২০০৪ সাল থেকে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত মুখ বাঁহাতি অলরাউন্ডার ফজলে মাহমুদ রাব্বি। তবে তার পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতার অভাব ছিল প্রকট। এক সময় তো ক্রিকেট ছেড়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিও নিয়েছিলেন। তবে বেশি দিন মন টেকেনি, কয়েক মাস পরই ভালোবাসার টানে ফিরে আসেন মাঠে। গত কয়েক বছরে ঘরোয়া ক্রিকেটের পাশাপাশি বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে দারুণ পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে তিনি এখন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে দলে। সোমবার জাতীয় দলের অনুশীলন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে রাব্বির কথোপকথনে খুঁজে পাওয়া গেলো এক পরিণত ক্রিকেটারকে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে অনেক ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায় ৩০ বছর বয়সে। অথচ একই বয়সে আপনার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু হতে যাচ্ছে। কেমন অনুভূতি?
রাব্বি: অবশ্যই খুব খুশি লাগছে। আমি শুধু নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে চিন্তা করছি। অনেক দিন ধরে খেলছি, আমার সামর্থ্য নতুন করে প্রমাণ করার কিছু নেই। আমি যা পারি, জাতীয় দলে সেটাই করার চেষ্টা করবো। পাঁচ/ছয় বছর আগে সুযোগ পেলে হয়তো এতটা আত্মবিশ্বাসী থাকতাম না। আসলে বয়স আর অভিজ্ঞতা মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। গত দুই/তিন বছরে আমার খেলায় অনেক উন্নতি হয়েছে। দলে সুযোগ পেলে সেটা কাজে লাগাতে চাই।
প্রশ্ন: আপনার ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে এত উত্থান-পতন কেন?
রাব্বি: ক্রিকেট খেললেও আমাকে মন দিয়ে পড়াশোনা করতে হয়েছে। তিতুমীর কলেজ থেকে মার্কেটিংয়ে অনার্স-মাস্টার্স করেছি। ক্রিকেট মাঠে ব্যর্থতার হতাশা থেকে এক সময় অন্য পেশায় যাওয়ার চিন্তা করলাম। ২০০৮ সালে একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে কয়েক মাস চাকরিও করি। কিন্তু আমার মন পড়ে ছিল ক্রিকেটে। বুঝতে পারি, খেলা ছাড়া থাকতে পারবো না। এরপর ক্রিকেটে ফিরলেও পারফরম্যান্স ভালো হচ্ছিল না। বছর চারেক আগে ঠিক করলাম, পরের মৌসুমে খেলেই বিদায় জানাবো ক্রিকেটকে।
প্রশ্ন: আর সেই মৌসুমই আপনার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট?
রাব্বি: সেটা বলতে পারেন। ২০১৪-১৫ মৌসুমে জাতীয় লিগে ৫৩.৯০ গড়ে ৫৯৩ রান করেছিলাম। আসলে খেলা ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা মাথায় ছিল বলে একদম নির্ভার হয়ে খেলতে নেমেছিলাম। বন্ধুদেরও বলেছিলাম, মৌসুম শেষে আর খেলবো না। খোলা মনে খেলতে নামতাম বলেই সেবার পারফরম্যান্স ভালো হয়েছিল। এরপর থেকে আমার মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে। বুঝতে পেরেছি, চাপ ছাড়া মাঠে নামলেই ভালো খেলত পারবো।
প্রশ্ন: আপনার ফিটনেসের অবস্থা কেমন?
রাব্বি: গত মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আমার ব্যাটিং ভালোই হয়েছিল, ৭০৮ রান করেছিলাম। তবে ফিটনেসের অবস্থা ভালো হলে আরও রান করতে পারতাম। তখন থেকেই আমার মাথায় ফিটনেসের উন্নতির চিন্তা ঘুরতে থাকে। কয়েক মাস আগে আমাকে এইচপি ক্যাম্পে ডাকা হয়। ওই ক্যাম্পটা খুব কাজে দিয়েছে। সেখানে আমি খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি, ওজন কমিয়েছি। বয়স নিয়ে আমি ভাবি না। আমার ফিটনেস আর পারফরম্যান্স ঠিক থাকলে বয়স কোনও বিষয়ই নয়।
প্রশ্ন: সাকিবের বিকল্প হিসেবে আপনি সুযোগ পেয়েছেন। কতটা চাপ অনুভব করছেন?
রাব্বি: শুধু আমি কেন, সাকিব ভাইয়ের জায়গা কারও পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়। আমি মূলত ব্যাটিং অলরাউন্ডার, ব্যাটিং করতেই বেশি ভালোবাসি। দলের প্রয়োজনে বাঁহাতি স্পিনও করি। তবে সাকিব ভাইয়ের জায়গা নিতে পারবো না। আমি যা পারি, সেটাই করার চেষ্টা করবো।
প্রশ্ন: জাতীয় দলের সতীর্থদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো ড্রেসিংরুম শেয়ার করার অভিজ্ঞতা কেমন?
রাব্বি: খুবই ভালো, এখানে সবাই নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। আমি সব কিছু দেখছি, শেখার চেষ্টা করছি। অন্যদের সিরিয়াসনেস আমাকে ভালো খেলতে অনুপ্রাণিত করছে।