৩০শে মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ রাত ৪:৫৯
ব্রেকিং নিউজঃ
আদিবাসী ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার “বিশ্বরেকর্ড গড়লো বাংলাদেশের গর্ব ঋতুরাজ ভৌমিক হৃদ্য” রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন মো. সাহাবুদ্দিন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বাংলাদেশ শাখার সিনিয়র সহ সভাপতি হলেন দেশ সম্পাদক সুমন হালদার বিশ্বে নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে যাচ্ছে ভারত : হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা আজ ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী দিবস । কৃত্বিতে খ্যাতি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একজন মুন্সী আব্দুল মাজেদঃ ঝুমন দাশের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে প্রশ্ন : এক হিন্দুকে বাদী করতে চেয়েছিলেন শাল্লার ওসি আফগানিস্থানে শিক্ষাকেন্দ্রে আত্মঘাতী হামলা : নিহত ১৯ টাঙ্গাইলের মধুপুরে হিন্দু যুবককে কুপিয়ে আহত করে জাহেদুল

বাঙালি হিন্দু সমাজে ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য বর্ণের অনুপস্থিতির ফলাফল♪ব্রাত্যজনের দর্শন ০৪ :

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ রবিবার, ডিসেম্বর ৩, ২০১৭,
  • 1532 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

লেখকঃ ভানুলাল দাস
——————————————————————
বাঙালি হিন্দু সমাজে ব্রাহ্মণ ভিন্ন অন্য দুই দ্বিজবর্ণ ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের উপস্থিতি প্রায় নেই বললেই চলে।
ইতিহাসে আছে যে, দাক্ষিণেত্যের ব্রাহ্মণ বিজয় সেন ছিলেন পাল রাজার সেনাপতি। তিনি সুযোগ বুঝে বৌদ্ধ পাল রাজাকে উৎখাত করে বঙ্গের রাজক্ষমতা দখল করেন। সেন বংশের রাজারা বুদ্ধধর্মের মাঝে বিলিয়মান সনাতন হিন্দুধর্মকে পূনপ্রতিষ্ঠা করেন। সেন রাজাদের দাপটে বৌদ্ধরা হিন্দুধর্মে ফেরত আসে। ফেরত আসা বৌদ্ধরা হিন্দুধর্মে ঠাঁই পেলেন ঠিকই, কিন্তু কুলমান পায়নি। সবাই শুদ্রবর্ণে জায়গা পেয়েছেন। এমন কি উচ্চতর শুদ্র বর্ণশঙ্করেও স্থান পায়নি কনভার্টেড বৌদ্ধরা।
বিজয় সেনের উত্তর পুরুষ লক্ষণ সেন, যিনি মুসলিম বিজয়ী বখতিয়ার খিলজির তাড়া খেয়ে গৌড় ছেড়ে পূর্ববঙ্গের বিক্রমপুরে রাজধানী স্থানান্তরিত করেছিলেন।
বৌদ্ধ পাল রাজার রাজত্বে জাতপাতের বালাই ছিল না। ব্রাহ্মণ বিজয় সেন জাতপাতের একটা বিহিত করবেন বলে মনস্থ করেন, কিন্তু তার জীবদ্দশায় কিছু করা হয়ে উঠেনি। নিকৃষ্ট না থাকলে কেউ শ্রেষ্ট হতে পারে না। কোন জাত যখন নিজেকে উচ্চ বলে দাবি করে, তার মানে সেখানে কোন নিম্ন জাত থাকতে হবে। নতুবা শ্রেষ্ট বা উৎকৃষ্টতার কোনো মানে থাকে না।

বিজয় সেনের পুত্র বল্লাল সেন(বারো শতকে) দেখলেন, পান্ডব বর্জিত বঙ্গে শুদ্র ও বর্ণশংকর শুদ্রে ভরপুর। অন্য দুই দ্বিজবর্ণের মানুষজন তেমন নাই। এমন পরিবেশে, রাজকার্য পরিচালনার জন্য শুদ্রের সংস্পর্শ এড়ানো প্রায় অসম্ভব। রাজকর্মচারী, পরিচারিকা, সেবাকর্ম ইত্যাদি শুদ্র ব্যতিত চলছিল না।

এ অবস্থায় সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন শুদ্রদের মধ্যে বিভাজন করে কতিপয় শুদ্র বর্ণ সংকরকে মহিমান্বিত করেন। মূলত ব্রাহ্মণ জাতির শ্রেষ্টত্ব রক্ষা করে এবং অনার্যদের হীনতর রেখে।
বল্লাল সেন দক্ষিণ ভারত থেকে বহু পন্ডিত ব্রাহ্মণ এনে বিরাট এক হুমযজ্ঞ করান (দেখুন আর সি মজুমদারের বাংলার ইতিহাস, ১ম খন্ড) এবং উক্ত যজ্ঞে তিনি রাজকর্মচারী, খাজাঞ্চী ও অত্যাবশ্যক সেবাদানকারী শুদ্রদের উত্তম এবং অন্যান্যদের মধ্যম ও অধম সংকর হিসেবে অখ্যায়িত করেন। শুদ্রদের বিভাজনের মূলসূত্র হচ্ছে, জলছোঁয়া ও জল-না-ছোঁয়া। যে সকল শুদ্রের হাতের ছোঁয়া জল বর্ণশ্রেষ্ট ব্রাহ্মণ পান করতে রাজি, তারা জলছোঁয়া উচ্চ জাত, আর অন্যরা হল জল-না-ছোঁয়া নিচু জাত। শুদ্রদের
জলছোঁয়া জাতি ও জল-না-ছোঁয়া জাতি ইত্যকার হাস্যকর এই বিভাজন করা হয়।

ভারতের অন্যান্য প্রদেশে যেমন ব্রাহ্মণের সহযোগী হিসেবে ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের ভূমিকা ছিল, তথাকথিত জলছোঁয়া শুদ্ররা বাংলাদেশে সেই ভূমিকা পালন করেন। ব্রাহ্মণ সেন রাজাদের সক্রিয় সহযোগী হিসেবে কায়স্থ, বৈদ্যসহ উত্তম সংকররা আবির্ভূত হয় । তথাকথিত উত্তম সংকররা হল জলছোঁয়া জাত এবং শ্রোত্রীয় ব্রাহ্মণ হলেন এদের পুরোহিত। এভাবে সেন রাজারা ব্রাহ্মণ্যবাদকে রক্ষা করে এক ঢিলে দুই পাখি নয়, অনেক পাখি মেরেছেন।
(ক) জলছোঁয়া ও জল-ছোঁয়া-নয়, এই দুই বড় দাগে শুদ্রদের বিভক্ত করে সংখ্যাগরিষ্ট শুদ্রদের ঐক্যের মূলে কুঠারাঘাত করা সম্ভব হয়েছে।

(খ) ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য এই দুই দ্বিজ জাতির অনুপস্থিতিতে শুদ্রের একটি অংশকে কায়স্থ ও বৈদ্য নাম দিয়ে শাসক ব্রাহ্মণদের দোসর হিসেবে পাওয়া গেল।

(গ) বিভাজনের মাধ্যমে শুদ্রদের কতিপয় বর্ণসংকরকে আর্থ-সামাজিক সুবিধা প্রদান করে শুদ্রের আধ্যাত্মিক ও আর্থ-সামাজিক অধিকার
স্বীকার করে নেয়া হয়েছে মর্মে, একটি মিথ্যা ধারণা দেয়া সম্ভব হয়েছে।

(ঘ) শুদ্রের মধ্যে মর্যাদার দিক থেকে কৃত্রিম বিভাজন সম্ভব হয়েছে। ব্রাহ্মণ যে বর্ণ সংকরের হাতে জল খেতে পারবে তারা উচ্চ বর্ণসংকর বা জলছোঁয়া, এমন কান্ডকারখানা ‘ছেলের হাতে মোয়া’ দিয়ে শুদ্রদের একাংশকে বোকা বানানো ছাড়া কিছুই নয়।

কতিপয় বর্ণসংকরকে অনিবার্য সামাজিক ও ব্যবহারিক প্রয়োজনে জলছোঁয়ার মর্যাদা দিতে হয়েছে। মনুর অনুলোম প্রতিলোম নীতি এক্ষেত্রে মানা হয়নি।
১. কায়স্থ : গুহ, মিত্র, বোস, ঘোষ, দত্ত ইত্যাদি শুদ্ররা করণ বা কায়স্থ। এরা রাজকার্য পরিচালনা খাজনা আদায়, খাজাঞ্চীগিরি করতো আর এদের সাহায্য ব্যতিত রাজত্ব ঠিকমতো চলে না। এজন্য এরা জলছোঁয়া হয়েছে।

২. শীল : দাঁড়ি-গোফ কামানোর সময় যেহেতু ব্রাহ্মণের মুখে জল ঢুকে যেতে পারে, তাই নরসুন্দররা জল ছোঁয়া জাতি।

৩. কর্মকার : লোহা-লক্কর দ্বারা দা, কুড়াল, অস্ত্র, লাঙ্গলের ফলা ইত্যাদি তৈরি করা এদের কাজ এবং ঐগুলো না হলেই নয়। তাই এদের জলছোঁয়া করা হয়েছে।

৪. বারুজীবী : পান বিক্রি করা এদের জীবিকা এবং পানে জল লেগে থাকে। তাই জলছোঁয়া না করলে ব্রাহ্মণ পানিসিক্ত পান খেলে জাতিভ্রষ্ট হবে। তাই এদের জলছোঁয়া করা হয়েছে।

৫. কুম্ভকার : মাটির হাড়িতে সেকালে ভাত, তরকারি রান্না করা ছাড়া অন্য উপায় ছিল না। এদের ব্যতিত সমাজ অচল। তাই জল ছোঁয়া করা হয়েছে।

৬. বৈদ্য : এরা চিকিৎসা করতো। বৈদ্য ছাড়া ব্রাহ্মণেরও চলে না। অসুখ বিসুখ জাতপাত চিনে না। ব্রাহ্মণদের ব্রহ্মতেজও রোগমুক্তি দিতে পারে না। বৈদ্য তাই জলছোঁয়া।

৭. একই রকম কারণে মালাকার, গন্ধবণিক, মোদক ইত্যকার জাতিকে জলছোঁয়া করা হয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »