বাংলাদেশ জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি মিঠুন চৌধুরী ও তার সহকর্মী আশিক ঘোষকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ধরে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন মিঠুন চৌধুরীর স্ত্রী সুমনা চৌধুরী। তিনি বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) দেশ কে বলেন, ‘তাদের খোঁজে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থায় গেলেও কেউ সন্ধান দিতে পারেনি। এমনকি তাদেরকে কারা ধরে নিয়ে গেছে সে তথ্যও সংস্থাগুলোর জানা নেই।’ তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মিঠুন ও আশিক কোথায় আছে অন্তত এটুকু জানান।’ ‘নিখোঁজ’ আশিক ঘোষ দলের যুব পার্টির সভাপতি। দলের সভাপতি মিঠুন চৌধুরীর বাড়ি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরাণ থানাধীন শহরতলীর উত্তর বালুচর আল ইসলায় বসবাস করে আসছেন।
মিঠুনের স্ত্রী অভিযোগ করেন, তাদেরকে ২৭ অক্টোবর দিবাগত রাত ১২টা ১০ মিনিটে ঢাকার সূত্রাপুর থানার ফরাশগঞ্জের প্রিয় বল্লব জিউ মন্দিরের ফটক থেকে একটি কালো গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে পুলিশ তা নেয়নি।
তিনি বলেন, ‘আমি জানতে চাই তাদের অপরাধ কি ছিল?’ ‘নিখোঁজদের’ সন্ধান চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সুমনা চৌধুরী।
এদিকে, মিঠুন চৌধুরী ও তার সহকর্মী আশিক ঘোষকে ফেরত চেয়ে শুক্রবার (৩ অক্টোবর) বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিজেপি সিলেট বিভাগীয় কমিটির পক্ষ থেকে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিষয়টি মহানগর পুলিশ কমিশনারকে লিখিতভাবে অবগত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজেপির সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী স্বপন বর্মণ।
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণেই মিঠুন চৌধুরী ও আশিক ঘোষকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় দলের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গেলেও পুলিশ তা নেয়নি। দুজন ব্যক্তি নিখোঁজ হওয়ায় পুলিশ জিডি না নিয়ে ঘটনাটি আরও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। আমরা দ্রুত মিঠুন ও আশিককে সুস্থ অবস্থায় পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাই।’
সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন জানান, আর্থিক লেনদেনের একটি মামলায় মিঠুন চৌধুরী সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে শাহপরাণ থানায় চারটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। পুলিশ অনেকবার অভিযান চালিয়েও তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। বেশিরভাগ সময় মিঠুন সিলেটের বাইরে থাকতেন।
মিঠুন চৌধুরীসহ তার সহযোগী ‘নিখোঁজের’ বিষয়ে থানায় জিডি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘মিঠুন ও তার সহযোগী কোথায় আছে সে তথ্য পুলিশের কাছে নেই। আর নিখোঁজের ঘটনায় থানায় কোনও জিডিও করেনি মিঠুনের পরিবার।’
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সিলেটে মিঠুন চৌধুরী ও তার সহকর্মী আশিক ঘোষের সন্ধান চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন মিঠুনের স্ত্রী সুমনা চৌধুরী। সেসময় তিনি জানান, মিঠুন দৈনিক বাংলার মুক্তাঙ্গন নামে একটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ তিনি ‘বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান আদিবাসী পার্টি’ প্রতিষ্ঠা করেন।