প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারকে কথার ফুলঝুরি হিসেবে মনে করছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। তারা বলছে, ইশতেহারে অনেক সুন্দর সুন্দর কথা থাকলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। কিন্তু ভোটের অধিকার থাকলে এ রকম ফুলঝুরির ইশতেহার কোনো রাজনৈতিক দল দিত না।রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এ রকম অভিমত জানায় সুজন। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সুজন সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। লিখিত বক্তব্য দেন সুজনের সহযোগী সমন্বয়কারী নেছার আমিন।এম হাফিজ উদ্দিন বলেন, আগেও রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহার দিয়েছে। পরে তারা মনে রাখেনি। আমরা চাই দেশে গণতন্ত্র থাকবে, সুশাসন থাকবে। কিন্তু প্রতিদিনই নির্বাচনী সহিংসতা ঘটছে। বিরোধী পক্ষের ওপর হামলা হচ্ছে। সেনাবাহিনী মাঠে নামলে হয়তো অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে। আমরা আশা করব একটা ভাল নির্বাচন যেন হয়।ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সুষ্ঠ নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে শঙ্কা আছে। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাহলে নির্বাচনী ইশতেহারে কথার ফুলঝুরি থাকবে না। প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে। এ জন্য ভবিষ্যতে ভোট দেয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তা না হলে হলি আর্টিসানের মতো বিপদগামীরা সৃষ্টি হবে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের বড় ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের আচরণে সেটা মনে হচ্ছে না। বেশি পর্যবেক্ষক থাকলে সুষ্ঠ নির্বাচনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। নির্বাচন কমিশন পর্যবেক্ষকদের ওপর আরো বেশি কড়াকড়ি আরোপ করছে। গণমাধ্যমের ওপরও নজরদারি করছে।সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহারের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়।আওয়ামী লীগের ইশতেহারের প্রসঙ্গে বলা হয়, তারা গ্রামের নগরের সুবিধা সম্প্রসারণ, যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের কথা বলেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তাদের ইশতেহারে জনগণের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের কথা উল্লেখ করেছে। বিএনপি উন্নত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছে। এছাড়া প্রতিহিংসামূক্ত সহমর্মী নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। জাতীয় পার্টি দেশের সব ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা, সুষ্ঠ গণতন্ত্রের বিকাশ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি শোষন বৈষম্যহীন ইনসাফের সমাজ গড়ার কথা বলেছে। ফলে দেখা যায় আওয়ামী লীগ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপিসহ অন্য দল মূলত গণতন্ত্র ও সুশাসনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।সুজন মনে করে, রাজনৈতিক দলগুলো মুক্তিযুদ্ধের আদর্শর কথা বলেছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বলতে কোন দল কি বোঝায় তা স্পষ্ট না হলেও এ বিষয়টির স্বীকৃতি তাৎপর্যপূর্ণ। তরুণ ভোটারদের আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের ইশতেহারেই। উন্নয়ন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত যাতে না হয়, সে বিষয়টি দুটি দলই উল্লেখ করেছে। আওয়ামী লীগ বলছে তারা নির্বাচিত হলে উন্নয়ন কাজ আরো গতি পাবে। বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট বলছে চলমান উন্নয়নকাজগুলো চলমান থাকবে। আওয়ামী লীগ উন্নয়নের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। অন্য দলগুলো গণতন্ত্র ও সুশাসনের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। দরিদ্র মানুষের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে প্রতিটি ইশতেহারেই। তবে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে তাদের প্রথম একশ দিন, বছরওয়ারি উন্নয়ন কাজের পরিকল্পনা থাকলে আরো ভাল হতো। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের ইশতেহারেই প্রথম একশ দিন বা বছর ওয়ারি কোনো পরিকল্পনা নেই। এটা থাকলে উন্নয়ন কাজ করা অনেকটাই সহজ হয়ে যেত।