১লা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ সকাল ৮:৫০

বরিশালে সামাজিক সংহতি প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক অঙ্গীকারের দাবি তরুণদের

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ শনিবার, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৮,
  • 400 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক// বরিশালে সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখার পাশাপাশি সংহতি প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক অঙ্গীকারের দাবি জানিয়েছে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা। আগামী সংসদ নির্বাচনে সামাজিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে অন্যের মতামত ও বাক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি সামাজিক সম্প্রীতি ও ন্যাযাতা প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাপক জনসম্পৃক্ততার জন্য কার্যকর স্থানীয় সরকার, যুব সংসদ প্রতিষ্ঠা মাধ্যমে সরকার পরিচালনা করার বিষয়টি নির্বাচনী ইশতেহারে গুরুত্ব প্রদান করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছে তারা।

শুক্রবার সকালে এক প্রজন্ম সংলাপ অনুষ্ঠানের বক্তারা এসব দাবি তুলে ধরেন। নগরীর ফকিরবাড়ি রোডের শিক্ষক ভবনস্থ আইসিডিএ মিলনায়তনে সামাজিক সম্প্রীতি ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় যুব সমাজের ভূমিকা শীর্ষক এ সংলাপ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যুব সংগঠন বাংলাদেশ মডেল ইয়ুথ পার্লামেন্ট।

গ্লোবাল প্লাটফর্ম বাংলাদেশ ও একশনএইড বাংলাদেশ এ অনুষ্ঠান আয়োজনে সহায়তা করে। বাংলাদেশ মডেল ইয়ুথ পার্লামেন্টের নির্বাহী প্রধান সোহানুর রহমানের সঞ্চালনায় অতিথি আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উন্নয়ন সংগঠক রণজিৎ দত্ত, বরিশাল ব্যাপ্টিস্ট মিশন বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেরি সুর্যানী সমাদ্দার ও সামাজিক সংগঠক বাহাউদ্দিন গোলাপ প্রমুখ। সংলাপের শুরুতের বাংলাদেশ মডেল ইয়ুথ পার্লামেন্টের ভাইস-চেয়ারপার্সন শাকিলা ইসলাম এক লিখিত প্রবন্ধে বলেন, একটি শান্তি ও সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। হাজার বছর ধরে এ ভূখন্ডে মানুষ সম্প্রীতি বজায় রেখেই শান্তিপুর্ণ সহবস্থান করে আসছে। তবে মাঝে মধ্যেই সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদের উত্থান ও মানুষে-মানুষে দ্বন্ধ সৃষ্টি হয়। অবশ্য তা সাময়িক। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। বিগত কয়েক বছর ধরে নির্বাচন পূর্ব, নির্বাচনকালীন এবং নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু নির্বাচনী সহিংসতা আমরা প্রত্যক্ষ করছি।

বিশেষত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী এ নির্বাচনকালীন সময়কালে চরম উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটায়। যেকোন নির্বাচন আসলেই হামলা, মামলা, লুটপাট কিংবা দেশত্যাগের হুমকির আতংক ছড়িয়ে পড়ে তাদের মধ্যে। পরিবারগুলো ভিটামাটি এবং স্বজন হারানোর ভয়ে কুঁকড়ে থাকে। অনেককে দেশত্যাগের ভয় পেয়ে বসে। এ রকমের হানাহানির রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের। বিশেষ করে আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধর্মের অপব্যবহার ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যাতে কেউ ক্ষুন্ন করতে না পারে সে বিষয়ে যুব সমাজকে সতর্ক থাকতে হবে। পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠী যেমন আদিবাসী, হিজড়া, প্রতিবন্ধী মানুষ ও দলিতদের প্রতি অধিকার সংরক্ষণের পাশাপাশি দেশের সামাজিক ও জাতিগত বৈচিত্র রক্ষা, সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষা, মানবিকতার স্বার্থে ও মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করার প্রয়াসে শিক্ষিত, অসাম্প্রদায়িক চেতনার তরুণদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে এবং সোচ্চার ভূমিকা পালন করতেও এসময় তিনি আহবান জানান। আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রবীণ ও তরুণ প্রজন্মের বক্তারা বলেন, পরমত সহিষ্ণুতার অতুলনীয় শিক্ষা ও নীতি-আদর্শ থেকে দূরে সরে থাকলে মানুষের জাতীয় ও দলগত জীবনে যেমন বিপর্যয় নেমে আসে, তেমনি ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনও সুখকর হয় না। ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যখন নিজের ক্ষমতা, শক্তি, সামর্থ্য ও স্বার্থপরতার দম্ভ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকে, তখন সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দলমতের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক, ভাববিনিময় ও যোগাযোগ স্থাপন করা কঠিন হয়ে পড়ে। সম্প্রতিক নানা কারণে আমাদের সমাজে সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছেও। সমাজে এই বৈচিত্র্যকে মানিয়ে নিতে প্রয়োজন সহনশীলতা। বিপরীত মত ও বৈচিত্র্যের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমে এ সমস্য দূর করা সম্ভব। আর তা দূর করতে না পারলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত হবে। এসব অপ্রীতিকর ঘটনার সবকিছুই যে রাজনৈতিক কারনে হচ্ছে তা নয়, সমাজের ভেতরেও বৈষম্য ও বিভেদ রয়েছে। পরিচয়ভিত্তিক বিদ্বেষ সামাজিক সম্প্রীতির প্রধান অন্তরায়। আমাদের সমাজের সব সমস্যার মূলে রয়েছে ক্ষমতা ও শোষণ। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের মধ্যেও রয়েছে বিদ্বেষ-বৈষম্যপূর্ণ নীতি-আদর্শের চর্চা। এ জন্যই আমাদের রাজনীতি এত বিদ্বেষপূর্ণ হয়েছে। আমাদের ভালো করে মনে রাখতে হবে, ধর্ম সামাজিক সম্প্রীতির একটি অংশমাত্র। সম্প্রীতির ক্ষেত্রে ধর্মই সমাধান নয়। জঙ্গীবাদ ইস্যুকে পুঁজি করে শুধুমাত্র ধর্মীয় লেবাসের মানুষকে সন্দেহ করলে চলবে না। বিদ্বেষপূর্ণ এ আচরণ দূর করতে ধর্মীয় নেতাদের গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব থাকলেও রাষ্ট্রের ভূমিকাই মুখ্য। কারন রাষ্ট্র সব নাগরিকের কল্যাণের জন্য। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিল শোষণ-নির্যাতনের বিপক্ষে এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাত্মক সংগ্রাম। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় তৈরি হয় স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িকতা ও সহজাত সম্প্রীতি আমাদের সংবিধানের মূল মন্ত্র। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে তৈরি সংবিধান বাংলাদেশের নাগরিকদের মাঝে কোনো বিভাজন রাখেনি। আমরা সেই জাতি যারা অতীতে সকল লড়াই সংগ্রামে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছি। আমাদের এ ঐক্য ধরে রাখতে হবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে আমাদের সমুন্নত রাখার পাশাপাশি বৈষম্যহীন সামাজিক সংহতি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী হতে হবে।

এসময় বক্তারা ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা বিশেষ করে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের পর বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার চাঁদসী ইউনিয়নের উত্তর চাঁদসী, আগৈলঝারা উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বাহাদুরপুর, ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলার লর্ড হার্ডিন্স ইউনিয়নের অন্নদা প্রসাদ, চর উমিদ ইউনিয়নের মালো বাড়ী, বাগেরহাট, পাবনা ও নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের মুখে কোটালীপাড়ার রামশীলে সারাদেশ থেকে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের সংখ্যালঘুরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। রামশীল যেন পরিণত হয়েছিল এক উদ্বাস্তু শিবিরে। এরপর থেকে একযোগে বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু নির্যাতন কিছুটা কমে এলেও একেবারে তা থামেনি।

ইন্টারনেটে গুজব ছড়িয়ে ২০১২ সালের অক্টোবরে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর বড় ধরনের হামলা হয়। ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসির নগরে হিন্দুদের শতাধিক বাড়ি-ঘরে হামলা-ভাঙচুর এবং লুটপাট করা হয়। অন্তত ১০টি মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। হিন্দু পল্লিতে নারী-পুরুষকে বেধড়ক পেটানো হয়। একই বছর নভেম্বরে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্øীর বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ তিন সাঁওতালকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়।

২০১৭ সালের নভেম্বরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয় রংপুরের গঙ্গাচড়ার ঠাকুরপাড়া এলাকায়। ওই ঘটনার পর সারাদেশে আরো অন্তত পাঁচটি মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এছাড়া ১৯৯৬ সালে সরকারের সঙ্গে পাহাড়ি নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে শান্তি চুক্তি হলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায় শান্ত পাহাড়ের কোলে অশান্তি লেগেই আছে। কোনো অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষায় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম- যেমন ফেসবুক, টুইটার, এবং বিভিন্ন ব্লগ থেকে পাওয়া ধর্মবিদ্বেষী, ভিত্তিহীন ও কুরুচিপূর্ণ মানহানিকর পোস্ট, কমেন্ট, ছবি, কার্টুন ইত্যাদি প্রচারে সর্তক থাকতে এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলা দুর করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সামাজিক মাধ্যমকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে তরুণদের প্রতি বক্তারা আহবান জানান

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »