৩১শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ রাত ৯:১৯

রাজীব কুমার মুখ খুললে কী কী হতে পারে, ঘুম ছুটেছে ‘প্রভাবশালীদের’

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ শুক্রবার, মে ১৭, ২০১৯,
  • 308 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

রাজ্য সরকারের ঘনিষ্ঠ পুলিশ কর্তা রাজীব কুমারকে যদি সত্যিই নিজেদের হেফাজতে নেয় CBI, তা হবে এক নজিরবিহীন ঘটনা। দেশের অন্য একাধিক রাজ্যের শীর্ষ আমলাদের সম্পর্কে সরাসরি দুর্নীতি বা অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকার ঘটনা জানা থাকলেও, এ রাজ্যে এ ধরনের ঘটনা বিরল। সেটাই হতে চলেছে। প্রশাসন-ঘনিষ্ঠ এই IPS গ্রেফতার হলে, তাঁর নিজের মান-মর্যাদা যেমন গোল্লায় যাবে, তেমনই রসাতলে যাবে এই বঙ্গের ভাবমূর্তি। কারন, রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চালু থাকা সারদা-তদন্তে অসহযোগিতা করা, তথ্য গোপন করা, তথ্য লোপাট করা, প্রভাবশালীদের আড়াল করা ইত্যাদি। এই অভিযোগের প্রতিটির সঙ্গে সারদায়-প্রতারিতদের দীর্ঘশ্বাস জড়িয়ে আছে। দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশে তদন্ত করছে CBI, আর সেই CBI-ই শীর্ষ আদালতে হলফনামা পেশ করে অভিযোগ করেছে, সারদা-তদন্তের জন্য রাজ্য সরকার যে বিশেষ তদন্তকারী দল বা SIT গঠন করেছিলো, সেই SIT-এর প্রধান ছিলেন রাজীব কুমার, অথচ সেই রাজীব-ই তদন্তকে বিভ্রান্ত করে চলেছেন তথ্য গোপন করে। CBI বলেছে, নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করার বদলে রাজীব নাকি অসংখ্য নথি নষ্ট করে, যেসব প্রভাবশালী চিটফান্ড কাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ, তাঁদের আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। ফলে, বৃহত্তর ষড়যন্ত্র যদি কিছু হয়ে থাকে, তার যথাযথ তদন্ত করার জন্য রাজীব কুমারকে গ্রেপ্তার করা অত্যন্ত জরুরি। কারন হেফাজতে নিয়ে জেরা না করলে রাজীব কুমার সত্যি কথা বলবেন না।

শীর্ষ আদালত দীর্ঘ শুনানির শেষে CBI-এর এই অভিযোগকে মান্যতা দিয়েই ‘অভিযুক্ত’ রাজীবকে গ্রেফতার করা যাবেনা, এই রক্ষাকবচ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ফলে যে কোনও মুহূর্তেই CBI নিজেদের হেফাজতে নিতে পারে এই রাজীব কুমারকে।
রাজ্য-রাজনীতি এখন ডুবে আছে লোকসভা ভোটে। ব্যস্ত মুখ্যমন্ত্রীও। তারই মাঝে শীর্ষ আদালতে রাজীব কুমার মামলার এই রায়, সরকার এবং শাসক দলের কপালের ভাঁজ বাড়িয়েছে। রাজীব কুমার বর্তমান সরকারের বিশ্বস্ত অফিসার। গত 3 ফেব্রুয়ারি রাজীবের বাড়িতে CBI হানা এবং তার পরের ঘটনাপ্রবাহ গোটা রাজ্য জানে। রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে সেদিন তাঁর বাড়িতে CBI-এর দল পৌঁছালে,কলকাতা পুলিশের বাছাই করা অফিসাররা CBI আধিকারিকদের টেনে-হিঁচড়ে শেকসপিয়ার সরনি থানায় নিয়ে যান। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রাজীব কুমারের বাসভবনে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই তিনি সাংবাদিকদের জানান, CBI-এর এই বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে ধর্নায় বসছেন। এরপরই নিজে CBI-এর অভিযানের প্রতিবাদে ধর্মতলায় ধরনায় বসেন। সেই ধরনা মঞ্চে একে একে হাজির হন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি, নগরপাল, সল্টলেকের পুলিশ কমিশনার-সহ একাধিক শীর্ষ আমলা। তাঁদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আদালত অবমাননার মামলাও হয়। সেই মামলায় নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে নেন এই আমলা-বাহিনি।
দু’দিন আগেও মমতা বলেছেন,“রাজীব দক্ষ অফিসার। বাম আমলে রাজীব বুদ্ধবাবুর ‘রাইট হ্যাণ্ড’ ছিলেন।” ফলে মুখ্যমন্ত্রী প্রতি ক্ষেত্রেই স্পষ্ট করেছেন, রাজীব কুমার তাঁর ঘনিষ্ঠ।
এদিকে, শীর্ষ আদালতের রায়ে
নবান্ন উদ্বিগ্ন, সত্যিই যদি রাজীব কুমার CBI হেফাজতে যান, তাহলে কতখানি মুখ খুলবেন তিনি ?
এমনিতেই এই রাজীব কুমারকে পর পর দু’বার পদ থেকে সরিয়েছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। দ্বিতীয়বার তো কমিশনের নির্দেশে রাজীবকে রাজ্যছাড়া হতে হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে তাঁকে দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে যোগ দিতে হয়েছে।

ওদিকে উদ্বিগ্ন নবান্ন আশঙ্কায় আছে, রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে CBI-এর অভিযোগ, SIT-এর তদন্তের নামে তিনি নথি গোপন এবং নথি নষ্ট করে সারদা-মামলায় নাম উঠে আসা প্রভাবশালীদের বাঁচিয়েছেন। এতদিন রাজীব এ প্রসঙ্গে CBI-এর কাছে একটা শব্দও উচ্চারন করেননি। কারন, রাজীব বাইরে ছিলেন। কিন্তু এখন যদি রাজীবকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা চলে, সেক্ষেত্রে ‘অভিযুক্ত’ প্রভাবশালীদের নাম বেরিয়ে আসতে পারে।
কিছু নাম সামনে আসা সময়ের অপেক্ষা। ফলে একটু চিন্তায়, অস্বস্তিতে আছে প্রশাসন। সেক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর বিপদ সর্বস্তরে।

তবে প্রথমে একটা চেষ্টা চলছে, রাজ্যের স্পেশ্যাল কোর্টে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে রাজীব কুমারের আগাম জামিন আদায় করার। সেই চেষ্টাও সম্ভবত শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজীব কুমারের মুখ খোলা যতদিন এবং যে ভাবেই হোক ঠেকিয়ে রাখাই এখন অগ্রাধিকার।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »