৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ সন্ধ্যা ৭:১৩

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৫তম জন্মজয়ন্তী সাগরদাঁড়ির দত্তবাড়িতে মধূমেলা

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ সোমবার, জানুয়ারি ২১, ২০১৯,
  • 468 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৫তম জন্মজয়ন্তী

আগামী ২৫ জানুয়ারি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৫ তম
জন্মজয়ন্তী। এ উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও দক্ষীলাঞ্চালের মানুষের বিনোদনের অন্যতম স্থান সাগরদাঁড়িতে জমে উঠবে মধুমেলা। সপ্তাহব্যাপী এ মধুমেলা শুরু হবে ২২ জানুয়ারি থেকে, চলবে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। ১৯৭৩ সাল থেকে প্রতিবছর কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী এ মেলা বসছে। কবির জন্ম উৎসবকে মিলন মেলায় পরিণত করতে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে হাজার হাজার মধুপ্রেমী।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোরের কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ির বিখ্যাত দত্ত পরিবারে জন্ম নেন। তিনি ‘মেঘনাদ বধ’ মহাকাব্যের রচয়িতা ও চতুর্দশপদী অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক।

মধূমেলা
যশোরের কেশবপুর উপজেলা সদও থেকে ১৩ কিলিােমটিার দক্ষিণে সাগরদাঁড়ি গ্রামে জমিদার রাজনারায়ণ দত্ত ও মাতা জাহ্ণবী দেবীর সংসারে ১৮২৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন অমিত্রাক্ষর ছন্দের জনক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। নিজ গ্রামে মধু কবির শৈশব কাটে। উচ্চ শিক্ষা লাখের জন্য তিনি ১৮৩০ সালে সাগরদাঁড়ি ছেড়ে কোলকাতার খিদিরপুরে চলে যান মাইকেল মধুসূদন দত্ত। লেখাপড়া করাকালিন ফ্রান্সের সুদুর ভার্সাই নগরীতে বসে তিনি রচনা করেন চতুদশপদী কবিতা সনেট। লেখাপড়ার টানে তিনি বিদেশে থাকলেও তার নিজ গ্রাম জন্মভুমি সাগরদাঁড়ি আর পাশ দিয়ে বহমান কপোতাক্ষ নদকে। তার সাহিত্য কর্ম আর শোত্ববোধ চির জাগরুক রয়েছে মধু পরিমন্ডলে। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কলকাতার এক হাসপাতালে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রতিবছর ২৫ জানুয়ারী সংস্কৃত মন্ত্রণালয় সপ্তাহব্যাপী মধু মেলার আয়োজন করে থাকে। এবার এস এসসি পরীক্ষার কারণে এ মেলা এগিয়ে নিয়ে ২২ জানুয়ারী থেকে শুরু হচ্ছে ,চলবে ২৮ জানুয়ারী পর্যন্ত বলে জানান মেলা উদযাপন কমিটি। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্র“তি অনুযায়ি ২০০১ সালে ১১ কোটি টাকা ব্যায়ে বাস্তবায়ন করা হয় মধুপল¬ী নির্মাণ কাজ। সাগরদাঁড়ি মধুসূদন মিউজিয়াম, পিনিক কর্ণার, মধু মঞ্চ, সুদৃশ্য গেট নির্মিত হয়। এ ছাড়ারয়েছে পর্যটন কেšদ্র । প্রতিবছর শীতের শুরু থেকে বিভিন্ন পরিব্রাজক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণ থেকে শিক্ষা ভ্রমন ও পিকনিক পার্টিও আগমন ঘটে থাকে সাগরদাঁড়িতে। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ মেলায় রুপ নেয় মধু মেলা।

কবির শৈশবের স্মৃতি বিজোড়িত কেশবপুরের সাগরদাঁড়ির ঐতিহ্যবাহী দত্তবাড়িতে বসে এ মধুমেলা। আশপাশের বহু গ্রামের মানুষ আর দেশি-বিদেশি অতিথি মেলাকে আরও উৎসবমুখর করে তোলে। এ সময় আলোচনসভা, কবিতা পাঠ, সেমিনার, সাহিত্য পুরস্কার, যাত্রা, সার্কাস, পুতুল নাচ থেকে শুরু করে হরেক বিনোদনের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া মধুকবির জীবন ও সৃষ্টি নিয়ে থাকে আলোচনা।
৭দিন ব্যাপি মেলা চললেও এর আমেজ থাকে মাস ব্যাপি। এলাকার মানুষ জামাইদের দাওয়াত করে নিয়ে আসেন। এছাড়াও বিভিন্ন অতিথির আগমন ঘটে মেলা উপলক্ষে। অতিথি সামলাতে তারা বিরক্ত হলেও উৎসব আনন্দে তাতে ভাটা পড়ে না।
এ অঞ্চলের মানুষ অনেকটা ঈদের মতো এ উৎসব পালন করে। ঘরে ঘরে তৈরি হয় পিঠা-পায়েস। একে অন্যের ঘরে যায়। কুশল বিনিময় করে।

সাগরদাড়ি!
সাগরদাঁড়ি! স্মৃতিময়, কেবলই মাইকেলের স্মৃতি বিজড়িত বলে নয়, নয়নাভিরাম প্রাকৃৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে চাইলেও আসতে হবে সাগরদাঁড়ি। যেখানে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বড় হয়েছেন, লিখেছেন কবিতা, দেখেছেন স্বপ্ন,,গেয়েছেন গান আর অমৃত সূধা করেছেন পাণ যে স্থান কবির হাতে কলম তুলে দেয়, মানুষের মনকে করে তোলে স্বপ্নালু, সে স্থানটিতে একটিবার না বেড়িয়ে এলে যে অসম্পূর্ণই থেকে যাবে জীবনের খানিকটা অংশ। ঐতিহাসিক নিদর্শন আর সঙ্গে অপূর্ব প্রাকৃৃতিক দৃশ্য, এই নিয়েই বিখ্যাত সাগরদাঁড়ি, সাগরদাঁড়ি যশোরে অবস্থিত। যেখানে রয়েছে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি। এখানে যাওয়ার পথে গাড়ি থেকে দুপাশের প্রাকৃৃতিক সৌন্দর্যগুলো এক কথায় অবর্ণনীয়।

যদি যেতে চান…
এবার কবির বাড়ি যাওয়ার পালা। যশোরের মনিহার বাসস্ট্যান্ড কিম্বা যশোর কেন্দ্রিয় বাস টার্মিনাল থেকে ধরতে হবে কেশবপুরের বাস। প্রায় দেড় ঘণ্টার পথ। এর মাঝে পড়বে মনিরামপুর বাজার, তারপর কেশবপুর বাজার। কেশবপুর নেমে সাগরদাঁড়ি যেতে দরকার হবে চান্দের গাড়ি কিম্বা হেলিকপ্টারের। না, চমকে ওঠার কিছু নেই, এই অঞ্চলে যাত্রীবাহী পরিবহন হিসেবে ব্যবহার্য মোটরসাইকেলকে হেলিকাপ্টার এবং ৪ চাকার বডবডিকে ডাকা হয় আলমসাধু বা চান্দের গাড়ি নামে। ভাড়া করতে পারেন রিকশাভ্যানও। তবে তাতে অনেক সময় লাগবে পৌঁছতে, দূরত্ব ১৫.৫০ কিলোমিটার। সাগরদাঁড়ির পথ কিছুটা আঁকাবাঁকা। পথের দুপাশের দৃশ্যাবলী চোখ জুড়ানো। কবির বাড়িতে যাওয়ার পথে চোখে পড়বে একটি পর্যটন কেন্দ্র। পথিমধ্যে বিশ্রাম নিতে চাইলে কিংবা তথ্যের প্রয়োজন পড়লে থামতে পারেন এখানে। চাইলে রাতটাও কাটিয়ে দিতে পারেন। তারপর সামনেই হাতছানি দিয়ে ডাকবে মাইকেল পল্লি। পৌছে যাবেন স্বপ্নের গন্তব্যে।
উল্লেখ্য, ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কবি মারা যান। তাকে কলকাতায় লোয়ার সার্কুলার রোডের খ্রিষ্টান সমাধিক্ষেত্রে সমাহিত করা হয়।

মধু মেলা-২০১৯
মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য প্রধান অতিথি হিসেবে মেলা উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংসদ সদস্য ইসমাত আরা সাদেক, শেখ আফিল উদ্দিন, মেজর জেনারেল (অব.) ডা. নাসির উদ্দিন, কাজী নাবিল আহমেদ, রণজিত কুমার রায়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ, যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আওয়াল, পুলিশ সুপার মঈনুল হক, আওয়ামী লীগ যশোর জেলা শাখার সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদার, কেশবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ এম আমির হোসেন, কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম, দৈনিক ইত্তেফাকের সিনিয়র রিপোর্টার শ্যামল সরকার।
আলোচনায় অংশ নেবেন যশোর ইনসটিটিউটের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক শেখ রবিউল আলম, যশোর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ডি এম শাহিদুজ্জামান, যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু, আওয়ামী লীগ কেশবপুর শাখার সভাপতি এস এম রুহুল আমীন, যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম পিটু প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য দেবেন কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানুর রহমান।
এবারের মেলায় কুটিরশিল্প, গ্রামীণ পসরার পাশাপাশি সার্কাসের আয়োজন থাকবে। এছাড়াও প্রতিদিন সাগরদাঁড়ীর মধুমঞ্চে আলোচনার পাশাপাশি নাটক, কবিতা আবৃতিসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও থাকছে।
কেশবুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহিন জানান, মেলার মাঠ নিরাপত্তা চাদরে মোড়া হবে।
মেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানূর রহমান সাংবাদিকদের জানান, মেলারয় মধু ভক্তদেও নিরাপত্তা বিধানে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সার্কাস, যাদু প্রদর্শনী, মৃত্যুক’প, নাগরদোলা, বিসিকের কুঠির শিল্প স্টল,সার্কাস পুতুল নাচেসহ প্রতিদিন উন্মুক্ত মঞ্চে থাকছে মহাকবির সাহিতদ্য সৃষ্টির উপর বিষশয় ভিত্তিক আলোচনা, সাং®কৃতিক অনুষ্ঠান নাটক। এবারের মধু মেলা অশি-লতামুক্ত থাকবে। একটি স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি ডিবি ও র‌্যাব সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »