১১ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ রাত ১:১০
ব্রেকিং নিউজঃ
নগরীর ১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী শাহ্ আমিনের প্রচারণায়য় মূখরিত আলিগলি । নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করতে মহিলা শ্রমিক লীগের মতবিনিময় সভা আদিবাসী ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার “বিশ্বরেকর্ড গড়লো বাংলাদেশের গর্ব ঋতুরাজ ভৌমিক হৃদ্য” রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন মো. সাহাবুদ্দিন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বাংলাদেশ শাখার সিনিয়র সহ সভাপতি হলেন দেশ সম্পাদক সুমন হালদার বিশ্বে নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে যাচ্ছে ভারত : হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা আজ ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী দিবস । কৃত্বিতে খ্যাতি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একজন মুন্সী আব্দুল মাজেদঃ ঝুমন দাশের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে প্রশ্ন : এক হিন্দুকে বাদী করতে চেয়েছিলেন শাল্লার ওসি

অটোরিক্সা বর্জন কি যৌক্তিক সমাধান?

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২৩, ২০১৭,
  • 641 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অটোরিক্সা চালক ও মালিকদের ধর্মঘটের বিষয়টি নিয়ে বেশ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। সাংবাদিক আনিস আলমগীর লিখেছেন, ‘প্রসঙ্গ সিএনজি ধর্মঘট : চালকের চারপাশে লোহার খাঁচা না থাকলে প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় গণ্ডার গণ্ডায় সিএনজিওয়ালা ‌প্যাসেঞ্জারের মার খেতো!’ শ্রদ্ধাভাজন সাংবাদিক আনিস আলমগীরের স্ট্যাটাস পড়ে অটোরিক্সা সংক্রান্ত আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার না করে পারছি না। ১৪/১৫ বছর আগের কথা।

আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ঢাকার অটোরিক্সা তখন এমন খাঁচায় ঘেরা ছিলো না। আমি যাত্রাবাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসে ফিরছিলাম। যাত্রাবাড়ীর জ্যামে আমার অটোরিক্সার দুই পাশে দুই ছিনতাইকারী আর ড্রাইভারের দুই পাশে দুইজন এসে কিছু বুঝে উঠার আগেই চুপ করে বসে গেলো। মুহুর্তের মধ্যে তারা আমার পেটের মধ্যে ধারালো কিছু একটা চেপে ধরে মানিব্যাগে হাত দিলো।

আমি কোনো দিকে না তাকিয়ে শুধু পেছনের পকেটে হাত দিয়ে মানিব্যাগ চেপে ধরে আছি। আমার মানিব্যাগে তখন প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা ছিলো। ছাত্রজীবনে ওই সাড়ে তিন হাজার টাকা আমার কাছে অনেক কিছু। সেই টাকা বাঁচাতে আমি হঠাৎ করে বলে ফেললাম, ‘দেখেন ভাই আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, আমার কাছে তেমন কিছু নেই’, শুধু ওই কথা বলার পর ছিনতাইকারীরা আমার ট্যাক্সি থেকে নেমে দ্রুত পালিয়ে গেলো।

ঘটনা অলৌকিক হলেও সেই ঘটনার পর আমি অনুভব করলাম অটোরিক্সা মোটেও আর নিরাপদ বাহন নয়। যাত্রী এবং চালক উভয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে ঘটনার সপ্তাহখানেক পর প্রথম আলোতে একটি চিঠি লিখে আবেদন করেছিলাম, যেন ঢাকার অটোরিক্সায় যাত্রীদের সুরক্ষায় নিরাপত্তা দরজা লাগানো হয়। তার কিছুদিন পর খেয়াল করলাম অটোরিক্সায় খাঁচার মতো দরজার প্রচলন হয়েছে।

সেইদিন খুব আশ্বস্ত হয়েছিলাম, যাক অটোরিক্সায় নিরাপদে চলা যাবে। কিন্তু একযুগ পরে অনুভব করছি, চালকদের অত্যাচারে এই খাঁচা কেন বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আনিস আলমগীর হয়তো ঠিকই বলেছেন। এই খাঁচা না থাকলে রাজধানী ঢাকা শহরের কতজন অটোরিক্সা চালক যে প্রতিদিন সাধারণ পাবলিকের মার খেতো তার হিসেব থাকতো না।

অটোরিক্সা চালকরা আগামী ২৭ নভেম্বর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৪৮ ঘণ্টা এই ধর্মঘট পালনের ডাক দিয়েছেন। তাদের আট দফা দাবির মধ্যে একটি দাবি ‘উবার’ ও ‘পাঠাও’ এর মতো অ্যাপসভিত্তিক সেবা বন্ধ করতে হবে।

সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ঢাকা জেলা কমিটির সদস্য সচিব সাখাওয়াত হোসেন দুলাল গণমাধ্যমে বলেছেন, ১৫ বছরের পুরনো অটোরিক্সার চেসিস ও ইঞ্জিন প্রতিস্থাপনের পাশাপাশি মালিক সমিতি নেতারা বুয়েট, বিআরটিএ ও মন্ত্রণালয় থেকে অটোরিক্সার মেয়াদ বাড়ানোর নাম করে মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছেন।

ধারণা করি, সম্ভবত এই চাঁদা পরিশোধের জন্যই সিএনজি আর অটোরিক্সা মালিকরা বাড়তি টাকা নিচ্ছেন চালকদের কাছ থেকে আর চালকরা মালিকদের সেই চাঁদা পরিশোধ করতে সহায়তা করছে পাবলিকের পকেট কেটে। দিনের পর দিন সাধারণ যাত্রীরা সিএনজি ড্রাইভারদের এধরণের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে যখনই উবার ও পাঠাও এ অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে তখন সিএনজি আর অটো রিক্সাচালকদের ঘুম ভেঙ্গেছে।

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও ব্লগার আরিফ জেবতিক তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ঢাকা থেকে ৩ চাক্কার স্লো মুভিং সিএনজি! নামের খাঁচা উচ্ছেদের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হোন !’ এই অটোরিক্সা চালকদের দৌরাত্ম্য থেকে বাঁচতে আমি এখনো পর্যন্ত ফেইসবুকে একটা স্ট্যাটাসও দেখিনি কেউ একজন অটোরিক্সার পক্ষে কোনপ্রকার ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন।

তবে সবার এই প্রতিক্রিয়ার পেছনে মূল কারণ কিন্তু অটোরিক্সার বিরুদ্ধে নয়, অটোরিক্সার চালকদের দূর্ব্যবহারের বিরুদ্ধে। তাদের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে। ব্যক্তিগতভাবে আমিও চাই না রিক্সা কিংবা অটোরিক্সার মতো আমাদের এই ঐতিহ্যগুলো আমরা হারিয়ে ফেলি। রিক্সা বা অটোরিক্সা আমাদের নাগরিক জীবনে অস্বস্তি বা দূর্ভোগ সৃষ্টি করে অনিয়মের কারণে, শৃঙ্খলার অভাবে।

মিটারে যেতে অনাগ্রহ প্রকাশের কারণে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত যানবাহন ব্যবহার, ট্রাফিক সিগনাল না মানা, সড়কে অহেতুক প্রতিযোগিতায় নামা, অটোরিক্সা নিয়ে পথচারিদের ফুটপাথের আইল্যান্ডে উঠে যাওয়া, ট্রাফিক সিগনাল না মেনে ইঁদুরের মতো গর্ত খুঁজে ছুটে চলা। এছাড়াও ফিটনেস বিহীন বা মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন যে কোন দূর্ঘটনা আর বিশৃঙ্খলার কারণ।

অটোরিক্সা মালিকদের বাড়তি চাঁদার যোগান দিতে যাত্রীদের পকেট কাটার কোনো অধিকার নেই। যাত্রীদের কাছে এখন ভিন্ন অপশন রয়েছে। যাত্রীরা যদি মনে করেন উবার ও পাঠাও এর মতো সার্ভিসে তারা সন্তুষ্ট তাহলে তারা কেন সিএনজি ও অটোরিক্সা শ্রমিকদের এই দূর্ব্যবহার সহ্য করে এসব যানবাহনে ভ্রমন করবেন?

ব্যবসায় মনোপলি করেছে এতোদিন অটোরিক্সা আর সিএনজি এখন যাত্রীদের কাছে যেহেতু ভালো অপশন রয়েছে তাহলে তারা সাশ্রয়ী মাধ্যমটিই বেছে নেবে। এখানে ধর্মঘট ডেকে গ্রাহক আকৃষ্ট করা যাবে বলে মনে করি না।

শ্রমিক নেতাদের ধর্মঘট না করে বর‍ং যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত, অটোরিক্সা শ্রমিকরা সাধারণ যাত্রীদের সাথে দূর্ব্যবহার করবেন না, যাত্রীদের পছন্দের গন্তব্য যেতে বাধ্য থাকবেন এই নিশ্চয়তা তাদের মুখ থেকে না বের হলে এই বাহন রাজধানীতে আর টিকিয়ে রাখা যাবে না।

এমন অভিযোগও রয়েছে সিএনজি ও অটোরিক্সায় নারী যাত্রীরা একা ভ্রমন করতে নিরাপদ বোধ করেন না। খোদ ড্রাইভার নারী যাত্রীদের সাথে নানা কায়দায় যৌন হয়রানি করে থাকেন। গল্প করার জন্য অপেক্ষাকৃত নির্জন ও বাড়তি রাস্তা ঘুরিয়ে গন্তব্যে নিয়ে যেতে চান। উইন্ড ভিউ মিররে সিএনজি চালক পেছনের গাড়ি না দেখে নারী যাত্রীর দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকিয়ে নানা ইশারায় তার যৌন বাসনা প্রকাশ করতে থাকেন।

যাত্রীদের এইসব ভীতি কাটিয়ে উঠার পরিস্কার দিক নির্দেশনা থাকতে হবে সিএনজি কিংবা অটোরিক্সা মালিক ও শ্রমিকদের। যাত্রীদের কেউ কেউ আবার অটোরিক্সাকে তাদের বেডরুম বানিয়ে প্রেমলীলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন, অটোরিক্সা বা সিএনজি চালকদের সাথে দূর্ব্যবহার করেন। যাত্রীদের অনেকেরই একটা ধারণা, সব সিএনজি চালকরাই অশিক্ষিত।

ঢাকায় সিএনজি ড্রাইভার শব্দটা অনেকটা গালিতে পরিণত হয়েছে। তাই যাত্রী ও চালক উভয় পক্ষ থেকে একটা গ্রহণযোগ্য নীতিমালার মধ্যে আসতে না পারলে এই পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যাবে না। রাজধানী ঢাকার প্রতিটি সিএনজির গায়ে অভিযোগের যে টেলিফোন নম্বরটি রয়েছে, সেখানে নিশ্চয় গত কয়েক বছরে অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সেই অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে সিএনজি মালিক ও চালকদের সাথে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অপরাধীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

তবে তাৎক্ষণিক সমাধান হতে পারে, সিএনজি ও অটোরিক্সা মালিকরা তাদের এই সার্ভিসটি উবার ও পাঠাও এর মতো অ্যাপসভিত্তিক সেবার আওতায় নিয়ে আসতে পারেন। তাহলে তারা যে যাত্রীসেবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল সেটি প্রমাণিত হবে। আমরা যারা বিদেশে উবার ব্যবহার করি তারা দেখেছি উবার কল করলে নির্দিষ্ট গাড়ি পছন্দ করে দেওয়ার সুযোগ থাকে।

যাত্রী তার সামর্থ্য ও চাহিদা অনুযায়ী গাড়ি পছন্দ করতে পারেন। সিএনজি ও অটোরিক্সা যদি নিজেদের অ্যাপসভিত্তিক সেবা চালু করতে না পারে তাহলে তারা উবার ও পাঠাও সার্ভিস গুলোর সাথে নিজেদের যুক্ত করে নিতে পারে। তবে আদৌ উবার বা পাঠাও তাদের সার্ভিসে এতো নিম্ন মানের ফিটনেসবিহীন অটোরিক্সা যুক্ত করবে কিনা সেটিও প্রশ্নসাপেক্ষ।

যদি যুক্ত করা সম্ভব হয় তাহলে উবার বা পাঠাওয়ে বাহন সিলেকশনে একটা অপশন থাকবে সিএনজি বা অটোরিক্সা। যাত্রীরা তাদের ইচ্ছে হলে যেন সিএনজি ও অটোরিক্সাও পছন্দ করতে পারেন সেই অপশনটি থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো সিএনজি ও অটোরিক্সা চালকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে রাজধানীর জন্য প্রস্তুত করার দৃশ্যমান কোন চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি।

যাত্রীসেবা ও তাদের সাথে ব্যবহারের ধরণ কেমন হবে এ বিষয়ে বিশেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ব্যক্তিদেরকেই লাইসেন্সের জন্য যোগ্য করে গড়ে তুলতে না পারলে এই সেক্টরে আস্থা ফেরানো দূরূহ হবে। এছাড়াও আমাদের একটা ধারণা হয়ে গেছে অটোরিক্সা কিংবা ট্যাক্সিক্যাব বুঝি অশিক্ষিত বা স্বল্প শিক্ষিত নাগরিকের পেশা। কিন্তু উন্নত দেশে উবার কিংবা ট্যাক্সি চালকদের অনেকেই উচ্চশিক্ষিত প্রফেশনাল।

চাকুরির পাশাপাশি অনেকেই তাদের বাড়তি খরচ যোগাতে পার্টটাইম ট্যাক্সি বা উবারে ড্রাইভিং করছেন। নব্বই-এর দশকের শেষের দিকে ঢাকায় যে সকল শিক্ষিত তরুণ ইয়েলো ক্যাবের উদ্যোক্তা ছিলেন তাদের একজন মোহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমান। সাজ্জাদুর রহমান সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন ব্যবসায়িক কাজে। সেখানে গিয়ে তিনি যে ট্যাক্সিটি ব্যবহার করেছিলেন তার ড্রাইভার ছিলেন পেশায় উকিল।

দেশে ফিরে এসে নিজে উৎসাহিত হয়ে ইয়েলো ক্যাব কোম্পানি খুলে চাকুরির পাশাপাশি ক্যাবিং শুরু করেছিলেন। তিনিও মনে করেন সিএনজি, অটোট্যাক্সি বা ট্যাক্সি ক্যাবিং পেশায় শিক্ষিত তরুণদের সম্পৃক্ত হওয়া উচিত। সাজ্জাদুর রহমান ঢাকায় ‘স্ক্রাব ইয়ার্ডের’ প্রয়োজনীয়তার কথা বললেন।

বাংলাদেশে স্ক্রাব ইয়ার্ড না থাকার কারণে পুরনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়িগুলো ধ্বংস না করে এসব গাড়ির পুরনো পার্টস বা যন্ত্রাংশ রি-ইউজ হচ্ছে। ধোলাইখালে বডি চেইঞ্জ করে নতুন মোড়ক দেওয়া হচ্ছে। তাই পুরনো গাড়িগুলো আবারো সড়কে ফিরে আসছে নতুন ভাবে।

বাজারে কোনকিছুর মনোপলি ভাল নয়, মনোপলির কারণেই সিএনজি চালকরা সড়কের বিধাতা বনে গিয়েছিলেন। উবার আর পাঠাও এসে সিএনজি অটোরিক্সা চালকদের স্বর্গ থেকে ধরণীতে ফিরিয়ে এনেছে। এটা খুবই ইতিবাচক। এখন সিএনজি ও অটোরিক্সা চালকরা যদি যাত্রীসেবার মনোভাব নিয়ে রাস্তায় নামে তাহলে আবারো যাত্রীরা তাদের গ্রহণ করবে।

তবে সিএনজি বা অটোরিক্সা নিষিদ্ধ করা কোনভাবেই যৌক্তিক সমাধান নয়। প্রয়োজনে  সিএনজি ও অটোরিক্সার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, ফিটনেসবিহীন গাড়ী চলার উপর নিষেধাজ্ঞা, লাইসেন্স প্রদানে কঠোর নজরদারি করতে পারলে সিএনজি ও অটোরিক্সা চালকদের লেজ হয়তো সোজা হলেও হতে পারে।

এত নেতিবাচক মনোভাবের পরও আমি মনে করি রিক্সা, অটোরিক্সা, সিএনজি আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। বেবীট্যাক্সি আর রিক্সাকে আমরা যেন একদম জাদুঘরে পাঠিয়ে না দেই। আমাদের মধ্যে যেন সেই চেষ্টাটা থাকে। এই যানবাহনগুলো আমাদের সংস্কৃতির অনেক বড় একটা অংশ। দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের শিল্প কারখানাগুলোকে সমৃদ্ধ করার সুযোগটা যেন আমরা নষ্ট করে না ফেলি।

অটোরিক্সার পার্টস বা যন্ত্রাংশ আমাদের দেশে তৈরি হলে আমাদেরই লাভ। যদিও অধিকাংশ অটোরিক্সাই আসছে ভারত থেকে। ভারত থেকে যন্ত্রাংশ কিনে আমাদের দেশে যদি কাঠামোটি তৈরি করা যায় তাতেও দেশে একটা ইন্ডাষ্ট্রি তৈরি হবার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। মনে আছে ৮০’র দশকে আমাদের দেশের বিআরটিসির বাসের সামনে লেখা থাকতো ‘প্রগতির তৈরি’।

‘প্রগতি’ গাড়ির কাঠামো তৈরি করতো আমাদের দেশে। নব্বই’র দশকে এসে আমরা ‘প্রগতি’কে জাদুঘরে পাঠিয়ে দিয়েছি। তাই অটোরিক্সা বা সিএনজিকে জাদুঘরে পাঠিয়ে না দিয়ে তাদের একটা নিয়মের মধ্যে আনতে পারার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে আমাদের। লন্ডনের সব রাস্তায় রিক্সা বা ঘোড়ার গাড়ি চলে না।

তবে ওয়েস্টমিনস্টার বা অক্সফোর্ড স্ট্রিটে রিক্সায় চড়া এখন পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম মাধ্যম। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড বা লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আর যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলেও লন্ডনের রাস্তায় এখনো ঘোড়ায় চড়া টহল পুলিশের দৃশ্য চোখে পড়বে।

তেমনিভাবে উবার যখন লন্ডনের রাস্তায় নেমেছিলো তখন লন্ডনের ব্ল্যাক ক্যাব ড্রাইভাররাও ক্ষেপে গিয়েছিলো, উবার বন্ধের দাবিও উঠেছিলো। উবারের চাপে ব্ল্যাক ক্যাবের ব্যবসায় অনেকটা ধ্বস নেমেছিলো। শেষ পর্যন্ত উবারকে লন্ডনে ঠেকানো যায়নি।

অটোরিক্সাকে তাই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে যেমন সেবার মান বাড়াতে হবে তেমনি চালকদের  দৌরাত্ম কমাতে অটোরিক্সা বন্ধ বা নিষিদ্ধ করাও কোন যৌক্তিক সমাধান নয়।

তানভীর আহমেদ: যুক্তরাজ্যের চ্যানেল এস টেলিভিশনের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর ও একাত্তর টেলিভিশনের যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »