১লা অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ সন্ধ্যা ৬:০১
ব্রেকিং নিউজঃ

স্বামী বিবেকানন্দ: যার ভাবনা আলোর পথ দেখায়

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ শনিবার, জানুয়ারি ১৯, ২০১৯,
  • 418 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

১২ জানুয়ারি ছিল স্বামী বিবেকানন্দের ১৫৬তম জন্মদিন। ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১২ জানুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন কলকাতার শিমুলিয়াতে। তার প্রকৃত বা বাল্য নাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত। বাবার নাম শ্রী বিশ্বনাথ দত্ত আর মায়ের নাম শ্রীমতি ভূবনেশ্বরী দেবী। বিবেকানন্দ স্বধর্ম শেখেন মায়ের কাছ থেকে। আর বাবা তাকে পরিচয় করিয়ে দেন উদার সংস্কৃতির সঙ্গে। তার তত্ত্বগুরু ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। স্বামী বিবেকানন্দকে বলা হয় আধুনিক ভারতের পথপ্রদর্শক। চিন্তায়, ব্রতে যিনি ছিলেন অন্যরকম এক মানুষ। সমস্ত ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন এক উচ্চকণ্ঠ।

স্বামী বিবেকানন্দ বাঙালি জীবনের এক আদর্শ মানব হিসেবে পরিচিত। তিনি সমস্ত নেতিবাচক ভাবনাকে দূরে ঠেলে আলোকিত জীবনবোধকে তুলে ধরেছেন। যুক্তিবোধ আর আধাত্ম্য -তার জীবনের মূল উপজীব্য। তিনি একাধারে দার্শনিক, কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, লেখক এবং অবশ্যই এক অসাধারণ বক্তা। ১১ সেপ্টেম্বর ১৮৮৩ সনে শিকাগোতে অনুষ্ঠিত ‘পার্লামেন্ট অব দ্য ওয়ার্লড রিলিজিয়িন্স’-এ দেয়া তার সেই বক্তৃতায় তিনি এমন কিছু বিষয়ের উপস্থাপনা করেছিলেন যা আজও প্রাসঙ্গিক। আজও আমাদের ভাবনায় আলোড়ন তোলে। ঐ বক্তৃতায় তিনি সকল ধরনের ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতা পরিহারের আহবান জানিয়েছিলেন। সেদিন তিনি সকল ধর্মকেই সত্য বলে ঘোষণা করেন এবং তাই সবার প্রতি সবাইকে সহিষ্ণু হতে বলেন। তিনি ‘গীতা’ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, Whosoever comes to Me, through whatsoever form, I reach him; all men are struggling through paths which in the end lead to Me. এর পরপরই তিনি ধর্মের নামে বিভাজন, ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার কারণে এই সুন্দর পৃথিবী কীভাবে রক্তাক্ত ও এর ফলে কত সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং মানব সমাজ কতোটা পিছিয়ে গেছে সেসব কথা বলেন।

তিনি উচ্চারণ করেন ‘‘Had it not been for these horrible demons, human society would be far more advanced than it is now. But their time is come; and I fervently hope that the bell that tolled this morning in honour of this convention may be the death-knell of all fanaticism, of all persecutions with the sword or with the pen, and of all uncharitable feelings between persons wending their way to the same goal” তার এই আবেদনময়ী বক্তৃতার পর পুরো সম্মেলন কেন্দ্র করতালি মুখর হয়ে ওঠে এবং অংশগ্রহণকারীরা দাঁড়িয়ে তাঁকে সম্মান করেন। আজও সারা বিশ্বেই তার সেই কালজয়ী ভাষণের বিশ্লেষণ হয়। গবেষণা হয়। কেননা এই ভাষণের মূল সুর ছিল বৃহৎ মানব সমাজের বন্ধনের পক্ষে। বিশ্ব শান্তির পক্ষে। তাই ধর্মীয় উম্মাদনা, জাতিভেদ ও শরনার্থী সংকটাপন্ন এই অশান্ত ও বিক্ষুব্ধ বিশ্বে তিনি এখনও প্রাসঙ্গিক।

শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের শিষ্য নরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৮৮৬ সালে সন্ন্যাস জীবন গ্রহণ করে হয়ে উঠেন স্বামী বিবেকানন্দ। এরপর ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে বরাহনগর মঠ থেকে কাশী, অযোধ্যা, আগ্রা, বৃন্দাবন ও হরিদ্বার ভ্রমণ করেন। ১৮৯৩ সালে তিনি প্রথমবারের মতো আমেরিকাতে গমন করেন।

স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন সমস্ত রকম কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। জীবনকে তিনি দেখেছেন অন্তরের ভেতর থেকে। আর তাই মানুষের ভেতরের বোধ ও শক্তিকেই তিনি জাগ্রত করতে চেয়েছেন। এ কারণে তিনি জীবনবোধ এবং পরোপকারকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। জীবন ও জগতের পরিবর্তন কীভাবে করা যায় এ নিয়ে তিনি সুস্পষ্ট বলেছেন। একইভাবে কীভাবে সাফল্য ও সুখ পাওয়া যাবে তারও পথরেখা দিয়েছেন। তবে সবক্ষেত্রেই তিনি ব্যক্তিকেই মুখ্য হিসেবে দেখেছেন। কুসংস্কার, বিবাদ, বিনাশকে তিনি সবসময় পরিত্যাগ করতে বলেছেন। সমন্বয় ও শান্তিকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

তার কিছু আমীয় বাণী আমাদের জীবনে নিত্য ছায়া হয়ে আছে। আর এ কারণেই তিনি অনুভূত হন আমাদের হ্নদয়ে, চলার পথে। তার অনবদ্য উচ্চারণ- ‘শক্তি ও সাহসিকতাই ধর্ম। দুর্বলতা ও কাপুরুষতাই পাপ। অপরকে ভালোবাসাই ধর্ম, অপরকে ঘৃণা করাই পাপ। ফলে সুস্থ জীবনে বাঁচতে এই রাস্তাই একান্ত কাম্য।’ ধর্ম ও কুসংস্কার নিয়ে স্বামীজির একটি অমর বাণী হল, ‘দর্শনবর্জিত ধর্ম কুসংস্কারে গিয়ে দাঁড়ায়, আবার ধর্মবর্জিত দর্শন শুধু নাস্তিকতায় পরিণত হয়। আমাদের নিম্নশ্রেণির জন্য কর্তব্য এই, কেবল তাহাদিগকে শিক্ষা দেওয়া এবং তাহাদের বিনষ্টপ্রায় ব্যক্তিত্ববোধ জাগাইয়া তোলা।’ আবার জীবনধারা সম্পর্কে বলেন: ‘অসংযত ও উচ্ছৃঙ্খল মন আামাদের নিয়ত নিম্ন থেকে নিম্নতর স্তরে নিয়ে যাবে এবং চরমে আমাদের বিধ্বস্ত করবে, ধ্বংস করবে। আর সংযত ও সুনিয়ন্ত্রিত মন আমাদের রক্ষা করবে, মুক্তিদান করবে।’ হতাশা গ্রাস করলে কী করা উচিত? তিনি বলছেন, ‘নিজেদের বিপদ থেকে টেনে তোলো!

তোমার উদ্ধার-সাধন তোমাকেই করতে হবে।…ভীত হয়ো না। বারবার বিফল হয়েছো বলো নিরাশ হয়ো না। কাল সীমাহীন, অগ্রসর হতে থাকো, বারবার তোমার শক্তি প্রকাশ করতে থাকো, আলোক আসবেই।’ কাজ ও জীবনবোধ সম্পর্কে স্বামীজি বলেছেন, ‘তোমরা কাজ করে চল। দেশবাসীর জন্য কিছু কর-তাহলে তারাও তোমাদের সাহায্য করবে, সমগ্র জাতি তোমার পিছনে থাকবে। সাহসী হও, সাহসী হও! মানুষ একবারই মরে। আমার শিষ্যেরা যেন কখনো কোনমতে কাপুরুষ না হয়।’ জগতকে কীভাবে পরিবর্তন করা যাবে ? স্বামীজি বলছেন, ‘কেবল শারীরিক সাহায্য দ্বারা জগতের দুঃখ দূর করা যায় না। যতদিন না মানুষের প্রকৃতি পরিবর্তিত হইতেছে, ততদিন এই শারীরিক অভাবগুলি সর্বদাই আসিবে এবং দুঃখ অনুভূত হইবেই হইবে। যতই শারীরিক সাহায্য কর না কেন, কোনমতেই দুঃখ একেবারে দূর হইবে না। জগতের এই দুঃখ-সমস্যার একমাত্র সমাধান মানবজাতিকে শুদ্ধ ও পবিত্র করা। আমরা জগতে যাহা কিছু দুঃখকষ্ট ও অশুভ দেখিতে পাই, সবই অজ্ঞান বা অবিদ্যা হইতে প্রসূত। মানুষকে জ্ঞানালোক দাও, সকল মানুষ পবিত্র আধ্যাত্মিক-বলসম্পন্ন ও শিক্ষিত হউক, কেবল তখনই জগৎ হইতে দুঃখ নিবৃত্ত হইবে, তাহার পূর্বে নয়। ধর্মসমন্বয়ের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য এখনও ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ। 

শিকাগোর বক্তৃতায় বলেছেন, ‘খ্রিস্টানকে হিন্দু বা বৌদ্ধ হতে হবে না, কিন্তু প্রতিটি ধর্মই অন্যান্য ধর্মের সারবাঘ গ্রহণ করে পুষ্টি লাভ করবে এবং স্বীয় বিশেষত্ব বজায় রেখে নিজ প্রকৃতি অনুসারে বর্ধিত হবে।’ তার লেখা ‘সখার প্রতি’ কবিতার অন্তিম দুইটি চরণ আমাদের হ্নদয়ে সবসময় উচ্চারিত হয়- “বহুরূপে সম্মুখে তোমার, ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর? জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।”

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »