২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ রাত ৮:০৫
ব্রেকিং নিউজঃ

পশ্চিমবঙ্গে কেমন আছে বাংলাদেশী শরনার্থীরা ?

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ শুক্রবার, জুন ২২, ২০১৮,
  • 418 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

দেবযানী হালদার।।

দেশভাগের পর বাংলাদেশ থেকে আসা শরনার্থীরা শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুর পরে পরেই কমিউনিস্টদের পতাকাতলে জমায়েত হয়েছিল । অন্য রাজ্যে যেভাবে জনসঙ্ঘ সাংগঠনিকভাবে গড়ে উঠছিল তা বাংলায় হয় নি । শ্যামাপ্রসাদের বিপুল ব্যাক্তিত্বের আড়ালে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর প্রয়াস চাপা পরে গিয়ে একটি ব্যাক্তিকেন্দ্রিক দল হয়ে পরেছিল পশ্চিমবঙ্গে । ফলতঃ ওনার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই দলও ভেঙে পরে ।

এছাড়াও বাংলায় কমিউনিস্টদের উত্থানের পিছনে আরও কয়েকটি কারন আছে বলে মনে হয় ।

১) প্রাক স্বাধীনতা যুগে বাংলাতেই প্রথম শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন হয় । প্রথম শিল্প ধর্মঘটও হয় এই রাজ্যেই । এই আন্দোলনগুলো অনেকাংশে সাহায্য করেছে শ্রমিকদের মধ্যে development of class consciousness তৈরির ক্ষেত্রে ।

২) প্রাক স্বাধীনতা পর্বে বাংলাতে প্রথম আধুনিক শিল্পের পত্তন ও প্রসার হয়েছিল সেই উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধেই । আধুনিক ফ্যাক্টরি জাতীয় কোম্পানি ১৮৭৪ সালেই ছিল ২৬টি আর বছরের শেষদিকে আরও ৩১টি কোম্পানি নথিভুক্ত হয় । এইজন্য বাংলাকে Manchester of the East বলা হত । এই কারনে এখানে শিল্প শ্রমিক শ্রেনী বলে আলাদা একটা class এর উদ্ভব হয় । এই শ্রমিক শ্রেনীর মধ্যে কিন্তু তথাকথিত ধর্মীয় এবং সামাজিক রীতিনীতি অনেক দূর্বল হয়ে পরে যেহেতু জাত-ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে এক জায়গায় কাজ করতে হচ্ছে – এক টয়লেট ব্যবহার করতে হচ্ছে । এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে স্যার যদুনাথ সরকার বলছেন , “ A new class developed in Bengal, the class of industrial workers which was absent in any other part of the country. Industrial workers differ fundamentally from peasants in the fact that they have to dilute social norms and practices like religion and caste to survive in the factory settings. An upper caste works on the same floor as a Dalit or a Hindu has to share toilets with a Muslim in a worker’s colony. As a result social inhibitions go away and workers can identify with each other as belonging to one class instead of being fragmented on the basis of caste or religion “

৩) রেলপথ ভারত জুড়ে স্থাপনা হলেও বাংলাতেই তার সবচেয়ে বিস্তার দেখা যায় । ১৮৫১-১৮৫৯ সালের মধ্যেই বার্ণ কোম্পানি ১০০ মাইল রেলপথ স্থাপন করে । রেল শুধু শিল্পের ক্ষেত্রেই অগ্রনী ভূমিকা নেয় না social custom লঘু করার ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা নিয়েছিল । কার্ল মার্ক্স ১৮৫৩ সালেই রেলওয়ে ও শিল্পায়নের মধ্যে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক লক্ষ্য করেছিলেন । তিনি লিখছেন , “ I know that the English millocracy intend to endow India with railways with the exclusive view of extracting at diminished expenses the cotton and other raw materials for their manufactures. But when you have once introduced machinery into the locomotion of a country, which possesses iron and coals, you are unable to withhold it from its fabrication. You cannot maintain a net of railways over an immense country without introducing all those industrial processes necessary to meet the immediate and current wants of railway locomotion, and out of which there must grow the application of machinery to those branches of industry not immediately connected with railways. The railway-system will therefore become, in India, truly the forerunner of modern industry. This is the more certain as the Hindoos are allowed by British authorities themselves to possess particular aptitude. for accommodating themselves to entirely new labor, and acquiring the requisite knowledge of machinery. “

৪) কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস বাংলায় দীর্ঘদিনের , সেই উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই । উনিশ শতকে বাংলার কৃষক সমাজকে ধন ও ভূমি সম্পর্কের ভিত্তিতে তিন শ্রেনীতে ভাগ করা যেত — ধনী কৃষক, অধীনস্থ কৃষক ও কৃষি শ্রমিক । ধনী কৃষকের সংখ্যা কম – ২০ শতাংশের মতন , চাষের সঙ্গে সুদ ও শষ্যের কারবার করে এরা ধনী হয় । এরা জমিদারকে খাজনা দিতেন, কৃষককে অগ্রিম ঋণ দিয়ে কৃষিপণ্যের বিপননে অংশ নিতেন । কৃষি , মজুর বা আঁধিয়ারের মাধ্যমে কৃষিপণ্যের উৎপাদনেও এদের ভূমিকা ছিল । এসব সত্ত্বেও নিজেদের অধীনে কেন্দ্রীয় কৃষি খামার তৈরি করে আধুনিক পুঁজিবাদী কৃষির পত্তন ও উন্নত প্রযুক্তিজ্ঞানের প্রয়োগে উৎপাদন ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাতে তারা ব্যর্থ হন । এর কারন বিশ্লেষণ করে নিন্দা করেছিলেন সাভারকর , কিন্তু সেটা অন্য প্রসঙ্গ ।

কৃষক সমাজের তৃতীয় গোষ্ঠীটি হল কৃষি শ্রমিক । গ্রিয়ারসনের সংজ্ঞা অনুযায়ী ‘ যারা অন্যের জমি চাষ করে প্রাণধারণ করে তারা কৃষি শ্রমিক । ’ ১৯০১ সালের সেন্সাস অনুযায়ী বাংলাদেশের ১৭.৫ শতাংশ কৃষি শ্রমিক যেটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সময় বেড়ে হয়ে যায় প্রায় ৩৮ শতাংশে । মূলত মারাত্মক ভাবে শোষিত হত এরাই ।

১৯০০ সাল থেকেই কৃষি আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকলেও প্রাসঙ্গিকতা পেতে শুরু করে ১৯১৯ সালে মন্টেগু -চেমসফোর্ড সংস্কারের ফলে কৃষকরা ভোটাধিকার পাওয়ার পরে । ১৯২০ সালে হিন্দু মহাসভা কয়েকটি জেলায় প্রথম কৃষকদের সংগঠিত করার চেষ্টা করে । ১৯২১ আর ১৯২৬ সালে ফজলুল হকে নেতৃত্বে কৃষক সম্মেলন হয় । ১৯২৬ সালে প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীরা কৃষ্ণনগরে শ্রমিক ও কৃষক দল গঠন করে — নেতা ছিলেন অতুল গুপ্ত, নজরুল ইসলাম , নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত ও হেমন্ত সরকার । এই দলের মুখপত্রের নাম ছিল ‘ গণবাণী ও লাঙ্গল ‘ । এর পর ১৯৩৪ সালে ‘ নিখিল বঙ্গ প্রজা সমিতি‘র নাম পরিবর্তন করে রাখা হল ‘ কৃষক -প্রজা পার্টি ’ । ১৯৩৬-৪৭ এর মধ্যে বাংলায় তিনটে উল্লেখযোগ্য কৃষক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল —
১) ১৯৩৬-৩৮ দামোদর ক্যানেল কর আন্দোলন
২) ১৯৩৯-৪০ এর উত্তরবঙ্গের হাটতোলা ও আধিয়ার আন্দোলন
৩) ১৯৪৬-৪৭ এর তেভাগা আন্দোলন ।

খেয়াল করলেই দেখা যায় কোথাও হিন্দু মহাসভা নেই , অথচ এই বাংলায় কৃষকদের প্রথম সংগঠিত করার কাজ প্রথম হিন্দু মহাসভাই করে । ১৯২৯ সালে হিন্দু মহাসভা যে বৈপ্লবিক কর্মসুচীর ডাক দিয়েছিল তা রীতিমত প্রশংসনীয় ছিল । কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এরপরে তারা হারিয়ে গেল ।

দেশভাগের পরে পরেও এই সংক্রান্ত আন্দোলন করেছে বামেরা । এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সমাজ বিজ্ঞানীরা বলেন , “ What played to their advantage was that the majority of these refugees were educated and socially upwardly mobile. The struggle they went through to resettle their lives in West Bengal and the sacrifices they made became the hallmark of a middle class Bengali in the 1950s. They also became loyal foot soldiers of the Communist party and sacrificed greatly for the cause of the ideology, fanning out all across rural Bengal as school teachers and other such jobs to spread communist ideology among peasants and workers. By the end of the 60s the Communist party had become a serious contender to form a government. “

সমসাময়িক সময়ে খাদ্য আন্দোলনও শুরু এখান থেকেই — বাংলায় বামেরা এগোতে শুরু করল আর ক্রমাগত পিছু হঠতে শুরু করল জনসঙ্গ ও মহাসভা । এরপর জমি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নিজেদের ভিত আরও পোক্ত করে কমিউনিস্টরা । দীর্ঘ ৩৪ বছর বাম শাসন এরই ফলঃশ্রুতি ।

তৃণমূল এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পথেও কিন্তু ঐ আর্থ-সামাজিক ভিত্তিকেই মাধ্যম ধরেছিল । সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে জমি কেন্দ্রীক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি সচেতনভাবে একটি অর্থনৈতিক গোষ্ঠী গড়ে তুলেছিল যারা বামেদের ভিত নড়াতে সক্ষম । এই করতে গিয়ে তারা যেমন চিটফান্ডগুলোর সুবিধে নিয়েছে তেমনি নিয়েছে সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে জামাতের । কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় থাকার সুবিধে নিয়ে মমতা বুদ্ধিজীবীদের একটি পাইয়ে দেবার সুযোগও করে দিয়েছিলেন বিভিন্ন কমিটি তৈরি করে তার উপদেষ্টা নিয়োগের মাধ্যমে । আজও কিন্তু তৃণমূল সরকার অন্য ভাবে এই পাইয়ে দেবার রাজনীতিটা সুচারু ভাবে করে চলেছে ।

রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব এগুলো নিয়ে চিন্তা -ভাবনা তো দূরের কথা আদৌ এতদূর ভাবে কি না তাই নিয়েই যথেষ্ট সংশয় আছে । একটিও আর্থ – সামাজিক আন্দোলনে শরিক হওয়ার প্রচেষ্টা নেই । এই রাজ্য থেকে চারজন সাংসদ আর তাঁদের মধ্যে আবার দুজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী । সুতরাং একটা পাল্টা অর্থনৈতিক গোষ্ঠী তৈরির বিপুল সুযোগ ছিল যা হেলায় হারানো হয়েছে । অবশ্য গোষ্ঠী তৈরি তো অনেক বড় ব্যাপার এই রাজ্যের বিজেপি মন্ত্রী-সাংসদরা কটা কোটায় ছাত্র ভর্তি করায় তাই নিয়েও বিস্তর সন্দেহ আছে ।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »