বন্ধু মুজিবুর রহমানের সাধের সোনার বাংলা ছাড়ছেন সংখ্যালঘু হিন্দুর৷ মুক্তিযুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রাম করেও তাঁরা দেশছাড়া৷ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের আমলেও প্রতিদিনই নিরুদ্দেশ হচ্ছেন সংখ্যালঘু হিন্দুরা৷
পরিস্থিতি এমনই যে- ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষে বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ছে৷ আগামী দু’তিন দশক পরে এদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বী কোনও মানুষ আর খুঁজে পাওয়া যাবে না ‘বাংলাদেশে কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কারের রাজনৈতিক অর্থনীতি’ সংক্রান্ত গবেষণা রিপোর্টে এমনই উদ্বিগ্ন জনক তথ্য উঠে এল৷ গবেষণা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল বারকাত৷ তাঁর দাবি, বিলুপ্ত হতে চলেছেন দেশটিতে হিন্দু সংখ্যালঘুরা৷ শনিবারই বইটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান৷ তার আগেই বাংলাদেশে শুরু হয়েছে বিতর্ক৷ প্রথমসারির ওয়েব সংবাদ মাধ্যম ‘বাংলা ট্রিবিউন’ বইটির কিছু কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে৷
অধ্যাপক আবুল বারকাতের দাবি, ১৯৬৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মোট ১ কোটি ১৩ লক্ষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। পাঁচ দশকের এই হিসেব ধরলে প্রতিবছর গড়ে ২ লক্ষ ৩০ হাজার ৬১২ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ নিরুদ্দিষ্ট বা দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। সেই হিসেবে প্রতিদিন দেশ ছেড়েছেন গড়ে ৬৩২ জন হিন্দু৷
মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত বাংলাদেশ৷ দেশটির সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে পড়ছেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানরা৷ সংখ্যালঘুদের মধ্যে বৃহত্তম সম্প্রদায় হিন্দুরা৷ ভারত ভাগ হওয়ার পর পাকিস্তান তৈরি হয়৷ দেশটির পূর্ব অংশ পূর্ব পাকিস্তান হিসেবেই পরিচিত ছিল৷ পাক সরকারের চূড়ান্ত দমননীতি ও বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা করার আন্দোলনকে ঘিরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সৃষ্টি৷ অধ্যাপক আবুল বরকতের গবেষণায় ১৯৬৪-১৯৭১ সালের পূর্ব পাকিস্তানের চিত্র যেমন উঠে এসেছে৷ তেমনই স্বাধীন বাংলাদেশের পটভূমিতে (১৯৭১-২০১৩) সংখ্যালঘু হিন্দুদের দেশত্যাগ ও নিরুদ্দেশ সংক্রান্ত তথ্য স্থান পেয়েছে৷
গবেষণায় দেওয়া তথ্য বলেছে ১৯৯১-২০০১ সালের মধ্যে প্রতিদিন ৭৬৭ জন হিন্দু বাংলাদেশ ছেড়েছেন৷ যা এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক৷ এই সময়ের মধ্যে (১৯৯১-১৯৯৬) বিএনপি-জামাত ইসলামি জোট সরকারের নেত্রী হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খালেদা জিয়া৷ তারপর দেশের ক্ষমতায় আসে আওয়ামি লিগ৷ ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন শেখ হাসিনা৷ ২০০১ সালেই ফের প্রধানমন্ত্রী হন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া৷ দুই প্রতিদ্বন্দ্বী নেত্রীর প্রথম দফার শাসনকালেই সর্বাধিক সংখ্যালঘু দেশত্যাগ করেছেন৷ তথ্য দিয়ে এমনই দেখিয়েছেন অধ্যাপক বারকাত৷
পরবর্তী সময়েও দেশটির সংখ্যালঘু হিন্দুরা বিপুল হারে দেশত্যাগ করেছেন৷ এই সময়ে পর্যায়ক্রমে কখনও খালেদা তো কখনও হাসিনার রাজত্ব৷ গবেষণার রিপোর্ট মোতাবেক ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৬৭৪ জন হিন্দু নিরুদ্দেশ হয়েছেন। এই সময়টিতে ক্ষমতায় ছিল আওয়ামি লিগ৷ বিপুল জয় পেয়ে বর্তমানে দলটি ফের ক্ষমতায়৷
অধ্যাপক আবুল বারকাতের দৃষ্টিতে এই বিষয়টি খুবই চিন্তাজনক ও ভয়ঙ্কর৷ যদিও বিভিন্ন মহল থেকে গবেষণার সমালোচনা শুরু হয়েছে৷ তবে অস্বস্তি বেড়েছে সরকারের৷ সম্প্রতি একের পর এক সংখ্যালঘু মন্দির ও পাড়া আক্রান্ত হয়৷ অভিযোগ ছিল, ইসলামকে অবমাননা করা হচ্ছে৷ কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠনের কর্মীরা এই হামলায় জড়িত৷ যাদের মূলে রয়েছে জামাত ইসলামি৷ এমনই দাবি কয়েকজন পুলিশ আধিকারিকের৷ পরে এই ঘটনায় জড়িয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর নাম৷ যদিও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় বিশেষ সংখ্যালঘু মন্ত্রকের দাবি ঘিরে চলছে আন্দোলন৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন নিরাপদেই আছেন দেশের সংখ্যালঘুরা।