২২শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ রাত ২:৩৯

বরিশালে তিন হাজার কারাবন্দীর জন্য মাত্র একজন চিকিৎসক!

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ মঙ্গলবার, মে ১৪, ২০১৯,
  • 306 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

শামীম আহমেদ: হাজতি ও কয়েদি মিলিয়ে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারসহ বিভাগের অন্য পাঁচটি জেলা কারাগারে মোট বন্দীর সংখ্যা তিন হাজার ২৭২ জন। এরমধ্যে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার হাসপাতালে একজন সহকারী সার্জন প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে বন্দীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।

বিভাগের অপর পাঁচটি জেলা পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর কারাগারে বন্দীদের জন্য কোন চিকিৎসক নেই। ফলে ডিপ্লোমা নার্স ও ফার্মাসিস্ট দিয়ে জেলা কারাগারগুলোতে বন্দীদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। কারাবিধি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কারাগারে পূর্ণাঙ্গ কারা হাসপাতাল থাকতে হবে। জেলা কারাগারগুলোতে একজন সহকারী সার্জনসহ একজন করে ডিপ্লোমা নার্স ও ফার্মাসিস্ট থাকার কথা। কিন্তু ওই পাঁচ জেলা কারাগারের একটিতেও সহকারী সার্জন নেই। কোনটিতে ফার্মাসিস্ট আছেন তো ডিপ্লোমা নার্স নেই, আবার ডিপ্লোমা নার্স আছেন তো ফার্মাসিস্ট নেই।

ফলে কয়েদি ও হাজতিদের চিকিৎসাসেবা যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট জেল সুপাররা। গুরত্বর অসুস্থরাও যথাসময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। সূত্রমতে, বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পূর্ণাঙ্গ কারা হাসপাতাল নেই। গতানুগতিক রোগী ব্যতীত অন্য কারা হাসপাতালের গুরুত্বর অসুস্থ্য হাজতি ও কয়েদিদের চিকিৎসার জন্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বরিশালের উপ-কারা মহাপরিদর্শক তৌহিদুল ইসলাম জানান, গত ৯ মে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ছিলো এক হাজার ২২০ জন। এখানকার কেন্দ্রীয় কারাগারে একটি কারা হাসপাতাল থাকলেও জনবল কাঠামো অনুযায়ী ছয়টি পদের বিপরীতে রয়েছে মাত্র দুইজন। এখানে একজন সহকারী সার্জন থাকলেও তার মুল কর্মস্থল হচ্ছে ঢাকায়।

তিনি বরিশালে প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে হাজতি ও কয়েদিদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। এছাড়া এখানে একজন ফার্মাসিস্ট রয়েছে। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ও ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ানের দুটি পদই শুন্য রয়েছে। দুইজন ডিপ্লোমা নার্সের পদে একজনও নেই। এখানে নেই কোন ল্যাবরেটরি। বরগুনা জেলা কারাগারে গত ৯ মে বন্দীর সংখ্যা ছিল ৪৪১জন। সেখানে কোন সহকারী সার্জন নেই। ডিপ্লোমা নার্স ও ফার্মাসিস্টের পদও শুন্য রয়েছে।

তবে জেলা সিভিল সার্জন বন্দীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য ডেপুটেশনে একজন ফার্মাসিস্ট দিয়েছেন। পটুয়াখালী কারাগারে ৫১৩ জন বন্দীর জন্য কোন গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসক নেই। তবে কারা বিভাগের একজন ডিপ্লোমা নার্স এখানে কর্মরত থাকায় কয়েদি ও হাজতিরা তার কাছ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। ভোলা কারাগারে ৫৭১ জন বন্দীর চিকিৎসা দিচ্ছেন একজন ডিপ্লোমা নার্স। পিরোজপুর কারাগারে ৩৬৪ বন্দীর জন্য রয়েছেন মাত্র একজন ফার্মাসিস্ট। ঝালকাঠি জেলা কারাগারে ১৬৩ জন বন্দীর চিকিৎসা সেবা সামাল দিচ্ছেন সিভিল সার্জন দফতরের একজন ডিপ্লোমা নার্স।

অথচ প্রচলিত বিধি অনুযায়ী কোন ডিপ্লোমা নার্স বা ফার্মাসিস্ট ব্যবস্থাপত্র দিতে পারেন না। আর রেজিস্ট্রার্ড এমবিবিএস চিকিৎসক ছাড়া অন্য কেউ এন্টিবায়োটিক ওষুধ সেবনের পরামর্শও দিতে পারেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল বিভাগের একাধিক জেলার কারাগারের তত্ত্ববধায়ক বলেন, কোন হাজতি বা কয়েদির যদি হৃদরোগ বা জটিল কোন রোগ হয় তাহলে ভোগান্তির আর শেষ থাকেনা। এ ধরনের অসুস্থদের প্রথমে জেলা হাসপাতালে নেয়া হলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য শেষ পর্যন্ত নিতে হয় বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

তাছাড়া গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসকের অভাবে প্রায় প্রতিদিনই অসুস্থ বন্দীদের নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সহকারী সার্জন ডাঃ শামীম রেজা বলেন, বরিশাল কারা হাসপাতালের একজন নার্স ও একজন ল্যাবরেটরি টেকনেশিয়ান থাকলে বন্দীদের ভালো চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হতো। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টেরও প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কারাগারে বিভিন্ন ধরনের অপরাধী আসেন। তাদের সংশোধনের জন্য নিয়মিত কাউন্সেলিং প্রয়োজন।

বরিশালের সিনিয়র কারা তত্ত্ববধায়ক প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, প্রত্যেক কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন করে ডেন্টাল সার্জন ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ থাকা একান্ত জরুরি। কিন্তু বরিশালে ওই পদে কেউ না থাকায় বন্দীদের দাঁত ও চোখের ছোট খাট সমস্যার জন্যও নিতে হয় বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ল্যাবরেটরি টেকনেশিয়ান থাকলে রোগ নির্ণয়ের কাজ সহজ হতো এবং উপযুক্ত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হতো।

সরকারী হাসপাতালগুলোর মতো কারা হাসপাতালে হোমিও চিকিৎসক দেয়া হলেও কয়েদি-হাজতিরাও উপকৃত হবেন। উপ-মহা কারাপরিদর্শক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, দেশের প্রত্যেকটা কেন্দ্রীয় কারাগারের হাসপাতাল স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া প্রয়োজন। বরিশাল বিভাগের জেলা কারাগারগুলোতে চিকিৎসক না থাকায় ভোগান্তি হচ্ছে। এখন মাদকাসক্ত বন্দীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের চিকিৎসা ও কাউন্সেলিং প্রয়োজন। কিন্তু জনবল সংকটে তা যথাযথভাবে সম্ভব হচ্ছেনা। তবে কারা হাসপাতাল ও জেলা কারাগারগুলোর চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »