সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেছেন, ‘২০১৮ সালের পাঠ্যপুস্তকে সেই তেঁতুল হুজুরের প্রেসক্রিপশনে যেগুলো আছে, তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। এত দিন ধরে আলোচনা, গবেষণা, উপস্থাপন করে তথ্য-উপাত্ত দেওয়ার পরেও আমাদের পাঠ্যপুস্তক সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ উৎপাটন করতে পারিনি।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের চতুর্থ সম্মেলনের প্রাক্কালে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘বর্তমানে পরিস্থিতি হচ্ছে—সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিষবাষ্প; যে শিক্ষা জন্ম থেকে শিশু শিক্ষার্থীদের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে, উনি হিন্দু লেখক, উনি মুসলমান লেখক ইত্যাদি, সেই জায়গায় নীতিনির্ধারকদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। তাঁরা কোন পরিপ্রেক্ষিতে, কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এটা করছেন, তা আমরা জানি না। আমাদের শিশুদের, শিক্ষার্থীদের মনের মধ্যে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটা রাখতে চাই। সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, অতিকেন্দ্রিকতা ও ঔদাসীন্য পরিহার করে সর্বজনের সচেতন ও সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সামাজিক শক্তির পুনর্জাগরণ করতে হবে। সামাজিক পুনর্জাগরণ সৃষ্টি করে দেশটিকে এমন একটা জায়গায় নিতে হবে, যেখানে যখন-তখন নারী নির্যাতন হবে না, দলগত ধর্ষণ হবে না।
রোহিঙ্গাদের নিয়ে সাম্প্রদায়িকতার প্রকট আশঙ্কা প্রকাশ করে সুলতানা কামাল বলেন, ‘এখনই রুখে দাঁড়াতে না পারলে সেটা এমন একটা জায়গায় পৌঁছাবে, যেখানে ৭৫-পরবর্তী সময়ে যে ক্রমে ক্রমে প্রতিটি ক্ষেত্রে কূপমণ্ডূক, সাম্প্রদায়িক, রক্ষণশীল জঙ্গিবাদী শক্তি ঢুকে গেছে, ঠিক সেভাবে যে জায়গাগুলো অবশিষ্ট আছে, সেখানেও সাম্প্রদায়িকতা ঢুকবে।’
সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমিও একজন রাজনৈতিক কর্মী হয়ে সমাজকে জাগানো প্রধান কাজ বলে মনে করি। সামাজিক কার্যক্রমকে সক্রিয়, কার্যকর ও গতিশীল করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। সব অসংগতির সংগ্রামে আমরা লিপ্ত হব। জানি না, কতটুকু সফল হতে পারব।’
সংবাদ সম্মেলনে নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ও শিক্ষাবিদ অজয় রায় বক্তব্য দেন। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের যাত্রা ১৯৯৮ সালে। এ পর্যন্ত তিনটি সম্মেলন হয়েছে। ২৯ ডিসেম্বরে চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। চতুর্থ সম্মেলনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিয়া উদ্দিন তারিক আলী বলেন, ‘এটি একটি অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম, কিন্তু রাজনীতি-বিবর্জিত নয়। সমাজ যাতে জাগ্রত থাকে, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’