অথচ টিটু সাড়ে ৫ ঘন্টা আদালতে কঠোর পুলিশি প্রহরায় ছিলো। ওকালতনামায় সই না করাতে পেরে টিটুর জন্য আদালতে কোন আইনি কার্যক্রমে তার আইনজীবীরা অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
টিটুর আইনজীবী নরেশ চন্দ্র সরকার বলেছেন, টিটুকে নিয়ে পুলিশ অতিরিক্ত গোপনীয়তা করে তার সঙ্গে তার আইনজীবীদের দেখা করাই বন্ধ করে দিয়েছে। এদিকে যথা সময়ে টিটুকে দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়ে গেছে।
আদালতে টিটু স্বীকার করবে সে-ই তার প্রচন্ড ইসলাম বিদ্বেষ আর ঘৃণার কারণেই মুসলমানদের নবীকে নিয়ে পোস্ট দিয়েছিলো। আসলে স্বীকারোক্তি আদায়কারীদের চাহিদা মাফিক এক্ষেত্রে টিটুর স্বীকারোক্তিটা কি হতে পারে তা নির্ভর করছে। কর্তা যদি চান টিটুর পক্ষে কোন আইনজীবী আদালতে কাজ করতে পারবে না- তাহলে সেটাই হবে।
এদেশে রাজাকার গণহত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীরা আপিল করেছে রিভিউ করেছে, আর একজন টিটু রায় প্রথম তারজন্য কোন আইনজীবী পায়নি। কোন আইনজীবী তার জন্য দাঁড়াতে রাজি হয়নি। পরে সাতজন আইনজীবী দাঁড়ালেও তারা ওকালাতনামায় টিটুর সই-ই নিতে পারেনি!
ফেসবুকে অবমাননাকর স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার রংপুরের ঠাকুরপাড়ার টিটু রায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। রংপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলামের আদালতে জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডিবি পুলিশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে টিটু রায়ের আইনজীবী নরেশ চন্দ্র সরকার অভিযোগ করেছেন, টিটু রায়কে আদালতে হাজির করার ব্যাপারে পুলিশ অতিরিক্ত গোপনীয়তা অবলম্বন করায় তারা তার সঙ্গে দেখাই করতে পারেননি। ওকালতনামায় সই করাতে না পারায় আদালতে তার পক্ষে কোনও আইনি কার্যক্রমেও তারা অংশ নিতে পারেননি।
আট দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) আদালতে হাজির করা হয় টিটু রায়কে। বেলা ১১টার দিকে অত্যন্ত গোপনে সাদা রংয়ের একটি মাইক্রোবাসে করে টিটু রায়কে আদালতে নিয়ে আসা হয়। তাকে আদালত ভবনের চার তলায় একটি কক্ষে রাখা হয়। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে টিটু রায়কে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে প্রিজন ভ্যানে করে নিয়ে যায় পুলিশ। কিন্তু কেন এত গোপনীয়তা সে ব্যাপারে কর্মকর্তারা কিছু বলতে রাজি হননি।
এদিকে টিটু রায়ের পক্ষে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, পূজা উদযাপন পরিষদ, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে সাত সদস্যের আইনজীবী প্যানেলের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, টিটু রায়ের পক্ষে আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য ওকালতনামায় তার সই নিতে সকাল থেকে অপেক্ষা করার পরও দেখা করার সুযোগ পাননি। ফলে তারা আইনি সহায়তাও দিতে পারেননি। প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা আদালতে রাখার পর ডিবি পুলিশ কর্ডন করে টিটু রায়কে প্রিজন ভ্যানে তুলে নিয়ে দ্রুত চলে যান। এ সময় ডিবি পুলিশের ওসি শরীফুল ইসলাম বা কোর্ট ইন্সপেক্টর মনোজ কুমারের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করলেও তারা কোনও কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
এ ব্যাপারে টিটু রায়ের পক্ষের আইনজীবী নরেশ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘আমরা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, রংপুর জেলা পূজা উদযাপন কমিটি, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ব্লাস্টসহ কয়েকটি সংগঠন সাত সদস্যের আইনজীবী প্যানেল তৈরি করে তার পক্ষে আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য সকাল থেকে নিয়োজিত ছিলাম। আমরা টিটু রায়ের ওকালতনামায় স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সদর দরজার সামনে অপেক্ষা করেও তাকে পাইনি।
ফলে ওকালতনামায় তার স্বাক্ষর নেওয়া সম্ভব হয়নি। যেহেতু ওকালতনামায় তার স্বাক্ষর নেওয়া যায়নি তাই তার পক্ষে কোনও কার্যক্রমে অংশ নেওয়া যায়নি। আমাদের মনে হলো, যেহেতু ওপেন কোর্টে টিটু রায়কে পেলাম না, তাকে নিয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়েছে।’
অপরদিকে সাত সদস্যের আইনজীবী প্যানেলের আহ্ববায়ক ইন্দ্রজিত রায় অ্যাডভোকেট অভিযোগ করেন, ‘আসামির জামিন নেওয়ার যে বিধান, তার উকিল হিসেবে জামিনের আবেদন করার জন্য ওকালতনামায় স্বাক্ষর নিতে সকাল থেকে ধর্না দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তারপরও যা দেখলাম সংশ্লিষ্ট কোর্টে পুলিশের লোকজন ঘোরাঘুরি করছে। এতে আমাদের সন্দেহ হয়েছে আসামি টিটু রায়কে তারা আদালতে নিয়ে এসেছে। আমরা তার কোনও সন্ধান বা ওকালতনামায় স্বাক্ষর নেওয়ার সুযোগ পাইনি। কাউকে জিজ্ঞাসা করলে বলে জানি না।’
উল্লেখ্য ফেসবুকে বিতর্কিত স্ট্যাটাসের অভিযোগ তুলে গত ১০ নভেম্বর শুক্রবার টিটু রায়ের গ্রামের বাড়ি ঠাকুরপাড়ায় হামলা চালানো হয়।
পুলিশ জানায়, জুমার নামাজের পর আশেপাশের ৬-৭টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ ঠাকুরপাড়া গ্রামে হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি চালালে ছয় জন আহত হন। পরে আহতদের একজন মারা যান। ওইদিন ঠাকুরপাড়ার অন্তত ৩০টি বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়, ভাঙচুর করা হয় ২০টি বাড়ি।
হামলাকারীরা বাড়িঘরের মালামাল, বাসনপত্র, গরু-ছাগলও লুট করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসী। পরে ১৪ নভেম্বর ভোরে নীলফামারীর জলঢাকার গোলনা ইউনিয়নের চিড়াভিজা গোলনা গ্রাম থেকে টিটু রায়কে গ্রেফতার করা হয়।