আজ মহাষষ্ঠী৷ ঢাকে পড়েছে কাঠি। আলো-সানাই-শঙ্খ আর কাঁসার রোয়াবে হিন্দু নারী-পুরুষ-শিশু-কিশোরদের প্রাণ আনচান করছে। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের সূচনা হয়ে গেছে৷ মৃন্ময়ী থেকে আনন্দময়ীর রূপদান পর্বের সমাপ্তি। সনাতন বিশ্বাসে, কৈলাশ শিখর ছেড়ে পিতৃগৃহে আসা মা দুর্গার অকাল বোধন হয়েছে কাল। চারটি দিনের জন্য উমা বাপের বাড়ি ছেলে মেয়েদের নিয়ে শারদ শুল্কা পঞ্চমীতে চলে এসেছেন চারটি দিন বাপের বাড়ির স্নেহ যত্ন নিয়ে দশমীতে বিষন্ন করে চলে যায় সবার মা, মা দুর্গা৷ বাঙালির চিরন্তন এই রীতিনীতি মেনেই সব উমারই পুজোর চারদিন বাপের বাড়িতে কাটাতেন আসেন৷ সে যতই থাকুক না ব্যস্ততা৷ এই চারটে দিন অন্য কোনও কাজ নেই৷
আকাশে-বাতাসে এখন শারদ উত্সবের শিহরণ। শিল্পী তার তুলির নিপুণ আঁচড়ে বর্ণাঢ্য বিভায় উদ্ভাসিত করে তুলেছে মহিষাসুর মর্দিনীকে। প্রতিমার অধিষ্ঠান হয়েছে মণ্ডপে মণ্ডপে। আজ খুলে যাবে তার আয়ত চোখের পলক। অসুর বধে চক্র, গদা, তীর, ধনুক, খড়গ-কৃপাণ-ত্রিশুল হাতে মাতৃরূপেন অসুরদলনী দেবী হেসে উঠবেন।
এবার দূর কৈলাশ ছেড়ে মা পিতৃগৃহে আসবেন ঘোটকে। ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রোগ-শোক, হানাহানি, মারামারি, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা প্রকাশ পাবে। বিজয়া দশমীতে দেবী বিদায় নেবেন দোলায় চড়ে।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে-আজ পূর্বাহ ৯-৫৭ মিনিটের মধ্যে ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ, সায়ংকালে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের পর ষষ্ঠী তিথির সূচনা ঘটে। আজ রাত ৮টা ২৩ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড অব্দি তিথি থাকবে। অতঃপর শুরু হবে মহাসপ্তমী তিথি। কাল মহাসপ্তমীর প্রভাতে ঢাক-ঢোলক-কাঁসর বাজিয়ে কলাবউ স্নান ও আদরিণী উমার সপরিবারে তিথি বিহীত পূজা। বুধবার মহাঅষ্টমীতে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে নবমী বিহীত পূজা। পরদিন শুক্রবার সকাল ৭টায় পূজা সমাপণ ও পরে দর্পণ বিসর্জন-শান্তিজল গ্রহণ।
সাধারণত আশ্বিন শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ দিন অর্থাত্ ষষ্ঠী থেকে দশম দিন অর্থাত্ দশমী অবধি পাঁচদিন দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে দুর্গাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়া দশমী নামে পরিচিত। আবার সমগ্র পক্ষটি দেবীপক্ষ। দেবীপক্ষের সূচনা হয় পূর্ববর্তী অমাবস্যার দিন; এই দিনটি মহালয়া। অন্যদিকে দেবীপক্ষের সমাপ্তি পঞ্চদশ দিন পূর্ণিমায়; এই দিনটি কোজাগরী পূর্ণিমা নামে পরিচিত ও সাম্বত্সরিক লক্ষ্মীপূজার দিন।
সবার জীবনেই মা করুণাময়ী নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি ৷