ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে সন্ত্রাসীদের ৪ দিন ধরে ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ৩টি সংখ্যালঘু পরিবারের পুরুষ সদস্যরা । সন্ত্রাসীরা দফায় দফায় হামলা করে মারধর করেছে ওই ৩ টি সংখ্যালঘু পরিবারের নারী ও পুরুষ সদস্যদের । হামলায় স্কুলছাত্রী মনি রাজভরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে । ঘটনাটি গফরগাঁও উপজেলার গন্ডগ্রাম গ্রামে ।
জানা গেছে, উপজেলার গন্ডগ্রাম গ্রামে সহায়, সহায় সম্বলহীন বজা রাজভর, গনেশ রাজভর ও দীনেশ রাজভরের পরিবার গত তিন যুগ ধরে তুষার চক্রবর্ত্তীর জায়গায় বসত ঘর তুলে বসবাস করে আসছে । এর আগে পাশের শৈলেন্দ চক্রবতীর জায়গায় এই রাজভর পরিবারগুলো যুগের পর যুগ ধরে বসবাস করত । ১৯৮৫ সালে শৈলেন্দ চক্রবর্তী জমি বিক্রি করে দেশত্যাগ করে ভারত চলে যায়। জমি ক্রয় করে স্থানীয় ইউপি সদস্য বেলালের পরিবারের সদস্যরা । এরপর রাজভর পরিবারগুলো পাশেই তুষার চক্রবর্ত্তীর জায়গায় আশ্রয় নেয়।
বজা রাজভর জানায়, বেশ কয়েক বছর যাবত বাদল মেম্বার ও তার লোকজন এই জায়গা থেকে রাজভর পরিবারের সদস্যদের উচ্ছেদের জন্য হুমকি ও চাপ দিচ্ছে । এই ভিটা থেকে বাড়িঘর না সরালে ঘরে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মারার হুমকি দেয় তারা । কারনে-অকারনে সুযোগ পেলেই রাজভর পরিবারের উপর চড়াও হয় বাদল মেম্বার ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী । মারধরসহ নানা ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন করে রাজভর পরিবারের সদস্যদের ।
গত সোমবার দিন বেলাল মেম্বারের বাড়িতে “কামলা না দেওয়ার অপরাধে’ স্থানীয় ইউপি সদস্য বেলাল (৪৫), তার ছেলে আসাদুল (২২), তার ভাই হেলাল (৫০) ও তার আত্ত্বীয় ইয়াহিয়া (৩৮) নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র লোক নিয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বজা রাজভর, গনেশ রাজভর ও দীনেশ রাজভরের বাড়িতে হামলা চালায়। বজা রাজভর(৩৫), দীনেশ রাজভর (৪৫), দীনেশ রাজভরের ছেলে বলরাম রাজভর (২১) ও গনেশ রাজভরের ছেলে কৃষ্ণ(২৫) ও রুপম (১৫) পিটিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয় । আবার বাড়িতে আসলে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেয় । এ সময় দীনেশ রাজভরের দুই মেয়ে শুভা রাজভর (১৭) ও মনি রাজভর (১৫)কে পিটিয়ে আহত করে সন্ত্রাসী বাহিনী । এরপর থেকে রাজভর পরিবারের এই সদস্যরা বাঢ়িতে যেতে পারছেনা, পালিয়ে বেড়াচ্ছে । বুধবার দুপুর ১২ টার দিকে ‘বাড়ি ছেড়ে চলে না যাওয়ার অপরাধে’ বসত ঘরে ঢুকে স্কুলছাত্রী মনি রাজভরকে রড দিয়ে এলাপাথারী পিটিয়ে গুরুতর আহত করে বাদল মেম্বারের সন্ত্রাসীরা । আহত মনি রাজভরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে ।
বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনায় রাজভর পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে গফরগাঁও থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয় । ইউপি সদস্য বাদল মিয়া মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি ।
গফরগাঁও থার ওসি আব্দুল আহাদ খান বলেন, অভিযোগ পেয়েই ঘটনাস্থলে পুলিশ অফিসার পাঠানো হয় । উপজেলার হিন্দু কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ থানায় উপস্থিত হয়ে বিষয়টি মিমাংসা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মামলা না নেওয়ার অনুরোধ করলে এখন পর্যন্ত মামলা দায়ের হয়নি। তবে বিষয়টি গফরগাঁও থানা পুলিশের নজরদারিতে আছে।