আন্তর্জাতিক ডেস্ক : টাইম মেশিনে চড়ে কয়েক বছর পিছিয়ে যাওয়া যাক৷ উত্তরপ্রদেশের নয়াবাঁসে আগে হিন্দু এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষজন একসঙ্গে বাস করতেন৷ জন্ম হোক কিংবা মৃত্যু, সবাইকে জীবনের যেকোনও মুহূর্তে একে অন্যকে পাশে পেতেন সকলে৷
সর্বধর্ম সমন্বয়ের ঐতিহ্যকে আগলে বাঁচতেন এখানকার মানুষ৷ কিন্তু হায়! বর্তমানে সেই ছবি পুরোটাই বদলে গিয়েছে৷ এখন আর পথ চলতে দেখা হলেও, কেউ কারও সঙ্গে কথা বলতে পারেন না৷ বিপদে কেউ কারও পাশেও থাকেন না৷ ধর্মের বেড়াজালই যেন এখন মূল ইস্যু৷ কিন্তু কেন এমন উলটপুরাণ? গ্রামবাসীরা যদিও এই বৈপরীত্যের কারণ খুঁজে পেয়েছেন খুব সহজেই৷
এই গ্রামেরই বাসিন্দা গুলফাম আলি৷ তিনি এলাকায় একটি ছোট্ট দোকান চালান৷ তিনি বলছেন, ‘আগে জীবনের দুঃসময় এবং সুসময়ে হিন্দু-মুসলমান সকলে একসঙ্গে থাকতাম৷ যেকোনও অনুষ্ঠানে যেমন একসঙ্গে আনন্দ করেছি৷ তেমনই দুঃখের দিনেও পাশে পেয়েছি৷ কিন্তু বর্তমানে আমাদের জীবনধারা কেমন যেন বদলে গিয়েছে৷’
বেশ আক্ষেপের সুরে ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগ, হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভেদ তৈরি করাই মূল লক্ষ্ কিছু ওলামার বয়ান রাজনৈতিক ভাগাভাগী এভাবে এই এলাকায় বাস করতে চান না বলেও মন্তব্য করেছেন গুলফাম আলি৷ কিন্তু বললেই তো আর বসতভিটে-ব্যবসা ছেড়ে চলে যাওয়া যায় না, তাই যেতে পারছেন না বলেও দাবি তার৷
গ্রামের বেশিরভাগ বাসিন্দার বক্তব্য, আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের৷ রমজান পালন করছেন সকলেই৷ অনেকেই বলছেন, রোজা পালন করতেও নাকি বারবার বাধা পাচ্ছেন তারা৷ মাদ্রাসায় মাইকের ব্যবহার বন্ধ করতে নাকি চাপ দেওয়া হচ্ছে তাদের৷ শান্তির জন্য অনেক মাদ্রাসা বাধ্য হয়ে মাইকের ব্যবহার বন্ধও করে দিয়েছে৷
তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ মানুষ যদিও যোগীর রাজ্যের ধর্মীয় মেরুকরণকে সমর্থন করেছেন৷ মাদ্রাসায় ব্যবহৃত মাইক বাজানো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যথেষ্ট খুশি হয়েছেন তারা৷ রাজনীতিকদের মতে, এমন সুকৌশলে হিন্দুত্ববাদকে সকলের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যে তাতেই নাকি এমন বিরোধিতা তাদের৷
ধর্মীয় ভেদাভেদকে তাস হিসাবে ব্যবহার করেই দিল্লি দখলের লড়াইয়ের রাস্তায় হেঁটেছে উত্তরপ্রদেশের গেরুয়া শিবির৷ আদৌ এই কৌশলে সাফল্য মিলবে কি না, তা বোঝা যাবে আগামী ২৩ মে৷ তবে আবারও বিজেপি ক্ষমতায় আসলে ঘর-বাড়ি ছাড়ার কথা ইতিমধ্যেই ভেবে ফেলেছে মুসলিম ধর্মাবলম্বী গ্রামবাসীরা৷