৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ রাত ৮:০২

একটি বোবা প্রজন্ম ও আমাদের দায়

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ১৭, ২০১৯,
  • 392 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

আজাদ হোসেন৷৷
জেলা পর্যায়ের স্কুল ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরন অনুষ্ঠানে উপস্হিত থেকে ছেলে মেয়েদের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে পেরে বেশ ভালই লাগছিল। মাঝে মাঝে আমার স্কুল জীবনের দিন গুলোর কথা মনে পড়ছিল। এইতো সেদিন আমিও সম্মানিত বিশিষ্ট জন ও শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের হাত থেকে প্রতি বছর গ্রহণ করতাম নূন্যতম পাঁচটি পুরস্কার।

আমাদের পুরস্কার গ্রহণ আর এ প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের পুরস্কার গ্রহণের মাঝে বেশ অমিল দেখতে পেলাম। পোশাকে বেশ কেতাদুরস্ত হলেও শিষ্টাচারে বেশ দীনতা খয়াল করলাম। সব ছেলে মেয়েকে মনে হলো তারা প্রানহীন পাথুরে মূর্তির মত। সালাম, নমস্কার, আদাপ, Good morning ইত্যাদি সম্ভাষনের বালাই নেই, এমনকি তাদের সাথে কথা বলতে চাইলে ও যেন তাদের অনিহা। কী এক ঘোরে যেন তারা মোহাবিষ্ট। তাদের এই অবস্হা দেখে উপস্হাপকে থামিয়ে সালামের তাৎপর্য বুঝিয়ে বললাম।সালাম বিনিময় বা সম্ভাষন দুজনের মধ্যকার দূরত্ব ঘুচিয়ে দেয়, ব্যক্তিকে আত্মপ্রত্তয়ী করে তোলে, জড়তা দূর করে এবং এটি একটি পরিবেশকে প্রানবন্ত করে তোলে। কথাগুলো বলতেই সবাই পরবর্তীতে সালাম দিতে শুরু করল।

বাড়ি গিয়ে যখন মায়ের হাতে পুরস্কার গুলো তুলে দিতাম তখন মায়ের আনন্দের সীমা থাকতনা। তাদের মাঝে আমার আচরি চেতনার বীজ ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে বুনে দিতে চেয়েছি যে তারা ও যেন তাদের পুরস্কার তাদেরই মায়ের হাতে তুলে দেয় যেটি তাদের মাতা পিতার প্রতি অনুগত ওশ্রদ্ধাশীল করে তুলবে।

জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহোদয় যখন বক্তব্য প্রদান করছিলেন তখন শিক্ষকগনসহ ছাত্র ছাত্রী সবাই কথা বলছিলেন।ভাবলাম হয়ত আজ সবাই আমরা বোবা হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছি কারন বোবা হওয়ার একটি অন্যতম কারন কানে না শুনা। সবাইকে মনোযোগী শ্রোতা হওয়ার আহবান জানাই। কারন যে শুনছে বিস্তর, সে জেনেছে বিস্তর শিখেছে বিস্তর।আজকের মনোযোগী শ্রোতা আগামীর সুশিক্ষক, সুবক্তা, যোগ্য নেতা, দক্ষ কর্মকর্তা। এর পর আমার কথার সময় এতটুকু শব্দ কেউ করেনি। কী বলেছি বা তাতে শেখার কিছু ছিল কীনা জানিনা তবে ছেলে মেয়েরা মন্ত্র মুগ্ধের মত গিলেছিল সব কথা।

শাসন এবং সোহাগ দুটোই আজ যেন আমরা ভুলতে বসেছি। তাই ওরা আজ আমাদের কথা শুনেনা। অথবা শাসন আর সোহাগ ভুলে আমরা না মানুষের দলে ভীড়ে আদর্শ, নৈতিকতা, ধর্মীয় শিক্খা, সামাজিক বোধের মত বিষয়গুলো আমাদের তাড়িত করে না। ফলে ভবিষ্যত প্রজন্মকে এগুলো শিক্ষা দেয়ার মত রুচি আর অবশিষ্ট থাকে না। অভিভাবকগন আজ তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠান কেবল শিক্ষিত করতে, মানুষের মত মানুষ করতে নয়। আগে বিদ্যাপীঠগুলোতেখুব কাছাকাছি এই বিষয় দু’টিকে একই সাথে শিক্ষকগণ নিজেকে উজার করে ঢেলে দিতেন শিক্ষার্থীদের মাঝে।শিক্ষার সাথে শাসন আর সোহাগের সুসম্পর্ক রয়েছে। কোন একটিকে বাদ সুশিক্ষা সম্ভব নয়।শিক্ষকগগ আর আগের মত শাসন বা সোহাগ করতে পারেন না, পাছে কোন অশুভ শক্তি তাদের গলা টিপে ধরেন অথবা কালিমা লিপ্ত করেন তাদের অহংকারের জায়গা চরিত্রের উপর।এই সাত সতেরো ভেবে আমরা আজ নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি এমন ছোট খোলসের মধ্যে যে আমার ছাত্র / ছাত্রী , পাশের বাড়ির ছেলেটি এমনকি আমার সন্তানকেও বঞ্চিত করছি নিজস্ব সংস্কৃতি, ধর্মীয় ও সামাজিকমূল্যবোধ সমৃদ্ধ সুশিক্ষা থেকে।ফলস্রুতিতে আমরা পাচ্ছি একটি অচেতন, অর্ধচেতন, বোবা প্রজন্ম। অাধুনিকতার মেকি মায়া জাল আজ আমাদের চোখে মুখে। কাল কাক ময়ুর পুচ্ছ যতই লাগাক না কেন সৌন্দর্যের হানি বৈ শ্রী বৃদ্ধি বা গুন বৃদ্ধি হবে না কোন কালে।
লেখকঃঅতিঃপুলিশ সুপার,পিরোজপুর,বরিশাল রেঞ্জ।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »