অনলাইন ডেস্ক ॥ কারা হেফাজতে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর হাসপাতালে আইনজীবী পলাশ কুমার রায়ের (৩৬) মৃত্যুর ঘটনায় পঞ্চগড়ের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে বিচারিক তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ তদন্ত কাজে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক, জেলা কারাগারের প্রধান ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ বুধবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।রুলে কারাগারে কারাবন্দিকে যথাযথ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আদালত ২৩ জুন দিন ঠিক করেছেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোখলেছুর রহমান। রিটকারীর পক্ষে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন নিজেই শুনানি করেন।
কোহিনূর কেমিকেলসের আইন বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা পলাশ কুমার রায় (৩৬) ঢাকা বারের একজন সদস্য ছিলেন। কোম্পানির ৩১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৬ সালে তার বিরুদ্ধে ঢাকায় একটি মামলা দায়ের হয়। ওই মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গত ২৫ মার্চ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অনশনে বসেন পলাশ। পরে জেলা শহরের শের-ই-বাংলা পার্ক সংলগ্ন মহাসড়কে মানববন্ধন করেন। সেখানে হ্যান্ডমাইকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রশাসন ও পুলিশকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে পলাশকে আটক করে সদর থানার পুলিশ। পরে রাজীব রানা নামে একজন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে পলাশের বিরুদ্ধে মামলা করেন৷
কোহিনুরের মামলার শুনানির জন্য গত ২৬ এপ্রিল পলাশকে পঞ্চগড় থেকে ঢাকায় পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু সেদিন সকালে তাকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরদিন পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ এপ্রিল দুপুরে মারা যান পলাশ। তার শরীরের ৪৭ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল বলে চিকিৎসকরা জানান।
পলাশের মা পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মীরা রানি রায় এরপর অভিযোগ করেন, তার ছেলেকে কারা হেফাজতে থাকা অবস্থায় পরিকল্পিতভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। দুইজন তার গায়ে তরল কিছু ঢেলে আগুন দিয়েছে বলে মৃত্যুর আগে বলে গেছে পলাশ।
অন্যদিকে পঞ্চগড় জেলা কারা কর্তৃপক্ষের দাবি, অসুস্থ পলাশকে সেদিন কারা হাসপাতালে রাখা হয়েছিল। ওই হাসপাতালের বাথরুমে গিয়ে পলাশ নিজের শরীরে আগুন দেন। পরে কারাগারের লোকজন আগুন নিভিয়ে তাকে হাসপাতালে পাঠায়।
ওই ঘটনার বিচারিক তদন্ত দাবি করে আইনজীবী সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন গত সোমবার হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন। বুধবার ওই আবেদনের ওপর শুনানি করেই আদালত আদেশ দিল।
রিটের বিবাদীরা হচ্ছেন, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজি প্রিজন, রংপুর বিভাগের ডিআইজি ও পঞ্চগড় কারাগারের জেলার।