২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ সকাল ৭:৩১
ব্রেকিং নিউজঃ

সনাতন ধর্মাবলম্বী মা-মেয়েকে ধর্ষণ, মামলা তুলে নিতে হুমকি

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ শুক্রবার, জুন ২২, ২০১৮,
  • 589 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

 

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে পাল সম্প্রদায়ের বিধবা নারী ও তার কিশোরী কন্যাকে ধর্ষণের ঘটনার পাঁচদিন পর অবশেষে মারামারির মামলা নিল পুলিশ। এ ঘটনায় পাল সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ দানা বাঁধছে।

এদিকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবলীগ নেতা সুমনকে মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে কটিয়াদী মডেল থানার সামনে থেকে আটক করে র‌্যাব। এরপর তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। সুমনকে আটকের পর বুধবার রাতে মামলা নেয় পুলিশ। তবে ধর্ষণের ঘটনা আড়াল করে মারামারির মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে পুলিশ মামলা নিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এছাড়া মামলায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ছেলু মিয়াকে বাদ দিয়ে ধনু মিয়া ও তার ছেলে যুবলীগ নেতা সুমনসহ মোট চারজনকে আসামি দেখানো হয়েছে।

তবে পুলিশের দাবি, যেভাবে অভিযোগ পেয়েছে সেভাবেই মামলা রুজু করা হয়েছে। বুধবার বিকালে সুমনকে কিশোরগঞ্জের আদালতে সোপর্দ করা হলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এদিকে ধর্ষণের মামলা নেয়ার দাবিতে উপজেলার বনগ্রাম বাজারে বুধবার বিকালেও বিক্ষোভ মিছিল করেছে সচেতন নাগরিক সমাজ। এছাড়া প্রকৃত ঘটনা সামনে এনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের শরণাপন্ন হওয়ার পাশাপাশি মানববন্ধন ও সমাবেশের মতো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুমকি দিয়েছে পাল সম্প্রদায়ের লোকজন।

ভুক্তভোগী ওই নারীর অভিযোগ, পুলিশকে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের কথা জানালেও তাকে ফিজিক্যাল অ্যাসাল্টের রোগী দেখিয়ে ভর্তি করা হয় এবং তার মেয়েকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। টাকার বিনিময়ে ঘটনা মীমাংসার জন্য অভিযুক্তরা তাকে হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিধবার এক নিকটাত্মীয় ও এক আওয়ামী লীগ নেতা অভিযোগ করেন, শুরু থেকেই এ ঘটনায় মামলার জন্য থানায় গেলে ওসি সাহেব বলছিলেন, এ নিয়ে মামলা হলে সামাজিক সম্প্রীতিতে প্রভাব পড়বে। এ জন্য মামলা না করতে স্থানীয় নেতাদের চাপ আছে। যা হয়েছে, হয়েছে। এসব ভুলে যেতে হবে।

স্থানীয় ওই আওয়ামী লীগ নেতা আরও জানান, পুলিশ সোমবার রাতে ধর্ষণের ঘটনা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র বিধবা নারীকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগের একটি দরখাস্ত লিখিয়ে নেয়। এছাড়া অভিযোগপত্রে গৃহকর্তা ধনু মিয়ার ভাই ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছেলু মিয়ার নাম বাদ দেয়া। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের প্রয়োগ বাদ দিয়ে মিথ্যা মারামারি ঘটনা সাজিয়ে মামলা রুজু করা হয়। একই কায়দায় ধর্ষণের ঘটনা আড়াল করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও ভূমিকা পালন করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

অবশ্য, কটিয়াদী মডেল থানার ওসি জাকির রাব্বানী ও কটিয়াদী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তাজরিনা তৈয়ব এসব অভিযোগ অসত্য বলে দাবি করেছেন।

ওসি জাকির রাব্বানী বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি মারামারির মামলা হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনায় কেন মারামারির মামলা-জানতে চাইলে ওসি বলেন, যেভাবে অভিযোগ পেয়েছেন সেভাবেই মামলা রুজু করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির মানবাধিকার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জেসমিন আরা রোজি বলেন, একদিকে ধর্ষণের ঘটনা আড়াল করা হয়েছে, অন্যদিকে মা-মেয়েকে আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনাটিও পাল্টিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের পরিবর্তে মারামারির বিষয় উল্লেখ করে মামলা নেয়া কোনো অবস্থাতেই সমীচীন হয়নি। এটি ভুক্তভোগী ও নির্যাতিতের ওপর অবিচারও বটে।

কটিয়াদী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীলিপ চন্দ্র সাহা বলেন, প্রকৃত ঘটনাকে সম্পূর্ণ আড়াল করে পুলিশ নামমাত্র মামলা করায় তাদের সম্প্রদায়ের লোকজন সংক্ষুব্ধ। এ ঘটনায় তারা দুই এক দিনের মধ্যে মানববন্ধন ও সমাবেশ করার পাশাপাশি প্রকৃত ঘটনা সামনে এনে মামলা দায়েরের জন্য প্রশাসনের ওপর মহলের সঙ্গেও যোগাযোগ করবেন বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, চৌদ্দ বছর আগে সন্তানসম্ভবা অবস্থায় স্বামী মারা যাওয়ার পর অসহায় হয়ে পড়া কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ওই নারী জীবিকা নির্বাহ ও কন্যাসন্তানের ভবিষ্যতের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তায় মাটিকাটার কাজ করার পাশাপাশি পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতে থাকেন। বর্তমানে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া একমাত্র কন্যাসন্তানের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে সম্প্রতি একই গ্রামের ব্যবসায়ী ধনু মিয়া তার বাড়িতে কাজ দিয়ে আশ্রয়দাতা সাজেন। আর সেই সুযোগে এলাকার এ ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী পরিবারের লোকজনের কুদৃষ্টি পড়ে ওই চল্লিশোর্ধ্ব বিধবা নারী ও তার ১৪ বছরের কিশোরী মেয়ের ওপর। একপর্যায়ে ব্যবসায়ী ধনু মিয়া ও তার ভাই ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছেলু মিয়া ওই বিধবা গৃহপরিচারিকাকে এবং ধনু মিয়ার ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন মিয়া ওই বিধবার কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণ করে। পাশবিক নির্যাতনের এ ঘটনায় এলাকাবাসীকে বলে দেয়া এবং মামলা করার কথা বললে ওই বিধবা গৃহপরিচারিকাকে বাড়িতে আটকে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় চালানো হয় নির্যাতন। ওই নারীর শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গসহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে নিষ্ঠুর নির্যাতনের অসংখ্য ক্ষত। অবশেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে তাদের মুক্তি মেলে এবং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সূত্র- যুগান্ত

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »