২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ রাত ৯:২২
ব্রেকিং নিউজঃ

একজন রোমারিও-রোনালদোর খুব দরকার ব্রাজিলের

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ শুক্রবার, জুন ২২, ২০১৮,
  • 292 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

ভালো খেলা, দর্শক বিনোদন, মনোরঞ্জন আর প্রশংসার কোনই মূল্য নেই। দিন শেষে ফুটবল গোলের খেলা। গোলই সব। জয়-পরাজয়ের প্রতীক ‘গোল’। খারাপ খেলেও সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারলেই ব্যাস, জয়ের মালা গলায়। গোল দিতে পারলেই জয়ের দেখা মিলে। আর গোল করতে না পারার খেসারত- হার। এটাই চিরন্তন সত্য।

১৯৭৮, ১৯৮২, ১৯৮৬ আর ১৯৯০ সালে পরপর চার বিশ্বকাপে সে সত্য হারে হারে টের পেয়েছে ব্রাজিল। বিশেষ করে ৮২, ৮৬ আর ৯০- এই তিন আসরে সক্রেটিস, ফ্যালকাও, এডার, জিকো আর সারজিনহো, কারেকা-মুলারের ছন্দময় ফুটবল দেখে মুগ্ধ, মোহিত হয়েছেন কোটি কোটি ফুটবল অনুরাগি। কিন্তু অসাধারণ ছন্দময়, সৃজনশীল, সৃষ্টিশীল, শৈল্পিক ও নান্দনিক ফুটবল খেলেও শেষ হাসি হাসতে পারেনি ব্রাজিল।

১৯৮২ সালে ইতালির মাটিতে পাওলো রোসির একক নৈপুণ্যের কাছে কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে বিদায়। একই ভাবে চার বছর পর ৮৬‘তে মেক্সিকোর মাটিতেও মিশেল প্লাতিনি, টিগানার ফ্রান্সের সাথে হেরে স্বপ্নভঙ্গ। আর ১৯৯০ সালে ইতালির মাটিতে চির প্রতিদ্বন্দ্বি আর্জেন্টিনার সাথে ক্যানিজিয়ার গোলে আবার স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় নীল হওয়া।

তাবৎ ফুটবল বোদ্ধা, বিশেষজ্ঞ একমত- ৮২, ৮৬ আর ৯০‘র বিশ্বকাপে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফুটবল খেলেছে ব্রাজিলিয়ানরা। তাদের ছন্দময়, সৃষ্টি-সৃজনশীল আর শৈল্পিক ফুটবল অবাক বিস্ময়ে দেখে মুগ্ধ কোটি ফুটবল অনুরাগি। অতিবড় সমালোচক আর ব্রাজিল বিরোধীও মানছেন আশির দশক আর ৯০ ‘তে ব্রাজিল যে সাজানো-গোছানো আর নজরকাড়া ফুটবল উপহার দিয়েছে, তার প্রতিদানে কিছুই পায়নি। প্রতিবার দেশে ফিরেছে খালি হাতে।

ভালো খেলে মূলতঃ গোল করতে না পারার কারণেই ঐ তিনবার বিশ্বকাপ থেকে শূন্য হাতে ফিরেছে ব্রাজিল। প্রাপ্ত সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে না পারা ঐ তিন বিশ্বকাপে যথেষ্ট ভুগিয়েছে ব্রাজিলকে। ১৯৮৬ সালে ফ্রান্সের সাথে এগিয়ে থাকা অবস্থায় ‘সাদা পেলে’ জিকোর পেনাল্টি মিসের চরম মূল্য দিতে হয়েছে।

১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে বল নিয়ন্ত্রণ ও আক্রমণ শানানো এবং গোলের সুযোগ সৃষ্টিতে এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলের হার সঙ্গী হয় হলুদ জার্সিধারীদের।

বেশির ভাগ সময় খেলা দেখে মনে হয়েছে, গোল করার চেয়ে ব্রাজিলিয়ানরা সৌন্দর্য আর নান্দনিকতাকেই বুঝি প্রাধান্য দিচ্ছে। পাশাপাশি অতি আক্রমনাত্মক ফুটবলও তখন ব্রাজিলকে ডুবিয়েছে। ব্রাজিলিয়ানরা বেশির ভাগ সময় দ্রুত লয়ে নিজেদের সীমানা থেকে প্রতিপক্ষ সীমানায় অতি আক্রমণ শানাতে গিয়ে বিপাকে পড়ে। তাতে করে নিজেদের মাঝ মাঠ ও রক্ষণভাগে বড় বড় ফাটলের সৃষ্টি হয়। প্রতিপক্ষ কাউন্টার অ্যাটাকের সুযোগ পেয়ে যায়। ১৯৮২ সালে ইতালির সোনার ছেলে রোসি এমন কাউন্টার অ্যাটাক থেকে একাধিক গোল করে ব্রাজিলকে হতাশায় ডুবিয়ে ছাড়েন।

আজও কি অমন হবে? কোস্টারিকার সাথে ব্রাজিলের খেলা দেখতে দেখতে অনেক ভক্ত ও সমর্থক ফিরে গিয়েছিলেন সেই আশি ও নব্বই দশকের শুরুতে। একদম সেই সময়ের ছকে বাধা ফুটবল। যেন শিল্পীর তুলিতে আাঁকা ছবির মত সাজানো বাগান! প্রতিটি ব্রাজিল ফুটবলার যেন সে বাগানের একেকটি ফুল।

সেই নিজেদের মাঝে ছোট ছোট পাসে দেয়া নেয়া করে নিজ হাফ সীমানা থেকে কোন সময় প্রতিপক্ষ মাঝ মাঠে ফাটল ধরিয়ে মাঝখান দিয়ে, আবার কখনো দুই উইং দিয়ে গোল মুখে বল ফেলে কোস্টারিকার রক্ষণভাগকে চাপে ফেলে দেয়া। কিন্তু দক্ষ ও সুযোগ সন্ধানী স্ট্রাইকারের অভাবে সে সুযোগ গুলো কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছিল না।

তাই মনের আয়নায় উকি দিচ্ছিলো সেই দিনগুলো। যত সময় গড়াচ্ছিল, ততই সংশয়- শঙ্কা এসে বাসা বেঁধেছিল। শেষ পর্যন্ত কি সারা মাঠ ভাল খেলে, বেশি সময় বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আর কোস্টারিকাকে চাপের মুখে ঠেলে একের পর এক গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেও পারবে না ব্রাজিল? আবারো দক্ষ স্কোরারের অভাবে প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগানোর চরম মূল্য দিতে হবে?

শেষ পর্যন্ত ইনজুরি টাইমে শেষ রক্ষা। ছয় মিনিটের ইনজুরি টাইমে প্রথমে ফিলিপ কৌতিনহো আর পরে নেইমারের গোলে যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়া। কিন্তু তারপরও রোমারিও আর রোনালদোর কথাই হয়তো বার বার মনে হয়েছে হলুদ জার্সিধারীদের।

১৯৭০ সালে বিশ্বসেরা হবার পর ব্রাজিল যে দুবার বিশ্ব সেরা হয়েছে, প্রতিবার একজন দক্ষ স্ট্রাইকার ছিলেন সাফল্যের মূল রূপকার। ১৯৯৪ সালে রোমারিও আর ২০০২ সালে রোনালদো ছিলেন ব্রাজিলের বিশ্ব সেরা হবার প্রধান কারিগর।

১৯৯৪ সালে কার্লোস আলবার্তো ছক ও কৌশল পাল্টান। চিরায়ত ছন্দময় ফুটবলের পাশাপাশি নিজেদের রক্ষণ দূর্গ এবং মাঝ মাঠ ঠিক রেখে কৌশল আঁটেন কার্লোস আলবার্তো। আর বেবেতো-রোমারিও ত্রয়ের চমৎকার আদান প্রদান এবং শেষ পর্যন্ত রোমারিওর স্কোরিং এবিলিটি ব্রাজিলকে দুই যুগ পর আবার এনে দেয় বিশ্বসেরার সম্মান।

রোমারিও একাই ৫ গোল করে বসেন। এর মধ্যে রাশিয়া, ক্যামেরুন আর সুইডেনের সাথে প্রথম তিন গ্রুপ ম্যাচে একটি করে গোল করে ব্রাজিলের জয়রথ সচল রাখেন। এরপর নেদাল্যান্ডসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল আর সুইডেনের বিপক্ষে হেডে জয়সূচক গোল করেন রোমারিও।

একই অবস্থা ছিল ২০০২ সালে রোনালদোরও। ইনজুরির কারণে বাছাই পর্ব মিস করা রোনালদো প্রায় প্রতি ম্যাচেই জাদুকরি নৈপুন্যে মাঠ মাতিয়েছেন। সেটা যতটা পায়ের কাজে, শরীরের ঝাঁকুনি আর ড্রিবল দিয়ে; তার চেয়ে অনেক বেশি গোল করার অসামান্য দক্ষতায়।

পুরো আসরে আটটি গোল করেন রোনালদো। এর মধ্যে কোয়ার্টার ফাইনালে ইংলিশদের বিপক্ষে ম্যাচটি ছাড়া প্রতি খেলায় ব্রাজিলকে গোল উপহার দেন রোনালদো। ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে রোনালদোর করা দুই গোলেই সেবার বিশ্বসেরার মুকুট পড়ে ব্রাজিলিয়ানরা।

এবারের ব্রাজিলে অমন একজন রোমারিও ও রোনালদোর অভাব সুস্পষ্ট। গ্যাব্রিয়েল জিসাস স্ট্রাইকিং জোনে ছিলেন। কৌটিনহোকেও আশপাশে দেখা গেছে। আর নেইমার বরাবরই একটু বাঁ দিক ঘেঁষে খেলেন, তাই সত্যিকার স্ট্রাইকিং জোনে ব্রাজিলের একজন দক্ষ, মেধাবী, পরিণত এবং অভিজ্ঞ গোলদাতার অভাব পরিষ্কার।

আজ ইনজুরি টাইমে শেষ রক্ষা হলেও এভাবে ভালো খেলে গোলের সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে না পারলে আগামীতে বিপদ ঘটতে পারে। সামনের ম্যাচ সার্বিয়ার বিপক্ষে। ২৪ ঘন্টা আগে আর্জেন্টাইনদের হতবাক করে দেয়া ক্রোয়েশিয়ার একদম পাশেই সার্বিয়া। ক্রোয়েটদের মত সার্বিয়ানরাও দারুণ ফিট। ফার্ষ্ট। স্টামিনা আর স্পিড যথেষ্ট।

আর একদম ইউরোপীয় ঘরানা মানে কাউন্টার অ্যাটাক কেন্দ্রিক আক্রমণ শানানোয় সার্বিয়াও কম দক্ষ নয়। সে ম্যাচেও যদি ব্রাজিলের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রা আজকের মত একের পর এক গোলের সুযোগ হাতছাড়া করতে থাকেন, বার বার ব্যর্থতার পরিচয় দেন, তাহলে জেতা কঠিন হবে। কাউন্টার অ্যাটাকে উল্টো গোল হজমও করতে হতে পারে।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »