২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ ভোর ৫:৪৩
ব্রেকিং নিউজঃ

ঝালকাঠি হাসপাতাল অপচিকিৎসকদের হাতে জিম্মি

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট টাইমঃ বুধবার, জানুয়ারি ২৩, ২০১৯,
  • 427 সংবাদটি পঠিক হয়েছে

রোগীদের সুচিকিৎসার বদলে ভোগান্তি-হয়রানির
ঝালকাঠি হাসপাতাল অপচিকিৎসকদের হাতে জিম্মি
ইচ্ছেমত কর্মস্থলে যাওয়াআসা-মাস শেষে বেতন খাওয়া!!

আজমীর হোসেন তালুকদার,

ঝালকাঠি: ঝালকাঠি আধুনিক সদর হাসপাতাল ভবনটি ক্রমেই বৃদ্ধি পেলেও সাধারন রোগীর চিকিৎসা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা চিহ্নিত কতিপয় অপচিকিৎসকদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরকারী চাকুরিরত এসব চিকিৎসক বিধিবিধান উপেক্ষা করে নিজের ইচ্ছেমত কর্মস্থলে যাওয়াআসা আর মাস শেষে এসে বেতনভাতা তুলে খাচ্ছেন।
জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে চিকিৎসার জন্য এখানে ছুটে আসা রোগীদের সুচিকিৎসার বদলে নিদারুন ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী হাসপাতালে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন লাগানো থাকলেও তা শুধুই লোক দেখানো। এসব অসাধু চিকিৎসকদের সুবিধার্থে তা কাজে লাগানো হচ্ছেনা।
সাধারন রোগীদের রোগীদের অপচিকিৎসার পাশাপাশি এ হাসপাতালে সরকারের বরাদ্ধকৃত অত্যাধুনিক আলট্রাসনোগ্রাম ও ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন থাকা সত্বেও প্রাইভেট ডায়গোনাস্টিক ব্যবসায়ীদের সাথে আতাঁত করে সেগুলো ইচ্ছাকৃত ভাবে নষ্ট করে রাখা হচ্ছে। এসব বিষয় জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্নধার তথা সিভিল সার্জন সম্পূর্ন অকিবহল থাকা সত্বেও কোন ব্যবস্থা না নিয়ে এক প্রকার মৌন সম্মতিমূলক ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঝালকাঠি জেলার ৪ উপজেলা ১০ লক্ষাধিক মানুষের মধ্যে রোগাক্রান্তদের চিকিৎসার একমাত্র আশ্রয়স্থল এ আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসার্থে আগত রোগী ও তাদের স্বজনরা এখানে এসে প্রতি পদেপদে হয়রানি শিকার হচ্ছে। সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান থাকলেও তা সাধারন রোগীদের কোন উপকারে আসছে না বলে অভিযোগ সকলের।
১শ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালে চিকিৎসকের ৩০টি পদ বর্তমানে কর্মরত আছে মাত্র ১২ জন। এরমধ্যে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. গোলাম ফরহাদ, গাইনি কনসালটেন্ট ও সার্জন ডা. মৃনাল কান্তি, ডেন্টাল সার্জন ডা. তোফাজ্জেল হোসেন ও ইউনানী ভেষজ চিকিৎসক মনিরুল ইসলাম কর্মস্থল হাসপাতালে ও ঝালকাঠিতে বসবাস করেন। এছাড়া অপর ৮ জন চিকিৎসকের কর্মস্থল ঝালকাঠিতে অবস্থান না করে থাকেন পার্শবর্তী জেলা বরিশালে।
হাসপাতালের প্রশাসনিক দায়িত্বরত কয়েকজন নামপ্রকাশ না করার শর্তে জানান, মন্ত্রনালয় সকল চিকিৎসককে কর্মস্থলে বসবাস বধ্যতামূলক বলে পরিপত্র থাকলেও এ চিকিৎসকরা তার কোন কেয়ার করছেনা। ফলে রোগাক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারন রোগীদের দুর্ভোগের যেনো কোন শেষ নেই। আর যেসব চিকিৎসকরা হাসপাতালে কর্মরত থাকার কারনে ঝালকাঠিতে থাকেন তারাও হাসপাতালের চেয়ে বিভিন্ন ক্লিনিক ও প্রাইভেট ডায়গোনাস্টিক সেন্টারেই বেশী মনযোগী।
দীর্গ দিন পদ শূন্যতার অজুহাতে ঝালকাঠি হাসপাতালে সকল অপারেশ বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি কানিজ ফাতিমা নামে এক অজ্ঞান চিকিৎসক যোগদান করলেও অবস্থারকোন উন্নতি হয়নি। তিনি ঝালকাঠিতে সার্বক্ষণিক না থেকে বরিশালে বসবাস করায় হাসপাতালে নিয়মিত অপারেশন হচ্ছেনা বলে ভুক্তভোগীর জানায়।
সরেজমিন গত দুতিন দিন সদর হাসপাতাল ঘুড়ে দেখা যায়, ১০৭ নম্বর কক্ষে আবাসিক চিকিৎসক, জরুরি বিভাগে ১জন চিকিৎসকসহ মোট ৩ জন কর্মরত রয়েছে। হাসপাতালে কর্মরত বাকি ৯ জন চিকিৎসকের মধ্যে অজ্ঞান চিকিৎসক কানিজ ফাতিমা সেদিন ছুটিতে আর কোন প্রকার ছুটি বা অন্যকোন দায়িত্ব ছাড়াই সেদিন বাকী ৮জন চিকিৎসক অনুপস্থিত।
এভাবে প্রায় দিনই সদর হাসপাতালের সকাল ৯টা থেকে ২টা পর্যন্ত কর্মসময়ে কিছু চিকিৎসক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যাচ্ছে, কিছু চিকিৎসক নির্ধারিত সময়ের ২/৩ঘন্টা পর এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিচ্ছে আর কিছু চিকিৎসক অনুপস্থিত থেকেই হাজিরা দিয়ে যাচ্ছে। অথচ চিকিৎসকদের বসবাসের জন্য ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল কম্পাউন্ডের মধ্যে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আধুনিক বাসভবনগুলো খালি পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে খোজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান হিসাবে থাকা সিভিল সার্জনরা এসব দুর্নীতিবাজ-অর্থলোভী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কঠিন বা কঠোর কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনা। তব অনেক সময় মিডিয়ায় জোড়ালো প্রচার-প্রচারনা হলে নিজ দায় এড়াতে দু/একটা শোকজ নোটিশ দিয়ে নিজের তৎপরতার জানান দিয়ে রাখছে। তাবে ‘যে লাউ সেই কদু’ এর মতো এতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না, বরং যে যার স্বেচ্ছাচারীতা বহাল রেখেই চলছে।
জানাগেছে, জেলা পর্যায়ে মন্ত্রী, এমপি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলাপরিষদ প্রশাসক, পৌরমেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও সরকারী দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সমন্বয়ে একটি জেলা স্বাস্থ্য কমিটি রয়েছে। সরকারের স্বাস্থ্যসেবা সাধারন মানুষের কাছে পৌছানো ও নজরদারীর দায়ত্বে থাকা কমিটির স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা কাগজ-কলমে উক্ত সিন্ডিকেটের দেয়া প্রতিবেদনের সাথে সুর মিলিয়ে কথা বলে যাচ্ছে। যে কারনে বাস্তব সত্যতা আড়াল করে এসব চিকিৎসকরা নির্দিধায় তাদের অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারীতা ও দূর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে বলে গুরুত্বর অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের আরএমও গোলাম ফরহাদ জানান, মেশিনটি অচল হওয়ার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আরও একটি অচল মেশিন ইতোপূর্বে সচল করতে দেয়ায় সেটিও আনতে ঢাকা লোক পাঠানো হচ্ছে।তবে চিকিৎসকদের যথাযত দায়িত্ব পালন বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেনি।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. শ্যামল কৃষ্ণ হালদার বলেন, আসলে বর্তমানে আমার নজরদারী থাকায় কমসংখ্যক চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকছে। আর সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী বায়োমেট্রিক মেশিনে হাজিরাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অনেক সময় নাইট ডিউটি থাকার কারণে হয়তো ২/১ জন ডে শিফটে অনুপস্থিত বা বিলম্ব করে থাকতে পারে। তবে ছুটি না নিয়ে কোন চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি আমার নজরে আসেনি।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ ...
© All rights Reserved © 2020
Developed By Engineerbd.net
Engineerbd-Jowfhowo
Translate »