রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন – এর কোন দালিলিক প্রমাণ নেই। কয়েকজন বাঙালি লেখকের লেখায় এমন কথা পাওয়া যায় যদিও এর পক্ষে কোন অকাট্য প্রমাণ নেই। রবীন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে ছিলেন, বাংলাকে ভাগ করার ব্রিটিশ ষঢ়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ছিলেন।
সেই সময়ের রাজনৈতিক অবস্থা, ঘটনাপ্রবাহ এবং ইতিহাস না জেনে, না বুঝে কেবল মাত্র অমীমাংসিত এবং অপ্রোয়জনীয় একটি বিষয়কে নিয়ে বর্তমানের ছাত্ররা রবীন্দ্রনাথ বিরোধিতা করছে, হাসিঠাট্টা করছে- বিষয়টা মেনে নেয়া কষ্টকর।
অথচ রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি হয়ে এসেছিলেন, জগন্নাথ হলের ছাত্রদের সংবর্ধনা নিয়েছিলেন এবং তাদের জন্য কবিতাও লিখেছিলেন। পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির প্রতীক৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে রবীন্দ্রনাথের গান বেছে নিয়েছিলেন, এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিলো না৷ তিনি যে রবীন্দ্রনাথকে বাঙালির প্রতীক হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, তাঁর বিভিন্ন বক্তৃতা থেকেও সেটার প্রমাণ পাওয়া যায়।
অথচ সেই বঙ্গভঙ্গের সময়ের প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন কিনা, সেই অদরকারী এবং নিতান্ত অপ্রোয়জনীয় বিষয়টি এখন আবারো আলোচনায় নিয়ে আসাটা উদ্দেশ্যমূলক। এবং সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের অনেকে এই স্রোতে গা ভাসাচ্ছে দেখা যাচ্ছে। এই আলোচনাটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বকোয়াজ আলোচনা৷
হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, বাংলার মাটি থেকে রবীন্দ্রনাথ নির্বাসিত কিন্তু বাংলার আকাশের নাম রবীন্দ্রনাথ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানীগণ এবং অন্যান্য উচ্চশিক্ষিত পণ্ডিতগণ যেভাবে ইচ্ছা তাঁকে অস্বীকার করতে পারে, তাতে কিছুই যায় আসে না৷ মাটির দখল নেয়া গেলেও, আকাশটা স্বাধীনতাকামীদের জন্য।