কালীপূজার সাথে ভূত চতুর্দশীর যেন একটা বিশেষ সম্পর্ক আছে। দুপুরে মায়ের হাতের চোদ্দশাঁক ভাজা, গরম ভাতের সাথে ঘি দিয়ে অপূর্ব । বাজার থেকে খুঁজে পেতে নিয়ে আসা হতো – কিন্তু তথাকথিত চোদ্দশাঁকের মধ্যে সব ঠিক ঠিক থাকতো কিনা দেখে নেওয়া হয় ।
শাস্ত্রমতে এই শাকগুলি হল যথাক্রমে – ওল, কেঁউ, বেতো, সর্ষে, কালকাসুন্দে, নিম, জয়ন্তী, শাঞ্চে, হিলঞ্চ, পলতা, শৌলফ, গুলঞ্চ, ভাটপাতা এবং শুষণী। অনেকেই হয়তো জানেই না এই চোদ্দশাঁকের কথা। তাঁরা হয়তো হেসে উড়িয়ে দেবে এসব গ্ৰাম্য প্রথা বলে। কিন্তু এর পিছনেও বিজ্ঞান সম্মত ব্যাখ্যা আছে – এই সময় যেহেতু ঠান্ডার আমেজ এসে যায়, হাওয়ায় ভাসে হিম যা থেকে নানারকম রোগ সৃষ্টি হয়, তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ানোর জন্যে এই চোদ্দশাঁক খাওয়ার প্রথা। তাই এগুলো খাওয়াই ভালো। আর যাই হোক এতে ক্ষতি তো কিছু নেই।
এবার ফিরে আসা যাক প্রসঙ্গে, ভূত চতুর্দশী বা নরক চতুর্দশীর দিন বাড়ীর আনাচে কানাচে 14 টি প্রদীস জ্বেলে দেওয়া হতো। অনেকের ধারণা এই দিনে প্রেতলোক থেকে আত্মারা পৃথিবীতে নেমে আসে। যে সব আত্মারা প্রেতলোক প্রাপ্ত হয়। যারা স্বর্গ/নরক কোনটাতেই যেতে পারে না, তারা এই দিনে জেগে ওঠে। এই একদিন তাঁদের আলো দেখানো হয়, এতে তারা খুসী হয়। এটা হিন্দুদের “হ্যালুইন উৎসব” বিদেশে হ্যালুইন উৎসব পালন করা হয় মিষ্টি কুমড়োর ওপরের অংশ কেটে সমস্ত বের করে মিষ্টি কুমড়োর মধ্যে চোখ মুখ আঁকিয়ে তার মধ্যে মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখা হয়।
মনে হয় এতে প্রেতাত্মারা খুশী হন। এছাড়া এদিন ভূতের সাজসজ্জা সেজে আনন্দ উৎসব করা হয়। হিন্দুদের উৎসব একেবারেই অন্য নিয়মে। এদিন চোদ্দশাঁক খেয়ে দিনটি পবিত্র ভাবে পালন করে সন্ধ্যায় মৃত পূর্ব পুরুষের উদ্দেশ্যে চোদ্দটি প্রদীপ দেওয়া হয়। এতে যমরাজ প্রসন্ন হয়ে মৃত ব্যক্তির আত্মাকে মুক্ত করেন। সমস্ত পৃথিবীর মানুষের মতো হিন্দুরাও বিশ্বাস করে এই দিনটিতে মৃত আত্মারা পৃথিবীতে নেমে আসেন। যাই হোক ভূত চতুর্দশীর একটি অন্য রকম অর্থ দাড়ায়, ভূত চতুর্দশীর পরদিন দীপান্বিতা অমাবস্যা। মহাশক্তি মা কালীর পূজার দিন। আমাদের এই দেহ পঞ্চভূতের সমষ্টি। আকাশ, ভূমি, জল, অনল, পবন।
দেহান্তে শ্মশানে দেহ দাহ হলে এই শরীর পঞ্চভূতে বিলীন হয়। সুতরাং এই পঞ্চভূতের শরীরকে নশ্বর জ্ঞানে এই দিনটি পবিত্র ভাবে থেকে চোদ্দশাঁক ভক্ষন করে, সন্ধ্যায় ধর্মরাজের নামে প্রদীপ উৎসর্গ করে পর দিবস মা কালীর উপাসনায় ব্রতী হবার শিক্ষে দেয়। তাই এদিন ভূতচতুর্দশী নামে খ্যাত। পেতাত্মার কথা বলতে এখানে দেহের নশ্বর মূর্ত্তির কথাই তুলে ধরা হয়েছে।
আরও যেটা – এই নরক চতুর্দশীর দিনই সত্যভামা কতৃক আঘাত প্রাপ্ত হবার পরেই শ্রীকৃষ্ণের হস্তে নরকাসুরের বধ হয়। ( পরের পোষ্টে নরক চতুর্দশীর বিস্তারিত বর্ণনা পড়ুন )
প্রত্যেকটি সার্বজনীন উৎসব মন্দের বিরুদ্ধে ভালোর জয়কে উদযাপন করে হয়ে থাকে। দীপাবলীর এই উৎসবও অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলো জ্বালানোর উৎসব, নিজের অন্তরের সকল অজ্ঞতা, অন্ধকারকে মুছে ফেলে আলোর উত্তরণের উৎসব। হয়তো অঞ্চল বিশেষে দীপাবলীর মাহাত্ম্য ভিন্ন ভিন্ন, কিন্তু মূল কথা এক – আত্মাকে প্রজ্বলিত করে পরিশুদ্ধ করে সেই পরম ব্রহ্মে লীন হওয়ার পথই দেখায় এই উৎসব। সবার ভালো হোক। সবাই ভালো থাকুন।