আজ ১০ অক্টোবর, ১৯৪৬ সালের আজকের দিনেই নোয়াখালীতে হিন্দু নিধন শুরু করে মুসলিমরা। যা চলে টানা ১৫ দিন। অক্টবর ১০, নোয়াখালী – ১৯৪৬ সাল।
সেদিন ছিল কোজাগরী লক্ষীপূজা, সমগ্র বাংলার হিন্দুরা ছিলেন মাতা লক্ষীর আরাধনায় রত, চতুর্দিক ছিল চন্দ্রালোকে উদ্ভাসিত – অবিভক্ত বঙ্গ র দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত নোয়াখালী জেলার অতীব সংখ্যালঘু হিন্দু অধিবাসীরাও ছিলেন পুজার্চনায় ব্যস্ত। অকস্মাৎ রাত্রি র নিস্তব্ধতা খান খান করে ধেয়ে এলো কাশেম র ফৌজ, মুসলিম লীগ র নোয়াখালী অঞ্চলের নেতা কাশেম আলী র আদেশে। সঙ্গত দিল গোলাম সারওয়ার র নিজস্ব বাহিনী।
উদ্দেশ্য – হিন্দু বিনাশ। কয়েকমাস ধরে কলকাতায় যে হত্যাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়েছিল, ১৬ ই আগস্ট, ১৯৪৬ – যা শুরু হয়েছিল মুসলমান র নৃশংসতম আক্রমণে কিন্তু শেষ হয়েছিল হিন্দুদের ভয়াল, ভয়ঙ্কর প্রত্যুত্তরে – তার প্রতিশোধ র বন্য আকাঙ্খায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ইসলামিক নেতৃত্ব। মুহূর্ত র মধ্যে নোয়াখালী জেলার রামগঞ্জ, বেগমগঞ্জ, রায়পুর, লক্ষীপুর, ছাগলনাইয়া, স্বন্দীপ অঞ্চলগুলি হল চরমতমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। পার্শ্ববর্তী টিপেরা জেলার হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর , লক্ষম ও চৌদ্দগ্রাম অঞ্চলগুলো হয়ে উঠলো উপদ্রুত। এক perfect planning র সাহায্যে Hindu racial extermination র পরিকল্পনা execute করা হল।
এক সার্বিক হিন্দু গণহত্যা র দরুণ কতজন যে প্রাণ হারালেন, কত হিন্দু নারী হলেন ধর্ষিতা, কতজন কে জোর করে গরুর মাংস খাওয়ানো হল, কতজন পুরুষকে জোর করে সুন্নত করিয়ে মেরে ফেলা হল, কতজন হিন্দু নারীকে গণধর্ষণ করে পা দিয়ে তাঁদের মাথার সিঁদুর ডলে দেওয়া হল, কতজন চিরতরে হারিয়ে গেলেন, কতজন হিন্দু নারী এক লহমায় গৃহবধূ থেকে বেশ্যায় রূপান্তরিত হলেন তার হিসেবে গত ৭০ বছরেও পাওয়া জানি। একটি hypothetical figure দেওয়া হয় মাত্র।
১৯৪৬ সালের অক্টোবর মাসের ১০ তারিখ কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার দিন। নোয়াখালীর হিন্দুরা বাড়িতে পূজার আয়োজনে ব্যস্ত। অন্যদিকে মুসলিম লীগ নেতা-কর্মীরা প্রচার করে যে, শিখ সম্প্রদায় দিয়ারা শরীফ আক্রমণ করেছে। গুজবের ফলে আশে পাশের এলাকার মুসলিমরা দলে দলে দিয়ারা শরিফে জড় হয়। গোলাম সরোয়ার হুসেনি সমবেত মুসলিমদেরকে সাহাপুর বাজার আক্রমণ করতে নির্দেশ দেয়। কাশেম নামের আরেকজন মুসলিম লীগ নেতাও তার নিজস্ব বাহিনী নিয়ে সাহাপুর বাজারে পোঁছায়, যাদেরকে কাশেমের ফৌজ বলা হত।
কাশেমের ফৌজ নারায়ণপুর থেকে সুরেন্দ্রনাথ বসুর ‘জামিনদার অফিসের’ দিকে এগিয়ে যায়। কল্যাননগর থেকে আসা আরেকদল দাঙ্গাবাজ মুসলিম দল কাশেমের ফৌজের সাথে যোগ দেয়। এদের সাথে আরও অনেক ভাড়া করে আনা মুসলিম গুণ্ডারা জামিনদার অফিসে আক্রমণ করে। সামান্য প্রতিরোধের পরই সুরেন্দ্রনাথ বসু ধারাল অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মক ভাবে আহত হন। মুসলিম জনতা হাত-পা বেধে তাকে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে। সুরেন্দ্রনাথ বসুকে মুসলিমরা আক্রমণ করেছে শুনতে পেয়ে পাশের পাঁচঘরিয়া গ্রামের ডাক্তার রাজকুমার পাল তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। কিন্তু পথিমধ্যে তাকে মুসলিম দুর্বৃত্তরা ছুরিকাহত করে।
নোয়াখালী জেলার রামগঞ্জ পুলিশ স্টেশনের অন্তর্গত সোনাচাকা গ্রামের অধিবাসী রায়পুর উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ের হেড পণ্ডিত শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী ঠাকুর(কাব্যতীর্থ) একটি হলফনামায় উল্লেখ করেন,১০ অক্টোবর রায়পুর ও রামগঞ্জে লুণ্ঠন,হত্যা,অগ্নিকাণ্ড শুরু হয়।১৪ অক্টোবরে রায়গঞ্জ বাজার সংলগ্ন গ্রামগুলোতে অগ্নিকাণ্ড দেখতে পেয়ে প্রায় দুইশত নরনারী স্থানীয় থানায় আশ্রয় নেয়।সংগঠিত মুসলিম জনতা এসময় রায়পুরের সকল দেবদেবীর বিগ্রহ ভেঙ্গে ফেলে,মন্দিরগুলো ধ্বংস করে এবং হিন্দু দোকান-বাড়িঘর লুটকরে থানায় প্রবেশ করে।থানার মুসলিম দারোগা সব হিন্দু পুরুষকে থানা থেকে জোর করে বের করে দেয়।উন্মত্ত মুসলিম জনতা এসময় তাদেরকে তীব্রভাবে প্রহার করে স্থানীয় বড় মসজিদে নিয়ে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে এবং গো-মাংস খেতে বাধ্য করে।
স্থানীয় খ্যাতনামা ব্যবসায়ী নবদ্বীপচন্দ্র নাথ থানা থেকে বের হতে শেষ পর্যন্ত অস্বীকৃতি জানালে, মুসলিমরা তাকে থানার ভিতর থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে নিয়ে যায়।তাকে সেখানেই প্রকাশ্যে নৃশংস ভাবে প্রহার ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে এবং মৃতদেহ রশিতে বেঁধে টানতে টানতে উত্তর দিকে নিয়ে যায়।
অক্টোবর মাসের ১১ তারিখে গোলাম সরোয়ারের ব্যক্তিগত বাহিনী ‘মিঞার ফৌজ’ নোয়াখালী বার এ্যাসোসিয়েশন ও জেলা হিন্দু মহাসভার সভাপতি রাজেন্দ্রলাল রায়চৌধুরীর বসতবাড়িতে আক্রমণ করে। সে সময়ে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের স্বামী ত্রেম্বকানন্দ তার বাড়িতে অতিথি হিসেবে ছিলেন। রাজেন্দ্রলাল পুরোটা দিন তাঁর বাড়ির ছাদ থেকে রাইফেল নিয়ে আক্রমণ প্রতিহত করেন।