বেড়ার ওপর টিনের ছাউনি দেওয়া দুই কামরার একটি ঘর। ৩২ বছর আগে সেটি ভাড়া নিয়েছিলেন স্কুলশিক্ষক মেঘনাথ বিশ্বাস বাবুল। দুই ছেলে বড় হয়েছে। ছোট্ট ঘরটিতে থাকতে কষ্ট হত। অনেকবার ভেবেছিলেন ছেড়ে দিয়ে বড় বাসা নেবেন। কিন্তু ঘরটির মায়ায় পড়ে ছাড়া হয়নি।
এভাবে ৩২ বছর পার করার পর বাবুলের জীবনে নেমে আসে চরম এক দুঃসময়। সেই ঘর থেকে ডেকে নিয়ে সন্ত্রাসীরা তার প্রাণপ্রিয় ছেলে সুদীপ্ত বিশ্বাসকে নির্মমভাবে খুন করেছে। ঘরের সামনে সন্তানের মৃত্যুর চিহ্ন। ঘরজুড়ে, পুরো এলাকাজুড়ে সন্তানের স্মৃতিচিহ্ন।
পুত্রশোকে পাগলপ্রায় বাবুল ও তার স্ত্রী অবশেষে ছেড়েছেন ৩২ বছরের সেই ঠিকানা।
নগরীর সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়ায় ছোট একটি গলিপথ দিয়ে ঢুকে বেড়ার তিনটি ঘর। এর একটিতে পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বাবুল।
গত ৬ অক্টোবর সকালে নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্তকে বাসার সামনেই পিটিয়ে ও কুপিয়ে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। হাসপাতালে নেওয়ার পর সুদীপ্তকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
বাড়ির মালিকের স্ত্রী নীপা বিশ্বাস জানান, সুদীপ্তের হত্যাকাণ্ডের দিনই বাবুলের পরিবার বাসা ছেড়ে আত্মীয়ের বাসায় উঠেছেন। ছোট ছেলে কয়েকবার ওই বাসায় গেলেও বাবুল ও তার স্ত্রী আর যাননি। ১ নভেম্বর থেকে তারা বাসা ছেড়ে দিয়েছেন।
জানতে চাইলে কান্নায় ভেঙে পড়ে মেঘনাথ বিশ্বাস বাবুল বলেন, ওই ঘরে আমি আর যাইনি। ওই এলাকায়ও আমি আর যাইনি। সেখানে আমার আর যেতে ইচ্ছা করে না। যেখানে আমার ছেলে মরেছে, বেঁচে থাকতে কোনদিন আর সেখানে যাব না।
নতুন বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা জানিয়ে বাবুল বলেন, আমার ছোট ছেলে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। আমি একটা স্কুলে টেম্পরারি শিক্ষকতা করছি। টিউশনিও করি। প্রয়োজন না থাকলে এই শহর ছেড়েই চলে যেতাম। গ্রামে চলে যেতাম।