৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ সন্ধ্যা ৬:৪২

জমে উঠছে বাণিজ্য মেলা

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ সোমবার, জানুয়ারি ২১, ২০১৯,
  • 333 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

এক এক করে ১৩তম দিনে পা দিয়েছে ২৪তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা-দর্শনার্থী খরা কাটিয়ে জমজমাট হয়ে উঠতে শুরু করেছে মেলা প্রাঙ্গণ। রাজধানীসহ আশপাশের বাসিন্দারা ভিড় করছেন মেলা প্রাঙ্গণে। দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে উঠছে অংশগ্রহণকারী স্টলগুলো। তবে অংশগ্রহণ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি গত বছরের তুলনায় এবারের মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর সংখ্যা কিছুটা কম।

সরেজমিন মেলার মাঠ পরিদর্শন এবং মেলার গেটে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তা ও মেলা প্রাঙ্গণে অবস্থিত বিভিন্ন স্টলের বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের বাণিজ্য মেলায় এখনও পর্যন্ত সব থেকে বেশি ক্রেতা-দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে গত শুক্রবার ও শনিবার। এই দু’দিনের প্রতিদিন দুই লাখের ওপরে দর্শনার্থীর পা পড়েছে মেলার মাঠে।

commerce fair

ওই দুইদিন ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়ে বিক্রি বেড়ে যায় বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন ও স্টলে। ফলে প্যাভিলিয়ন ও স্টলের কর্মকর্তাদের কর্মচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। কোনো কোনো স্টলের কর্মকর্তাদের এক মিনিট বিশ্রাম নেওয়ারও সময় ছিল না।

শুক্রবার ও শনিবারের ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সেই ঢল সোমবার দেখা যায়নি, তবে এদিন বিভিন্ন স্টলে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অথচ গত শুক্রবারের আগ পর্যন্ত বা মেলার প্রথম ৯ দিন অনেক স্টলের বিক্রয়কর্মীদের অলস সময় পার করতে দেখা গেছে।

মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে সব থেকে বেশি ভিড় দেখা গেছে মহিলা সামগ্রী ও শিশু খেলনার দোকানগুলোতে। ইলেকট্রনিক্স পণ্য, রান্নার সামগ্রী ও পোশাকের দোকানগুলোতেও চোখে পড়ার মতো ক্রেতা দর্শনার্থী দেখা মিলছে। তবে বিদেশি প্যাভিলিয়নগুলোর তুলনায় দেশি স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলো বেশ জমজমাট দেখা যাচ্ছে।

commerce-fair

সোমবার মেলায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। খুব একটা ছুটিছাটা পাই না। বাচ্চারা প্রথম থেকেই মেলায় আসার আবদার করছে। শুক্রবার ও শনিবার অনেক ভিড় হয় তাই বাচ্চাদের নিয়ে আসিনি। অফিসের ছুটি ম্যানেজ করে আজ মেলায় চলে এসেছি। বাসার জন্য কিছু সামগ্রী কিনবো। পাশাপাশি ছেলের জন্য খেলনা ও একটি ড্রেস কেনার ইচ্ছা আছে।

বিকেলে মেলা প্রাঙ্গণে স্কুলের পোশাক পরে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় কয়েজন শিক্ষার্থীকে। এদের একজন মিতা নূর বলেন, স্কুল ছুটির পর বান্ধবীরা মিলে মেলায় ঘুরতে এসেছি। এখনও কিছু কেনা হয়নি। মেলায় ঘুরে ঘুরে কয়েকটি স্টল দেখে তারপর কিছু জুয়েলারি সামগ্রী কিনবো। বান্ধবীরা সবাই একই জিনিস কিনবো বলে ঠিক করেছি। কেনাকাটা শেষ করে সন্ধ্যার আগেই বাসায় চলে যাব।

এদিকে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অংশগ্রহণকারী প্যাভিলিয়ন ও স্টলগুলোর বিক্রি। নারী সামগ্রী ও শিশু খেলার প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় সময় ভিড় লেগে থাকছে। একই দৃশ্য দেখা গেছে খাদ্য পণ্য ও গৃহস্থলী পণ্যের স্টলে। তবে মেয়েদের থ্রি-পিস’র স্টলগুলোতে এখন ক্রেতা-দর্শনার্থীদের তেমন ভিড় দেখা যয়নি।

commerce fair

জুয়েলারি সামগ্রীর স্টল জেপি গ্যালারির বিক্রয়কর্মী মো. রিপন বলেন, মেলার প্রথম এক সপ্তাহ তেমন বিক্রি হয়নি। ক্রেতা-দর্শনার্থীও তেমন ছিল না। তবে গত শুক্রবার থেকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। শুক্রবার ও শনিবার বেশ ভালো বিক্রি হয়েছে। আজ শুক্র ও শনিবারের মতো ক্রেতা-দর্শনার্থী নেই। তারপরও ভালো বিক্রি হয়েছে। আশা করছি সামনে আরও ভালা বিক্রি হবে।

ব্লেজার বিক্রয়ের একটি স্টলের কর্মী মো. মামুন বলেন, মেলার প্রথম সপ্তাহে বিক্রি একমদ হয়নি বললেই চলে। বিক্রি না হওয়ার কারণে প্রথম থেকেই আমরা বিভিন্ন অফার দিচ্ছি। তারপরও ক্রেতাদের দৃষ্টি সেইভাবে আকৃষ্ট করা সম্ভব হচ্ছে না। গত বছরের তুলনায় এবার বিক্রি পরিস্থিত বেশ খারাপ। তবে আমরা আশা করছি মেলার শেষ ১০ দিন ভালো বিক্রি করতে পারবো।

বিক্রি পরিস্থিতি নিয়ে বেশ সন্তোষ প্রকাশ করেন জুয়েলারি বিক্রয় প্রতিষ্ঠান ঝুমকার বিক্রয়কর্মী ফাহিম। তিনি বলেন, মেলায় প্রথমদিকে ক্রেতা-দর্শনার্থী কম থাকলেও আমাদের স্টলে বিক্রি খারাপ ছিল না। তবে দিন যত যাচ্ছে বিক্রি ততো বাড়ছে। সব থেকে বেশি বিক্রি হয়েছে শুক্রবার ও শনিবার। মেলার শেষ সপ্তাহে বিক্রি অনেক বেড়ে যাবে বলে আমরা ধারণা করছি।

মেলার ৫১ নম্বর প্যাভিলিয়নে থ্রি-পিসের পসরা সাজিয়ে বসেছে একটি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের বিক্রিয়কর্মী মো. মাসুদ বলেন, আমাদের বিক্রির অবস্থা খুব একটা ভালো না। শুক্রবার ও শনিবার মেলার মাঠে দর্শনার্থীদের ভালো ভিড় ছিল। কিন্তু আমাদের বিক্রি খুব একটা হয়নি। এখন পর্যন্ত বিক্রির যে চিত্র, তা যদি না বদলায় মেলার খরচ উঠানো কঠিন হয়ে পড়বে।

commerce fair

মেলার দর্শনার্থীদের বিষয়ে গেট ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত মো. মোফাজ্জল হোসেন পিন্টু বলেন, আমরা কয়েক বছর ধরেই মেলার গেট ইজারা নিচ্ছি। এবার মেলার দর্শনার্থী তুলনামূলক অনেক কম। গত বছর প্রথম দুই সপ্তাহে যে দর্শনার্থী হয়েছিল এবার তার অর্ধেকের মতো হয়েছে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) আয়োজনে মাসব্যাপী এবারের বাণিজ্য মেলা শুরু হয়েছে গত ৯ জানুয়ারি। প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা সময় অনুযায়ী আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি এ মেলার পর্দা নামবে। মেলায় প্যাভিলিয়ন, মিনি-প্যাভিলিয়ন, রেস্তোরাঁ ও স্টলের সংখ্যা ৬০৫টি। এর মধ্যে প্যাভিলিয়ন ১১০টি, মিনি-প্যাভিলিয়ন ৮৩টি ও রেস্তোরাঁসহ স্টলের সংখ্যা ৪১২টি।

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণ দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকছে। মেলার মাঠে প্রবেশ করতে প্রাপ্ত বয়স্কদের ৩০ টাকা ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ২০ টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হচ্ছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »