৩১শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ দুপুর ১২:৩৪

বিরাট রাজার গড় গ্রাস করছে স্থানীয়রা

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ শনিবার, মে ১৮, ২০১৯,
  • 386 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

বিরাট রাজার গড় উত্তরাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থান। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় রাজাহার ইউনিয়নে অবস্থিত এই প্রত্নস্থানটির বেশ কয়েকটি ঢিবি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসাবে সরকারের তালিকায় নথিভুক্ত আছে। কিন্তু শুধু কাগজে কলমে সংরক্ষিত হলেও এ গুলো এখন ধ্বংসের পথে।আর বিরাট রাজার গড়ের বিস্তৃত সীমানা ইতোমধ্যে চলে গেছে দখলদারদের কবলে। সংরক্ষণ ও উদ্ধারে সরকারি দফতরের নেই কোনো উদ্যোগ।

জানা যায়, এখানে রাজপ্রাসাদ, ২৭টি দুর্গ, দরবার কক্ষ, রাজমন্দির, অতিথিশালা, নাট্যশালা ইত্যাদি স্থাপনা ছিল। এখন যার চিহ্ন হিসেবে মাত্র কয়েকটি ঢিবি রয়েছে। এগুলো বিলুপ্ত হবার পথে। তবে রাজা বিরাট এলাকায় কি পরিমাণ জায়গা রয়েছে, উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে সেই হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় লোকজন জানায়, রাজা বিরাটের এলাকায় ৫০ একর জমি থাকতে পারে।

সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি গবেষক দল এখানে জরিপ পরিচালনা করেন। জরিপ দলের পক্ষে অধ্যাপক স্বাধীন সেন বলেন, একটি স্থাপত্য কাঠামোর নবরথ মন্দিরের গর্ভগৃহের রথ অভিক্ষেপ (ধাপ বিশিষ্ট দেয়াল) বহির্গাত্র উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। মানুষজন ইট খুলে নিয়ে যাওয়ায় এই অভিক্ষেপ গুলোর একটি পাশ ধ্বংস হয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজন মাটি খুঁড়ে নিয়ে যাওয়ার কারণে খ্রি. ১০ম-১১শ শতকে নির্মিত দুটি ব্রাহ্মণ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের শেষ অংশটুকুও নিশ্চিহ্ন হবার মুখে।

রাজা বিরাট গড়ে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এটি দখলদাররা গ্রাস করে ফেলেছন। নির্মাণ করা হয়েছে ঘর বাড়ি, দোকানপাট, মুরগীর খামার, স্কুল ঘর, মসজিদ, জমি। জমিতে চলছে চাষাবাদ, পুকুরগুলো দখলে নিয়ে চলছে মাছচাষ। ঘরবাড়ি তৈরির ফলে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছে ধ্বংসপ্রাপ্ত ঢিবিগুলো। ঢিবির ইট খুলে জায়গা বের করে তৈরি হয়েছে ঘরবাড়ি। মাটির নিচে চাপা পড়া রাজপ্রাসাদের উপরের দিকের ইট খুলে নেওয়া হয়েছে। উপরিভাগে চড়ছে গরু- ছাগল। চুলা তৈরি করে স্থানীয়রা ধান সেদ্ধ করছে, খড়ের স্তূপ স্থাপন করে খাওয়ানো হচ্ছে পশুদের। রাজপুরীর চারদিকে বেষ্টন করা পর পর তিনটি গভীর পরিখা ছিল যা বর্তমানে ধান চাষের জমিতে পরিণত হয়েছে।

অবৈধ দখলদার রাজাহার ইউনিয়নের রাজা বিরাট এলাকার আবদুস সামাদ বলেন, সরকারের জায়গা পড়ে আছে। তাই ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছি। সরকার চাইলে ছেড়ে দেব। একই এলাকার দখলদার হুদা মিয়া বলেন, বিরাট রাজার জায়গায় অনেকে ঘরবাড়ি নির্মাণ করেছেন, তাদের দেখাদেখি আমিও করেছি। আরেক দখলদার শিবুচন্দ্র বর্মণ বলেন, এখানে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট গড়ে তোলার সময় কেউ বাঁধা দেয়নি। তাই সবার সঙ্গে আমি এই জায়গায় দোকান তুলেছি।

আরও পড়ুন: সরকারের স্কুল দখল করে গৃহস্থের বাস

এলাকায় স্থাপিত মদনমোহন জিউ বিগ্রহ মন্দিরের সেবায়েত দীলিপ চক্রবর্তী জানান, রাজা বিরাটের ১৭ একর ২১ শতক জমি নিয়ে হাইকোর্টে মামলা বিচারাধীন আছে। বর্তমানে মন্দিরের দখলে আছে ৫ একর জায়গা। সেখানে হাট বসিয়ে প্রণামী আদায় করে মন্দিরের কাজ চালানো হয়। এই সম্পত্তি তারা দেবোত্তর সম্পত্তি হিসাবে দাবি করে নিম্ন আদালতের রায় পান। কিন্তু সরকার সে রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপীল করেছেন।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বর্মণ বলেন, এই প্রত্নস্থানটির বেদখল হওয়া জায়গা পর্যালোচনা ও জরিপ করে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »