলাশ হত্যার বিচার চায়। হত্যার বিচার না চাইলে আমরা কি বিবেকের কাছে জিন্মী হয়ে যাবোনা? কে যেন বলেছিলেন, ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে—’।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »