বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আবারও বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন আহসান হাবিব কামাল। পুনরায় মনোনয়ন পেতে তিনি লবিং তদবিরও চালিয়ে যাচ্ছেন বলে বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বুধবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকেও দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন কামাল। তবে বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপির বেশির ভাগ নেতাকর্মীই বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না। সুবিধাবাদী এই নেতাকে মনোনয়ন দিলে দলের লাভ হবে না শুধু মাত্র তার পকেট ভারি হবে বলে মনে করছেন অনেকে। বিএনপির লোকজন তার কাছে গিয়ে অপমানিতই হয়েছে বলেই শোনা যায় ।
জেলা যুবদলের সভাপতি অ্যাডভোকেট পারভেজ আকন বিপ্লব এবং মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান মামুন বলেন, নির্বাচনের প্রাক্কালে ২২টি প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিএনপির ঘাড়ে ভর করে মেয়র নির্বাচিত হন আহসান হাবিব কামাল। কিন্তু মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি দল ও দলের নেতাকর্মীদের এড়িয়ে চলেছেন। দুঃসময়ে দলের কোনো কর্মসূচিতে আসেননি তিনি। এমনকি বেগম খালেদা জিয়া কারান্তরীণ হওয়ার পরও দলে নিষ্ক্রিয় মেয়র কামাল। দল এড়িয়ে চললেও তিনি স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আতাত করে কয়েকজন ঠিকাদারকে নিয়ে সিটি কর্পোরেশনকে দুর্নীতির বাতিঘরে পরিণত করেছেন বলে দাবি করেন যুবদল নেতা বিপ্লব ও মামুন। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যান ফ্রন্ট বরিশাল মহানগর সভাপতি সুমন হালদার আশীস বলেন মেয়র কামাল একজন সু্’চতুর ধান্ধাবাজ লোক ওনাকে কেউ ভোট দেয়নী বিএনপির লোক ভোট দিয়েছে এ্যাডঃ মজিবর রহমান সরোয়ারের কথায় উনি দু হাজার ভোট পেত না এ্যাডঃ মজিবর রহমান সরোয়ার ওনার সাথে না থাকলে । এবার কমাল মানুষের কাছে ভোট চাইলে ঝাড়ু পেটা করবে ,বরিশাল নগরীকে একটা অন্ধ কুপ বানিয়েছে বরিশালের হিন্দুদের শশ্বানের জায়গা টাকার বিনিময়ে লিজ দিয়েছ ।লজ্জা থাকলে আর এ পথে আসা উচিৎ না । এই ক্রন্তি লগ্নে এ্যাডঃ মজিবর রহমান সরোয়ার ছারা কেউ প্রার্থী হলে বরিশালে মেয়র হারাবে বিএনপি ।
দলের একটি সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ১৫ জুনের নির্বাচনে মেয়র কামালকে বিজয়ী করতে তখন সব ভেদাভেদ ভুলে নানা প্রতিকূলতার মাঝেও কাজ করে গেছেন নেতাকর্মীরা। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শওকত হোসেন হিরনকে প্রায় ১৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় নির্বাচিত মেয়র হন কামাল। ওই বছর ৮ অক্টোবর মহাসমারোহে দায়িত্বগ্রহণ করেন তিনি। বিএনপির ঘাড়ে ভর করে মেয়র নির্বাচিত হলেও ক্ষমতা পেয়ে বদলে যান মেয়র। গত ৫ বছরে বেড়েছে শুধু তার ধন সম্পদ। কোনো নেতাকর্মীরই খোঁজ-খবর নেননি মেয়র কামাল।
শুধু নেতাকর্মীর সঙ্গে নয়, কথা রাখেননি নগরবাসীর সঙ্গেও। ২০১৩ সালের ১৫ জুনের নির্বাচনের মাত্র ৬ দিন আগে নগরীর সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হলে বিএনপির এক ডজন কেন্দ্রীয়সহ স্থানীয় শতাধিক নেতার সামনে ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন আহসান হাবিব কামাল।
ইশতেহারে ছিল ভোলার গ্যাস বরিশালে এনে শিল্প নগরী গড়া, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত নগরী বিনির্মাণ, নগরীর প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসন, পরিকল্পিত নগরীতে রূপান্তর এবং দুর্নীতিমুক্ত নগর ভবন উপহার দেয়াসহ ২২ দফা প্রতিশ্রুতি। তবে গত ৫ বছরে মেয়র কামালের ক্ষমতা আমলে তার কোনো প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়ন হয়নি বলে বিভিন্ন মহলের দাবি।
বরিশাল বিভাগীয় শিক্ষক-কর্মচারী সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ও কলেজ শিক্ষক সমিতির বিভাগীয় সভাপতি এবং নগরীর ইসলামিয়া কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মহসিন-উল ইসলাম হাবুল বলেন, ভোলার গ্যাস এখন পর্যন্ত বরিশাল আসেনি, শিল্প নগরীও হয়নি। বরিশাল এখন পর্যন্ত মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত হয়নি। জলাবদ্ধতা আরও বেড়েছে। পরিকল্পিত নগরী বিনির্মাণ কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এখন দুর্নীতিতে সারা দেশের সেরা। কোনো প্রতিশ্রুতি পালন না করায় বিদায়ী মেয়র কামালকে বর্তমান মেয়াদে একেবারেই ব্যর্থ বলে উল্লেখ করেন শিক্ষক নেতা হাবুল। তবে তার কথাবার্তা কিংবা ব্যক্তিগত আচরণে কেউ সংক্ষুব্ধ হয়নি বলে দাবি অধ্যাপক হাবুলের।
বরিশালের ২৭টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের জোট সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ও প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এসএম ইকবাল বলেন, ভোলার গ্যাস বরিশালে এনে শিল্প নগরী গড়ার যে প্রতিশ্রুতি মেয়র কামাল দিয়েছিলেন, সেটা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তিনি মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিলেন। দুর্নীতিতে সিটি কর্পোরেশন এখন চ্যাম্পিয়ন। মেয়রের প্রচ্ছয়ে অন্ততপক্ষে ১০ থেকে ২০ জন কাউন্সিলর সরাসরি ঠিকাদারী কাজের সঙ্গে জড়িত। যেটা তারা আইনগতভাবে করতে পারেন না। জলাবদ্ধতা নিরসন হয়নি, বরং বেড়েছে। পরিকল্পিত নগরী গঠন ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত নগরীও তিনি উপহার দিতে পারেননি। এক কথায় তিনি কোনো প্রতিশ্রুতিই পূরণ করতে পারেননি। তিনি পুরোপুরি একজন ব্যর্থ মেয়র। তার ব্যর্থতার কারণে তাকে সমর্থন দেয়া বরিশাল বিএনপির ইমেজ সংকটে রয়েছে বলে মনে করেন সংস্কৃতিজন সিনিয়র সাংবাদিক এসএম ইকবাল।
বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ওবায়েদউল্লাহ সাজু বলেন, ২০১৩ সালের ১৫ জুনের ভোটের মাত্র ৬ দিন আগে ৯ জুন ২২ দফা ইশতেহার ঘোষণা করে ভোট চেয়েছিলেন বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল। বিএনপি ঘরানারসহ নগরবাসী তাকে ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করেছে। কিন্তু গত ৫ বছরে ২২ প্রতিশ্রুতির একটিও পূরণ করতে পারেননি মেয়র কামাল। তিনি নগরভবনকে দুর্নীতিমুক্ত করার কথা বলেছিলেন, কিন্তু নগর ভবন এখন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে কামালকে ব্যর্থ মেয়র উল্লেখ করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাজু। কামালকে মেয়র পদে সমর্থন দেয়া বিএনপির ঘাড়েও কামালের ব্যর্থতার দায়ভার চাপিয়েছেন তিনি।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আবারও প্রার্থী হবেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র আহসান হাবিব কামাল বলেন, দল চাইলে নির্বাচন করবো। তবে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হলে ভাবতে হবে।
সুশীল সমাজ নেতৃবৃন্দের সমালোচনার জবাবে মেয়র আহসান হাবিব কামাল বলেন, গত ৫ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে আধুনিক বরিশাল নগরী গড়েছি। গত ৫ বছরে প্রতিশ্রুতির চেয়েও বেশি উন্নয়ন করেছি। তারপরও তারা ব্যর্থ বলে। কারণ তারা অন্য দলের।
সুশীল সমাজ ছাড়াও বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সমালোচনার জবাবে মেয়র কামাল বলেন, বিএনপি একটি বিশাল দল। এই দলের সবার খোঁজ-খবর নেয়া যায় না। তারপরও যারা তার কাছে গিয়েছেন, তারা উপকৃত হয়েছেন বলে দাবি করেন বিদায়ী মেয়র আহসান হাবিব কামাল।