২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ সকাল ৭:১০
ব্রেকিং নিউজঃ

এই সব উপসর্গ দেখলেই সাবধান হোন, সারভাইক্যাল ক্যানসার নয় তো?

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ শনিবার, জানুয়ারি ৫, ২০১৯,
  • 353 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

জরায়ুমুখ ক্যানসার বা সারভাইক্যাল ক্যানসার কী?

নারীদের জন্য একটি ভয়াবহ ব্যাধি এবং জরায়ু মুখ ক্যানসার বিশ্বব্যাপী নারীদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। এ রোগ সাধারণত অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। কিন্তু ক্যানসারের লক্ষণ প্রকাশের অনেক আগেই নারী এ রোগের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হন। তবে সচেতনতার মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের নারীরা স্বাস্থ্য সচেতন নয় বলেই এ রোগের বিস্তার বেশি। উন্নত দেশের নারীরা সচেতন ও উন্নত জীবনযাপনের কারণে এই রোগ থেকে নিরাপদ। জরায়ু মুখ ক্যানসার শনাক্ত করার জন্য ‘পেপস স্মেয়ার টেস্ট’ রয়েছে, যা উন্নত দেশের নারীরা দ্বিধাহীন ভাবে গ্রহণ করতে পারেন, কিন্তু অনুন্নত দেশে গ্রহণ করতে অনেক পারিবারিক ও সামাজিক বাধা রয়েছে।

এই ক্যানসারের মূল কারণ কী?

হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) ভাইরাস জরায়ু মুখের ক্যানসারের একটি অন্যতম কারণ, তবে এটি একমাত্র কারণ নয়। অরক্ষিত যৌন সংগমেও এর সংক্রমণ ঘটে। সংক্রমণের এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জরায়ু মুখের স্বাভাবিক কোষ পরিবর্তিত হতে থাকে এবং একসময় তা ক্যানসারে রূপ নেয়। এইচপিভি-১৬, এইচপিভি-১৮, ভাইরাস সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত নারীদের জরায়ু এইচপি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এতে তেমন কোনও উপসর্গ থাকে না বা শারীরিক পরীক্ষায় কোনও চিহ্ন বা ক্ষত পাওয়া যায় না। এর জন্য কোনো চিকিৎসারও প্রয়োজন নেই। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বলে ১৮ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে জরায়ু মুখ প্রায় সব এইচপিভি ভাইরাস থেকে মুক্ত হয়ে যায়। এই ভাইরাস সংক্রমণ দীর্ঘ দিন স্থায়ী হলে, জরায়ু মুখ কোষে পরিবর্তনের সূত্রপাত হয় এবং ধীরে ধীরে তা ক্যানসারের রূপ নেয়।

আরও পড়ুন: হালকা না গাঢ়, ডিমের কোন রঙের কুসুমে পুষ্টিগুণ বেশি?

কোন বয়সের মহিলাদের মধ্যে সাধারণত সংক্রমণ হয়?

২০ বছরের কম বয়সীদের এ রোগ সাধারণত হয় না। আক্রান্তেরা সাধারণত ৩৮ থেকে ৪২ বছর বয়সী হয়ে থাকেন। ৬০ বছরের পরও এ রোগ হতে পারে, তবে সংখ্যা তুলনামূলক কম। তবে ক্যানসার মানেই মৃত্যু এমন ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। আর বিশেষ করে মহিলারা এই রোগকে গোপন করার ফলে অনেক সময় বিপদ বাড়ে। উপযুক্ত চিকিৎসায় জরায়ু মুখ ক্যানসারের পুরোপুরি আরোগ্য সম্ভব। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এই রোগ খুব সহজেই এড়ানো যায়।

লক্ষণ ও সম্ভাবনাগুলি কী কী?

জরায়ুর বিভিন্ন অংশের মধ্যে এই অংশে ক্যানসারের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। অতিরিক্ত সাদাস্রাব, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, অতিরিক্ত অথবা অনিয়মিত রক্তস্রাব,  মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় রক্তপাত, কোমর ও তলপেট বা উরুতে ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গগুলো জরায়ু মুখ ক্যানসার এর লক্ষণ। অল্পবয়সেই যারা যৌনাচারে অভ্যস্ত হয়ে থাকে তাদের এই ক্যানসার হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। একাধিক পুরুষ সঙ্গী থাকা, বা পুরুষ সঙ্গীটির একাধিক নারী সঙ্গী থাকা কিংবা ঘন ঘন বাচ্চা নেওয়া ইত্যাদি কারণেও জরায়ু মুখ ক্যানসার হতে পারে। বাল্যবিবাহ হওয়া মেয়েদের এই রোগ হবার সম্ভাবনা বেশি।

১০ বছর বয়সের পর থেকেই জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধক টিকা নেওয়া যায়।

প্রাথমিক ভাবে করণীয় কী?

পেপস স্মেয়ার টেস্ট এই ধরনের ক্যানসার শনাক্তকরণের একটি সহজ পরীক্ষা। জরায়ুমুখ থেকে রস নিয়ে পরীক্ষা করে ক্যানসার, ক্যানসার হওয়ার আগের অবস্থা ও জরায়ুমুখের অন্য রোগ —যেমন প্রদাহ (ইনফ্লামেশন) শনাক্ত করা যায়। এটি একটি ব্যথামুক্ত ও সাশ্রয়ী পরীক্ষা পদ্ধতি। সাধারণত বিবাহিত নারীদের ২১ বছরের পর থেকে এ পরীক্ষা শুরু করা যেতে পারে এবং প্রতি বছরে এক বার পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। ৩০ থেকে ৬৪ বছর বয়স পর্যন্ত, যাদের ফলাফল তিন বার ‘স্বাভাবিক’ এসেছে, তাঁদের প্রতি তিন বছর পর পর এই পরীক্ষা করা উচিত। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে এ রুটিনের পরিবর্তন হতে পারে।

আরও পড়ুন: এমন অন্তর্বাসই পরেন তো? নইলে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে বন্ধ্যাত্ব আসতে দেরি নেই

এই রোগ থেকে মুক্তির জন্য কোনও টিকা আছে কি?

সাধারণত ১০ বছর বয়সের পর থেকেই জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধক টিকা নেওয়া যায়। ১৫ বছরের নীচে হলে ২টে ডোজ নিতে হয়। প্রথমটি নেওয়ার ৬ মাস পর পরেরটি। আর ১৫ বছরের বেশি বয়সের জন্য ৩টে ডোজ প্রথমটি নেওয়ার পর ১ থেকে ২ মাসের পর দ্বিতীয়টি এবং ৬ মাস পরে তৃতীয়টি। নিয়মিত পরীক্ষা করালে এর হার কমিয়ে আনা যায়। গর্ভাবস্থায় টিকার অনুমোদন নেই।

ওষুধ ছাড়া কীভাবে এই ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধ করা যায়?

ঔষধি প্রতিরোধকের চেয়ে আচরণগত প্রতিরোধকের দিকে বেশি গুরুত্ব আরোপ করে থাকি। যেমন বাল্যবিবাহ রোধ, অধিক সন্তান প্রসব এবং ঘন ঘন সন্তান প্রসব, ধুমপান করা (এমনকি পরোক্ষ ধূমপানের স্বীকার হওয়া) আর সুষম খাবার গ্রহণ, দৈনিক ভিটামিন (A, C, E, ফলিক অ্যাসিড) সমৃদ্ধ ফল, শাকসব্জি, তরকারি খাওয়া, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যসম্মত, সুশৃঙ্খল জীবন যাপন ও সামাজিক অনুশাসন মান্য করা এই রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এর পাশাপাশি নারীর নিয়মিত পেপস স্মেয়ার টেস্টে অংশ নেওয়া উচিত, তাতে রোগ আগেভাগে শনাক্ত করা সম্ভব হয়।

আরও পড়ুন: নাক ডাকার সমস্যায় জেরবার? এই দুই পানীয়তেই রয়েছে সমাধান

গোপনীয়তা এই মারণরোগকে বাড়িয়ে তোলে অনেকটাই।

এই ক্যানসারের প্রতিকার কী?

রোগের চিকিৎসার পরিবর্তে প্রতিরোধ অর্থাৎ রোগটা হতে না দেওয়া হল বুদ্ধিমানের কাজ। যদিও সকল রোগের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ সম্ভব হয় না, তবে জরায়ু-মুখের ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব। কারণ ডাক্তার অথবা স্বাস্থ্যকর্মী সহজেই জরায়ু-মুখ দেখতে এবং পরীক্ষা করতে পারেন। ক্যানসারের হওয়ার আগের অবস্থা ধরা পড়লে সামান্য চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে জরায়ু বাদ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না এবং চিকিৎসার পরও সন্তান ধারণ সম্ভব। সেই জন্য ‘পেপস স্মেয়ার টেস্টে’র মাধ্যমে আগাম শনাক্তকরণই সব থেকে ভাল উপায়।

কম বয়সে বিয়ের এই ক্যানসারে কতটা ভূমিকা থাকে?

অনেকটা ভূমিকা থাকে। কম বয়সে বিয়ে মানেই কম বয়সে সন্তানের মা হওয়ার সম্ভাবনা, আর নাবালক নাবালিকাদের মধ্যে যৌন সচেতনার অনেকটা অভাব থাকে। ফলে কম বয়সে বিয়ে এই ক্যানসারকে ডেকে আনতে পারে। আমাদের মত উন্নয়শীল দেশে এই কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও বেশি থাকে। তাছাড়া কম বয়সে বিয়ের ফলে শারিরিক দুবর্লতা থাকে আর তা থাকলে এই ক্যানসার খুব সহজে সংক্রমন হতে পারে। ফলে কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটিতে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।

অপরিচ্ছন্নতা এই ক্যানসারের জন্য কতটা দায়ী?

অপরিচ্ছন্নতা এই ক্যানসারের জন্য অনেকটাই দায়ী। বলা যেতে পারে প্রায় বন্ধুর মত করে ডেকে আনে এই ক্যানসারকে। গ্রামাঞ্চলে অনেক এটাকে বংশগত বলে অনেকে মনে করলেও এই ক্যানসারের সঙ্গে বংশগত কোনও সম্পর্ক নেই। স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব এবং জননাঙ্গের অপরিচ্ছন্ন অবস্থার ফলেই আমাদের দেশে এই রোগের বাড়বাড়ন্ত লক্ষ করা যায়।     

আরও পড়ুন: বাড়তি ওজন, মেদে বাড়ে স্তন, লিভার ক্যানসারের আশঙ্কা, জানাল গবেষণা

অসুখ ধরা পড়লে দ্রুত  চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

গোপনীয়তা, লজ্জার কারণে কি এই ক্যানসার অনেকে পুষে রাখেন?

আমাদের এলাকায় এটি একটি বড় কারণ। সামাজিক ব্যবস্থা এমন হয়ে আছে যে অনেক সময় মেয়েরা মাকেও বলতে লজ্জা পায়। এ ক্ষেত্রে মায়েদেরও আরও অনেক বেশি সচেতন হওয়া দরকার। মেয়ে কিছু বলতে চাইছে কিন্তু পারছে না এমনটা বুঝতে পারলেই মেয়ের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করে বিষয়টি পরিষ্কার করা উচিত এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রায় ক্ষেত্রেই এই মেলবন্ধনের অভাব থাকে। ফলে সমস্যা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে আর কিছুই করার থাকে না।

রোগের শুরুতে উপসর্গগুলো অল্পমাত্রায় থাকে দেখে অনেকে এটাকে গুরুত্ব দিতে চান না। এ জন্য রোগীদের পক্ষে অনেক সময়ই প্রাথমিক পযার্য়ে আসা সম্ভব হয় না। আর দেরিতে আসলে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে তখন জীবন বাঁচাতে বড় ধরনের অপারেশন এবং রেডিওথেরাপির (Radiotherapy) প্রয়োজন হয় কিন্ত তাতেও পূর্ণ নিরাময় সম্ভব হয় না।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »