৩১শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ রাত ৯:৩৫

‘নিজের বেদখল’ ভিটায় ফিরতে পারেননি সুবীর নন্দী

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ সোমবার, মে ১৩, ২০১৯,
  • 236 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

অদিতি ফাল্গনী গায়েন : শিল্পী সুবীর নন্দীর প্রয়াণের পর মঙ্গলবার এদেশেরই কিছু মানুষ তাঁকে নিয়ে কটু মন্তব্য করেছেন দেখেও উপেক্ষা করছিলাম যে করুক না হয় কিছু মানুষ বাজে মন্তব্য। অধিকাংশ মানুষ ধর্মাধর্ম নির্বিশেষে তাঁকে গভীর শ্রদ্ধাই জানিয়েছেন।

তবে, রাত হতে না হতে ফেসবুকেই যে সংবাদ জানতে পেলাম তাতে হতবাক হলাম। ঢাকার ফিল্ম ইন্ডাস্টির দীর্ঘদিনের হাতে গোণা শীর্ষ এক-দু’জন মেল প্লেব্যাক সিঙ্গারের অন্যতম এই শিল্পী যিনি জীবনে কোনদিন আপত্তিকর গান করেন নি, অকল্পনীয় পরিমিত জীবনাচার ও ব্যবহারের মানুষ ছিলেন…এমন সেলিব্রিটি এক শিল্পীর জন্মশহরে নিজের বাসাটাই বেদখল হয়ে ছিল বা আছে?

মৃত্যুর পর জন্মশহর হবিগঞ্জের বাসভিটায় দাহ হবে এমন শেষ ইচ্ছা যাঁর ছিল…সেই বসতভিটাটুকু পর্যন্ত তাঁর মত শিল্পী উদ্ধার করতে পারেন নি? যখন কিনা খোদ মুক্তিযুদ্ধের সরকার পরপর দু’টার্ম ক্ষমতায়? খল চরিত্রে অভিনয় করা এবং বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শের কেউ কেউ অসুস্থতায় অনেক বেশি সাহায্য পেয়েছেন বলে যারা অভিযোগ করছেন, সেই অভিযোগও আমলে নিচ্ছি না। কারণ কে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করতেন আর কে খল নায়ক চরিত্রে সেটা অন্য প্রশ্ন। কার কি রাজনৈতিক মতাদর্শ সেটাও না হয় বিবেচনায় নিলাম না। সব গুণী মানুষই বিপন্ন সময়ে রাষ্ট্র থেকে বিশেষ সাহায্য লাভের অধিকারী।
তবে, সুবীর নন্দীকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছুটা দেরিতেই এবং সেখানে সাধারণ হাসপাতালেই তাঁকা রাখা হয়েছিল।

ঠিক আছে, আয়ু যাঁর যতটুকু সেটা মেনেও শান্তনা নিলাম না হয়। আর সত্যি বলতে সবাইকে ৮০-৯০ বছর বয়ষ পর্যন্ত নিজের ও অন্যের বোঝা হয়ে বাঁচতে হবে এমনটাও ভাবি না। সক্রিয়-উজ্জ্বল থাকতে থাকতেই একজন মানব বা মানবীর চিরবিদায় হলে ভাল এমন একটা নির্মোহ ও প্রায় নিষ্ঠুর ভাবনা আছে আমার…এমনকি কাছের মানুষ বা নিজের জীবনটা নিয়েও। কিন্ত এত বড় এক গুণী ও প্রখ্যাত শিল্পী তাঁর সব নাম-যশ-গরিমার বিনিময়েও আপন পৈতৃক বাড়িটাও উদ্ধার করতে পারেননি এটা আমার ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কৌতুক বলে বোধ হচ্ছে। এর চেয়ে কালো কৌতুক সত্যি আর হয় না। আমাদের সংবিধান বহু বার অস্ত্রোপচারকৃত। আমাদের রাষ্ট্রের মর্মজ্ঞান বহু আগেই বিলুপ্ত। কিন্ত কাল রাতে যা জানলাম তারপরে এই সংবিধান, এই জাতীয় পতাকা বা ক্রিকেট ম্যাচের জয় সবই ভাবতে কেমন বোকা বোকা লাগছে।

গতকাল সকালেও যখন পারস্যের কবি রুমীর কবিতা অনুবাদ করছিলাম, তখনি দেশের নানা জায়গায় সংখ্যালঘু পীড়নের খবর দেখছিলাম নিউজফিডে যথারীতি। তারপর তারাবির নামাজের সময়ও ক্যান্সারে আক্রান্ত মায়ের মৃত্যুর পর বাবার সাথে প্রথম রোজায় ইফতারি করতে যাওয়া এক মেয়েকে বাস থেকে নামিয়ে গণধর্ষণ ও হত্যার খবর পড়তে পড়তে হাত-পা ঠান্ডা লাগলো। রুমী ত’ অনশন-উপবাসে দেহকে বীণার মত করতে বলেছেন। এই বুঝি সেই অনুশীলন? ওদিকে ওপারেও দেখলাম এক দলিত যুবকই সম্ভবত: খুন হয়েছেন ‘উচ্চবর্ণে’র তরুণী বিয়ে করার অপরাধে- বধূসহ। আর এক দলিত খুন হয়েছেন কোন এক উচ্চবর্ণের পাশে ববে খাবার গ্রহণের অপরাধে। উপমহাদেশ এক দারুণ চিড়িয়াখানা।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »