স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরিশালের কয়েকটি আসন বাদে পুরো বিভাগে ছড়িয়ে পড়ছে নির্বাচনী সহিংসতা। গতকাল শনিবার একদিনেই কয়েকটি নির্বাচনী আসনে ব্যাপক সহিংস ঘটনায় প্রায় ৫ শতাধিক আহত হয়েছে। সহিংস ঘটনা শুধু আওয়ামীলীগ বিএনপির মধ্যেই ঘটছে না, আওয়ামীলীগ এবং জাতীয় পার্টিও জড়িয়ে পড়ছে সংঘর্ষে। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীও হামলার শিকার হয়ে এখন হাসপাতালে। প্রথমে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালেিত নির্বাচনী সহিংসতা দিয়ে মুরু। এরপর গতকাল একদিনেই ভোলা, পটুয়াখালরি গলাচিপা, বরগুনা, কাঠালিয়া, পিরোজপুরে মঠবাড়িয়ায় ব্যাপক সহিংস ঘটনা ঘটে।
ভোলার লালমোহন :
ভোলার লালমোহন উপজেলায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে সাংবাদিক সহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় দুটি মোটরসাইকেল ও লাইভের সময় সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত ও ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়েছে।
শনিবার দুপুর ২টার দিকে লালমোহন উপজেলার নাঙ্গলখালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী জানান, নাঙ্গলখালী এলাকায় ভোলা-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদের বাড়ির পাশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এ সময় দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ফলে দুই পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হন। পাশেই চ্যানেল আইয়ের একটি টিম লাইভ চলছিল। এ সময় ক্যামেরা ও বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়। লালমোহন থানা পুলিশের ওসি মীর খায়রুল কবির বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি।
পটুয়াখালীর গলাচিপা :
গলাচিপায় বিএনপিপ্রার্থী গোলাম মাওলা রনির স্ত্রী রুনু বেগমকে বহনকারী গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। শনিবার গলাচিপা পৌরশহরের মদিনা মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময়ে গাড়িতে অবস্থানরত প্রবীণ বিএনপি নেতা ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আবু তালেব মিয়া আহত হন। এ ঘটনায় পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
বিএনপি অভিযোগ করছে আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করেছে। অপরদিকে গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা টিটো জানান, এ হামলার ঘটনা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের।
তিনি আরও জানান গোলাম মাওলা রনি বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার অনেক আগ থেকেই গলাচিপা বিএনপি ত্রিধারায় বিভক্ত। গলাচিপা থানার ওসি আখতার মোর্শেদ জানান, তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঝালকাঠির কাঠালিয়া :
কাঁঠালিয়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সর্মর্থিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশের উপপরিদর্শকসহ ১০ জন আহত হয়েছে। উত্তেজিত নেতাকর্মীরা দফায় দফায় হামলা চালিয়ে দুই পক্ষের দুটি নির্বাচনী কার্যলয় ভাঙচুর করে।
শনিবার দুপুরে উপজেলার ঘোষেরহাট বাজার ও আমুয়া বন্দরে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্র জানায়, দুপুরে ঝালকাঠি-১ আসনে (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনের বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর (বীর উত্তম) ঘোষেরহাট বাজারে গণসংযোগে যান।
তার কর্মী-সমর্থকরা ধানের পক্ষে শ্লোগান দিলে সেখানে উপস্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বজলুল হক হারুনের কর্মী-সমর্থকরা পাল্টা শ্লোগান দেয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।
এতে কাঁঠালিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফিরোজ, আমুয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন সরদার ও ওয়ার্ড যুবলীগের সহসভাপতি সোহাগ জোমাদ্দারসহ উভয় পক্ষের ১০ নেতাকর্মী আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গুরুতর অবস্থায় বিএনপি নেতা হুমায়ুন সরদারকে বরিশালে শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ধানের শীষের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা অস্বীকার করে আমুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম ফোরকান সিকদার বলেন, ‘আমি ঘটনার সময় ছিলাম না।
পরে এসে দেখি আমাদের কার্যালয় ভাঙা। ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মুজিবুল হক পান্না গোলদার বলেন, আমাদের নেতা শাহজাহান ওমর আসলে আওয়ামী লীগের লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায়। তারা আমাদের একটি নির্বাচনী কার্যালয় হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে।
এতে আমাদের কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। কাঁঠালিয়া থানার ওসি মো. এনামুল হক বলেন, ‘ভোট চাওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। উভয় গ্রুপ ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে চার থেকে পাঁচজন আহত হয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে।
বরগুনা সদর :
বরগুনা-২ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. মিজানুর রহমানের অন্তত ১২ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে তিনজনকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে বরগুনার বাইনচটকি ফেরিঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে হৃদয়, লালা চান ও হাসান হাওলাদারের নাম জানা গেছে। আহতরা জানান, বরগুনা-২ আসনের জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান তার কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে বরগুনার বড়ইতলা-বাইনচটকি ফেরি পার হয়ে বরগুনা-২ আসনের পাথরঘাটা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণার জন্য যাচ্ছিলেন।
এসময় ফেরিটি বাইনচটকি নোঙ্গর করার ঠিক আগ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকরা ফেরিতে থাকা জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মো. মিজানুর রহমানের কর্মী ও সমর্থকদের উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে।
পরে ফেরিটি দ্রুত বাইনচটকি ফেরিঘাট ত্যাগ করে বড়ইতলা ফেরিঘাটে এসে নোঙ্গর করে। তবে এ বিষয়ে বরগুনা-২ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ শওকত হাচানুর রহমান রিমনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মো. হানিফ সিকদার বলেন, বাইনচটকি ফেরিঘাটে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মো. মিজানুর রহমানের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন ছিল।
কিন্তু তিনি তার নেতাকর্মীদের নিয়ে ফেরি থেকে না নেমে পুনরায় বড়ইতলা ফেরিঘাট চলে যান। আর এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাথরঘাটা থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি বলেও জানান তিনি।
পিরোজপুর মঠবারিয়া :
পিরোজপুর-৩ মঠবাড়িয়া আসনে মহাজোট প্রার্থী এমপি ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর (লাঙ্গল মার্কা) সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুর রহমান (আপেল) সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের আটজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
শুক্রবার রাতে আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। আহতরা হলেন লাঙ্গলের সমর্থক উপজেলার শিংগা গ্রামের হাসিব মিয়া (১৮), ভেচকী গ্রামের আরিফ হোসেন (২০), কামাল হোসেন (২৫) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আপেল প্রতীকের সমর্থক শামসুল হক (৬৫), আমির হোসেন (৩০), অ্যাড, রনজিত (৪০) ও মোজাম্মেল ফকির (৪০)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাতে উপজেলার বয়াতীর হাটে লাঙ্গল মার্কার সমর্থকরা একটি নির্বাচনী সভায় যোগদানের জন্য মিছিলের প্রস্ততি সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা বাধা দিলে উভয়পক্ষ ধারালো অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে।
এ সময় নির্বাচনী অফিসসহ একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। মঠবাড়িয়া থানার ওসি এমআর শওকত আনোয়ার বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।